‘ছবি দেখানোর চেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা আর নেই’
১০ মে ২০২৪ ১৯:০৮
আহম্মেদ হুমায়ূন চলচ্চিত্রে নিয়মিত সংগীত পরিচালনা করছেন এক যুগের বেশি সময় ধরে। স্বপ্ন দেখতেন সিনেমা নির্মাণের। রাজশাহীতে বসে স্থানীয় ভাষায় নির্মাণ করেছেন ‘পটু’। জাজ মাল্টিমিডিয়ার প্রযোজনায় নির্মিত ছবিটি গেল ঈদে মুক্তির কথা ছিলো। এটি মুক্তি পেয়েছে শুক্রবার (১০ মে)। নবীন এ নির্মাতার স্বপ্নযাত্রার গল্প শুনেছেন সারাবাংলার সিনিয়র নিউজরুম এডিটর আহমেদ জামান শিমুল।
‘পটু’র গল্পটি আপনার ভাবনায় এলো কীভাবে?
আমি একদিন পদ্মার চরে ঘুরতে গিয়েছিলাম। ঘুরতে গিয়ে একটা গ্রাম দেখে আমার তো মাথা নষ্ট। এরকম গ্রাম যে বাংলাদেশে আছে, চিন্তা করায় যায় না। তখনই মনে হল এ গ্রামকে কেন্দ্র করে তো একটা গল্প বানানো যায়। এটা প্রায় দুবছর আগের ঘটনা।
জাজ মাল্টিমিডিয়া এর সঙ্গে যুক্ত হলো কীভাবে?
গল্প প্রস্তুত করার আগে আমি কাউকেই কিছু বলি নাই। এরপর আমি আজিজ ভাইকে ফোন দিলাম। বললাম, রাজশাহীর স্থানীয় শিল্পীদের নিয়ে ছবি বানাবো। দু-একজন হয়তো ঢাকা থেকে শিল্পী নিবো। গল্পটা এরকম এরকম। উনি গল্পটা লিখে দেখা করতে বলতেন। এরপর ওনাকে গল্পটা শোনালাম। ওনার দারুণ পছন্দ হলো আইডিয়াটা।
ইভান সাইর রেডিও আরজে, উপস্থাপনা ও টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করলেও সিনেমায় আগে কাজ করেননি। তাকে কাস্টিংয়ের আইডিয়া কি আপনার ছিল নাকি জাজের?
তাকে কাস্টিংয়ের আইডিয়া আমার ছিল। এটা ঠিক আজিজ ভাইয়ের অনুমতি ছাড়া তো কিছু হবে না। তাকে আগে থেকে চিনলেও হৃদতার সম্পর্ক ছিল না। তার অভিনয়ও দেখেছিলাম—খারাপ করে না। একদিন ফেসবুকে তার একটা ছবি দেখেছিলাম—যে লুকের ছবি সে পোস্ট করেছিল, তা আমার ছবির চরিত্রের লুকের সঙ্গে অনেকটাই মিলে যায়। তখন আমি বলি, আরে! একে তো আমার দরকার। পরে আজিজ ভাইকে বলার পর তিনি লোকেশনে গিয়ে অডিশন নেওয়ার কথা বললেন। তখন তাকে রাজশাহী নিয়ে গিয়ে সে গ্রামে ফটোশুট করালাম। আমার নিজস্ব সেটআপ দিয়ে কিছু ডামি শুটিংও করলাম। সেগুলো আজিজ ভাইকে পাঠালাম। তারপর ঢাকায় এসে ফাইনালি মিটিং হলো। এভাবেই তাকে চূড়ান্ত করা হলো।
আপনার ছবিটিকে আমরা কোন জনরায় ফেলবো?
এটাকে আপনারা ক্রাইম থ্রিলার জনরায় ফেলতে পারেন। এখানে দেখা যাবে যে একটা জনবিচ্ছিন্ন গ্রাম। সে গ্রামের মানুষের হাসি কান্না, এর মধ্যেই ঘটে যাওয়া খুন-খারাবি, বিশ্বাস-অবিশ্বাস, মানুষের সঙ্গে মানুষের বেঈমানি এগুলো নিয়েই গল্প।
আপনার ছবির প্রেক্ষাপট, চরিত্রগুলোর মুখের ভাষা সবই রাজশাহীর—বাণিজ্যিক ছবিতে কেউ এ ধরণের সাহসটা করে না। আপনি এ সাহসটা কীভাবে ফেলেন?
