চাঁদরাতে ফারুকীর সিনেমা, অভিনয়ে চঞ্চল-জেফার
২৯ মার্চ ২০২৪ ১৭:২৮
ঈদ বা যেকোনো বিশেষ দিবস আসলেই বিনোদন মাধ্যমগুলোতে মুক্তি দেয়া হয় সিনেমা, সিরিজ সহ নানান কনটেন্ট। দর্শকও উন্মুখ হয়ে থাকে বিশেষ এইসব দিনে কোথায়, কি আসছে টা দেখার জন্য। এবাদের ঈদ-উল-ফিতরে চরকিতে মুক্তি পেতে যাচ্ছে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত ‘লাস্ট ডিফেন্ডারস অব মনোগামী’ বা ‘মনোগামী’।
চরকি অরিজিনাল এই সিনেমায় চঞ্চল চৌধুরীর সাথে একটি চমক হচ্ছে বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী জেফার। ভিন্ন ধারার গান ও অন্যরকম ফ্যাশন স্টেটমেন্ট এর জন্য সব সময় সবার নজর কেড়েছেন তিনি। এই সিনেমার মাধ্যমে প্রথমবারের মত অভিনয়ে আসছেন জেফার। সেই সাথে মনোগামী-তে আছেন সামিনা হোসেন প্রেমা, শুদ্ধ, প্রত্যয়ী প্রথমা রাই সহ আরও অনেকে। এরই মধ্যে সিনেমার পোস্টার, টিজার, গান দর্শক বেশ পছন্দ করছে।
ভিন্নধর্মী শপথ গ্রহণের মাধ্যমে গত বছর চরকি ঘোষণা দেয় ‘মিনিস্ট্রি অব লাভ’ নামের একটি প্রজেক্ট। যেখানে ১২ জন জনপ্রিয় নির্মাতার ১২টি ভালোবাসার গল্প নিয়ে ১২টি চরকি অরিজিনাল ফিল্ম বানাবেন। এরই মধ্যে এই প্রজেক্টের ২ টি সিনেমা ‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’ ও ‘কাছের মানুষ দূরে থুইয়া’ মুক্তি পেয়েছে। সিনেমা দুটিই হয়েছে দর্শক নন্দিত ও প্রশংসিত।
মনোগামী-তে চমকপ্রদ সব ঘটনা:
১। জেফারকে কাস্ট করেছে ইলহাম-
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী দীর্ঘদিন ধরে মনোগামী-এর জন্য কাস্টিং খুঁজছিলেন। নতুন মুখের কাউকে প্রয়োজন। ইলহাম তখন জেফারের ‘ঝুমকা’ গানটি নিয়মিত শুনে। এই গান না শুনলে সে নাকি খাবার খায় না। ফারুকী একদিন খেয়াল করে দেখলেন ‘লামিয়া’ চরিত্রের যেমন কাস্টিং তিনি খুঁজছিলেন জেফার তার সঙ্গে মানিয়ে যায় একদম। তারপরেরটা দর্শকের সবটাই জানা।
২। জেফারের ১৪ বছরের হেয়ার স্টাইল পরিবর্তন-
জেফার যখন ‘মনোগামী’-তে অভিনয়ের প্রস্তাব পান তখন বেশ অবাকই হয়েছিলেন বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘ফারুকী ভাইয়ের সিনেমা ও চঞ্চল ভাইয়ের বিপরীতে অভিনয় করতে হবে সব মিলিয়ে আমি প্রথমে বিশ্বাস করতে পারিনি।’
গল্পে গল্পে তিনি আরও বলেন, ‘ফারুকী ভাই যখন আমাকে বলেন যে আমার চুলের স্টাইলটা পরিবর্তন করতে হবে তখন আমি আরও টেনশনে পরে যাই। ১৪ বছর ধরে আমার চুলের এই স্টাইল একই রকম। ফারুকী ভাই বলেন যে তাকে বিশ্বাস করতে। আমি শুধু উনার কথা মতো সব করেছি।’
৩। চঞ্চল পুত্র শুদ্ধ-এর ডেবিউ-
‘মনোগামী’-এর মধ্যে দিয়ে সিনেমায় ডেবিউ হতে যাচ্ছে চঞ্চল পুত্র শুদ্ধের। রিয়েল লাইফের বাবার সাথে রিলের সামনে বাবা হিসেবে পেয়ে শুদ্ধ বেশ খুশি। শুদ্ধ বলে, ‘আমি বাবার শ্যুটে অনেকবার গিয়েছি। এবার নিজে শ্যুটে গিয়ে খুব নার্ভাস লেগেছিল। শ্যুটের আগের দিন সারারাত ঘুমাতে পারিনি। ফারুকী আংকেলে এই সিনেমায় কাজ করাটা আমার জন্য অন্যরকম অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে। আর বাবার সাথে কাজ করেও খুব আনন্দ লাগছিল।’
৪। বাবা-ছেলে ও মা-মেয়ের জুটি-
