কাঠামো সংস্কার শেষ, অপেক্ষা এখন সিনেমা নির্মাণের…
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৮:১২
ঢাকা: দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পুনর্গঠন হয়েছে শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জুরি বোর্ড। এমনকি চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের নামও পরিবর্তন হয়েছে। সেন্সর বোর্ডকে এখন ডাকা হবে ‘চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড’। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির মূল যে চালিকা শক্তি ‘চলচ্চিত্র’ তা নির্মাণ বন্ধ রয়েছে।
নিয়মিত কাজ করেন এমন ১০ জন প্রযোজক-পরিচালক, অভিনয়শিল্পী ও কলাকুশলীদের সঙ্গে কথা বলেছে সারাবাংলা। তারা প্রত্যেকেই জানিয়েছেন এ মুহূর্তে তারা কেউই নতুন কোনো ছবির কাজ করছেন না। সবাই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। প্রযোজক-পরিচালক ও কলাকুশলীরা পরিস্থিতি স্থিতিশীল হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সামসুল আলম এই স্থবিরতাকে স্বাভাবিক হিসেবেই দেখছেন। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘একটা সরকার ১৫ বছর ক্ষমতায় ছিল। সেখানে হঠাৎ করে পরিবর্তন আসায় সবকিছু কিছুটা স্থবির থাকবে- এটাই স্বাভাবিক। আর নতুন সরকারও পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলে চলচ্চিত্র নিয়ে নতুন উদ্যোগ নেবে বলে আমার বিশ্বাস।’
নতুন-পুরাতন প্রযোজকরা এখন বিনিয়োগের ব্যাপারে সময় নিচ্ছেন বলে জানালেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি কাজী হায়াৎ। সারাবাংলার এই প্রতিবেদকে তিনি বলেন, ‘অনেকেই নতুন ছবির পরিকল্পনা করছে। কিন্তু কাজ শুরু করতেই তো অনেক পয়সা লাগে। সেটা আসছে না। তাছাড়া অধিকাংশ সিনেমা হলই তো বন্ধ। ছবি দেখানোর জায়গা না পেলে বানিয়ে লাভ কি? সব মিলিয়ে অধিকাংশ প্রযোজকই সময় নিচ্ছেন।’
একই কথা জানালেন নির্মাতা সৈকত নাসির। সারাবাংলাকে তিনি জানান, তার পরিচালনায় ‘মাসুদ রানা’র শুটিং বাকি। সেটি হয়তো কিছুদিনের মধ্যে শেষ করবেন। এ ছাড়া সরকার পরিবর্তনের আগে নতুন একটি ছবির ব্যাপারে একজন প্রযোজকের সঙ্গে কথাবার্তা প্রায় চূড়ান্ত হয়েছিল। সেই প্রযোজক এখন একটু সময় নিতে চান। সৈকত বলেন, ‘ছবি যে হবে না তা নয়। হবে, তবে প্রযোজক বলছেন, পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে তা দেখে তারা সিদ্ধান্ত নিবেন।’
এফডিসির ১০টি শুটিং ফ্লোরের অধিকাংশই এই মুহূর্তে ফাঁকা। প্রতিষ্ঠানটির জনসংযোগ কর্মকর্তা হিমাদ্রি বড়ুয়া সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, নতুন সরকার আসার পর এফডিসিতে ২-৩টি ছবির এবং অল্প কিছু বিজ্ঞাপনের শুটিং হয়েছে।
শুটিং না হলেও পরিচালক সমিতিতে ছবি নিবন্ধন থেমে নেই। অধিকাংশই গত সরকারের বিভিন্ন আলোচিত ঘটনা নিয়ে। ‘আয়নাঘর’ ও ‘ডিবি হারুন’র মতো আলোচিত বিষয় ও ব্যক্তিকে নিয়েই ছয়টি ছবি নিবন্ধন করা হয়েছে। এগুলোর অধিকাংশই ঘোষণাতেই থেমে রয়েছে।
বদিউল আলম খোকন ঘোষণা দিয়েছেন ‘ভয়ংকর আয়নাঘর’ চলচ্চিত্র নির্মাণের। ছবিটির চিত্রনাট্য তৈরির কাজ চলছে জানিয়ে খোকন সারাবাংলাকে বলেন, ‘পরিস্থিতি এখনও শুটিং করার মতো হয়নি। এফডিসির বাইরে শুটিং করতে যে নিরাপত্তা লাগে তা এখনও স্বাভাবিক নয়। একটা শুটিং ইউনিটে শিল্পী, কলাকুশলী মিলিয়ে কমপক্ষে ৫০-৬০ জন মানুষ থাকে। নতুন সরকার আসছে। কিছু জায়গা ঠিক হতে হয়তো সময় লাগবে।’
৫ আগস্টের পর দেশের ১০টির বেশি সিনেমা হল ভাঙচুরের শিকার হয়েছে। এ ছাড়া গেল দেড় মাসে নতুন ছবি মুক্তি পেয়েছে মাত্র একটি। যার কারণে অধিকাংশ মালিক তাদের সিনেমা হল বন্ধ রেখেছেন। চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন উজ্জল সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে জানালেন, সমিতির তথ্য মতে দেশের চালু ২০০ সিনেমা হলের মধ্যে ৬০ শতাংশই এই মুহূর্তে বন্ধ রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের সঙ্গে সম্প্রতি বৈঠক করেছি। আশা করছি পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে।’
শিল্প নির্দেশক দীপু বাউল সারাবাংলাকে জানান, তিনি বিভিন্ন টেলিভিশনে সিভি দিয়েছেন। কারণ হিসেবে জানালেন, আগে মাসে ১-২টি ছবির শিল্প নির্দেশনার কাজ করতেন। ছবিতে কাজ না থাকলে বিজ্ঞাপনের কাজ করতেন। হঠাৎ করে সরকার পরিবর্তনের কারণে কেউই নতুন ছবির পরিকল্পনা করছেন না। ফলে জীবিকার তাগিদেই তিনি চাকরি খুঁজছেন।
সারাবাংলা/এজেডএস/পিটিএম