আমি তো সিনেমারই লোক আগাগোড়া। এখানে বলতে গেলে ইফতেখার ভাইয়ের (পরিচালক ইফতেখার চৌধুরী) কথা বলতে হয়। আমরা টানা ৯ বছর এক মগবাজারে এক বিল্ডিংয়ে ছিলাম। আমরা সিনেমা নিয়ে প্রচুর প্ল্যান করতাম, স্বপ্ন দেখতাম। মিউজিকের ক্যারিয়ারের ভয়ে বলতাম না। করোনার সময়ে আমি রাজশাহীতে শিফট করি। কারণ, সিনেমা বানাবো। এখানে আমার টিমে প্রায় ৭০ জনে কাজ করে। ‘পটু’ তো সূচনা মাত্র এরপর একের পর এক কাজ আসবে। দুবছর সময় লাগছে এসব টিম মেম্বারদের তৈরি করতে।
আপনার প্রধান দুই অভিনয়শিল্পী ইভান সাইর ও আফরা সাইয়ারা তো রাজশাহীর নন। তারা কতটুকু রাজশাহীর ভাষা আয়ত্ত্ব করতে পেরেছিল?
না, তাদের আয়ত্ত্ব করা লাগেনি। কারণ ছবিতে তারা ঢাকা থেকে আগত এনজিওকর্মী।
গল্পে কি তাহলে এনজিওর শোষণ এধরণের কোন বিষয় উঠে এসেছে?
এধরণের কোন বিষয় আমাদের গল্পে নেই।
চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালক থেকে নির্মাতা হলেন। এক যুগের বেশি এখানে সম্পৃক্ত আপনি। সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা কী বলে মনে করেন?
ছবি দেখানোর চেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা আর নেই। আমি অনেক পরিচালককে ভুল বুঝতাম—ছবিটা ফালতু বানিয়েছে, নানান কথা বলতাম। কিন্তু নিজে বানাতে গিয়ে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা চলে এসেছে। সিনেমাটা আসলে কষ্টের জায়গা। শিল্পী বলেন, অন্যান্য জায়গা বলেন সবাই খুব হেল্পফুল থাকেন। কিন্তু দিনশেষে আমাদের সিনেমা হল নেই পর্যাপ্ত। ফলে আমাদের সন্তান আলোর মুখ দেখে না ঠিকঠাক।
জাজের ক্ষেত্রে শোনা যায়, তাদের কর্ণধার আব্দুল আজিজ নির্মাতাকে নানা ধরণের খবরদারি করেন। নানা কিছুতে তার পছন্দ অনুযায়ী কাজ করতে বাধ্য করেন। আপনার ক্ষেত্রে এধরণের কোন ঘটনা ঘটেছে?
আমার ছবির ক্ষেত্রে এধরণের কোন ঘটনা ঘটেনি। উনি আমাকে বলেছিলেন, তোকে আমি একটা সুযোগ দিলাম। এটাকে কাজে লাগিয়ে ভাগ্য নির্ধারণ করার দায়িত্ব তোর নিজের। রাজশাহীতে আমরা যখন রিহার্সেল করতাম তখন ভিডিও কলে আমার শিল্পীদের প্রচুর উৎসাহ দিয়েছেন। সবসময় বলতেন, তোমরা এমনভাবে কাজ করো যেন এখান থেকে কয়েকজন নিয়মিত শিল্পী আমরা পেয়ে যাই। আমাদের মুখটা যেন থাকে।
গ্রুমিং সেশনটা কতদিন করিয়েছিলেন?
এটা টানা ছয় মাস করিয়েছিলাম। এটা শুরু করেছিলাম মত বছরের কোরবানির ঈদের কিছুদিন পর থেকে।
আপনি কি আত্মবিশ্বাসী দর্শক আপনার ছবিটি পছন্দ করবে?
আমাদের বিশ্বাস রয়েছে।
কোন কারণে গ্রহণ না করলে ছবি বানানো ছেড়ে দিবেন?
প্রশ্নই আসে না। পরের ছবির গল্প প্রস্তুত।
সেটাও কি জাজ প্রযোজনা করছে?
৯০ শতাংশ সম্ভাবনা তাদের প্রযোজনা করার। গল্প জমা দেওয়া আছে।
সারাবাংলা/এজেডএস