মনোগামী-সিনেমায় চঞ্চল চৌধুরীর সাথে অভিনয় করেছে তারই পুত্র শুদ্ধ। আর শুদ্ধকে সিনেমাতেও চঞ্চলের পুত্র হিসেবেই হাজির করা হয়েছে। সেই সাথে সিনেমায় অন্যতম মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন সামিনা হোসেন প্রেমা। তার কন্যা রাই রিলেও তার কন্যা হিসেবেই উপস্থিত হবে।
৫। মেট্রোতে সিনেমার শুট
মেট্রোরেল নানান কারণে জনসাধারণের কেন্দ্রবিন্দুতে। মনোগামীর শ্যুটিং-এর একটা অংশ শ্যুট করা হয়েছে এই মেট্রোরেলেই। সেই অভিজ্ঞতা বেশ রোমাঞ্চকর ছিল বলেই টিমের সদস্যরা সবাই জানান।
মন্তব্য-
কোন ভাবনা থেকে সিনেমাটি নির্মাণ করছেন প্রশ্নে পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘আমার প্রিয় একটা কাজ হচ্ছে মানুষের মনের ভেতর ছিপ ফেলে দেখা কি কি ধরা পড়ে সেখানে। ছোট-বড়, তুচ্ছ-গুরুত্বপূর্ণ সবই আমাকে নাড়া দেয়। মনোগামীতে অনেক দিন পরে মেল-ফিমেল রিলেশনশিপের কিছু দিক নিয়ে এই রকম ছিপ ফেলার সুযোগ পেয়েছি।’
পরিচালক আরও বলেন, ’ব্যাচেলর ছবিতে ব্যাচেলর জীবনের কিছু দিক কোনো রকম রাখঢাক ছাড়া দেখাতে পেরেছিলাম। এখানে বিবাহিত এবং প্রবাহিত জীবনের কিছু দিক কোনো সুইট কোটিং ছাড়া দেখানোর সুযোগ পেয়েছি।’
সিনেমার প্রধান চরিত্রের অভিনেতাদের নিয়ে ফারুকী বলেন, ‘চঞ্চল চৌধুরীর সাথে আমার কাজের অভিজ্ঞতা তো বহু পুরনো। এখানেও একই রকম অপ্রতিরোধ্য তিনি। এই ধরণের চরিত্র কম করার ফলে একটা দারুণ ফ্রেশনেস উনি নিয়ে এসেছেন তার অভিনয়ে। জেফারকে আমরা মিউজিশিয়ান হিসাবে চিনি। এখানে তাকে অচেনাই লাগবে। কিন্তু এই চরিত্রে তাকে পাওয়ার ফলে আমার গল্পটা প্রাণবন্ত হয়েছে।’
চরকিতে চঞ্চল চৌধুরীকে দর্শক নানা চরিত্রে নানান লুকে দেখেছে। তবে মনোগামীতে দেখা মিলবে অন্য এক চঞ্চল চৌধুরীর। নিজের চরিত্র ও কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে চঞ্চল চৌধুরী বলেন, ‘ফারুকী ভাইয়ের সাথে আমার ২০০৫ থেকে কাজের শুরু, এখন ২০২৩। আমার ক্যরিয়ারের টার্নিংপয়েন্ট ছিল সেই কাজটি। আর এবার মনোগামী সিনেমার গল্পটাই একদম আলাদা। সিনেমায় কিছু মনস্তাত্ত্বিক দিক আছে জা দর্শককে ভাবাবে। আর এখানে আমার চরিত্রের লুক, গেট-আপ একদম ভিন্ন থাকবে এখানে।’
কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে জেফার বলেন, ‘একজন সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে আগেও পর্দায় হাজির হয়েছি। কিন্তু মনোগামী সিনেমা কাজের অভিজ্ঞতা একদম ভিন্ন। বিষয়টি আমার জন্য অনেক আনন্দের, একই সাথে চ্যালেঞ্জিং। মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সিনেমায় অভিনয় করতে পারা এবং সহ-অভিনেতা হিসেবে চঞ্চল চৌধুরীকে পাওয়া আমার জন্য কিছুটা চাপের ছিল। কিন্তু উনারা এতো উদার ছিলেন ও সহযোগিতা করেছেন কাজটা আমার জন্য ব্যাপক রোমাঞ্চকর হয়েছে।’
চরকির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেদওয়ান রনি বলেন, ‘দেখতে দেখতে মিনিস্ট্রি অফ লাভ-এর তৃতীয় সিনেমা রিলিজের পথে। প্রথম দুটি সিনেমা দর্শক বেশ পছন্দ করেছে। আশা করছি, দর্শক এবার মনোগামী-এর মধ্যে দিয়ে আগের ফারুকী ভাইয়ের নির্মাণ খুঁজে পাবে।‘
সারাবাংলা/এজেডএস