আমি হেরে গেছি: শিল্পকলা ডিজি
৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৬:৫৬
দেশ নাটকের ‘নিত্যপুরাণ’-এর প্রদর্শনী ছিল শনিবার (২ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টায়। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মঞ্চে নাটকটির শো চলাকালীন বন্ধ করে দেওয়া হয়। এটি করেন স্বয়ং শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক (ডিজি) সৈয়দ জামিল আহমেদ। তিনি এ বিষয়ে শনিবার রাতে সারাবাংলাকে বলেছিলেন, তার কষ্ট লাগছে বিষয়টায়। তিনি সকালে (রোববার, ৩ নভেম্বর) এ বিষয়ে কথা বলবেন।
প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী রোববার সকালে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন সৈয়দ জামিল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে দেশের ২২ জায়গার শিল্পকলা একাডেমিতে হামলা হয়েছে। সেসব আমার মাথায় ছিল। ঢাকার শিল্পকলা একাডেমরি ভেতরে দর্শক ছিল। উত্তেজিত কেউ গিয়ে যদি দর্শকদের আক্রমণ করে বসে সে শঙ্কা ছিল। দর্শকের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে আমরা প্রদর্শনী বন্ধ করি। আমি ভেতরে গিয়ে দর্শকদের কাছে ক্ষমা চেয়েছি।’
ঘটনার বর্ণনার দিয়ে তিনি বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে শিল্পকলার আয়োজনে যাত্রা উৎসব চলছে। আমি এবং নাট্যকলা বিভাগের পরিচালক ফয়েজ জহির সেখানে ছিলাম। নাট্যশালার সামনে বিক্ষোভ হচ্ছে শুনে আমি সেখানে যাই। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলি। তারা বলেন, এহসানুল আজিজ বাবু স্বৈরাচারের দোসর। তার নাট্যদলের প্রদর্শনী করতে দেবে না। আমি তাদের বুঝিয়েছি, দেশ নাটকের জনা বিশেক সদস্যও জুলাই গণঅভ্যুথানে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন গুলিবিদ্ধও হয়েছেন।’
সৈয়দ জামিল আরও বলেন, ‘প্রথমে তারা আমার কথা মেনে নেয়। আমরা নাটকের প্রদর্শনী শুরু করতে বলি। কিন্তু পরে আবার বিক্ষোভ শুরু করে তারা। তখন তারা বেশ উত্তেজিত হয়ে পড়ে। তাদের একজন নিজেকে রিকশাচালক পরিচয় দিয়ে জানায় যে, জুলাই আন্দোলনে তিনিও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।’
‘গতকাল আমি একটা খণ্ডযুদ্ধ করেছি। অনেক চেষ্টা করেছি, নাটকের প্রদর্শনী যেন হয়। কিন্তু আমি হেরে গেছি। একটা খণ্ডযুদ্ধে হেরে গেছি। কিন্তু মূল যুদ্ধটায় এখনো হারিনি,’─বলেন সৈয়দ জামিল আহমেদ।
একাডেমির ভেতরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা অবস্থান করলেও তাদের সহযোগিতা কেন নেওয়া হয়নি, তা জানতে চাইলে পাল্টা প্রশ্নে তুলে সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, ‘বলপ্রয়োগে থামাবেন? নাকি কথা দিয়ে থামাবেন? এখানে যারা এসেছেন, তারা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাদের কষ্টের কথা বলেছেন। তাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীকে দাঁড় করিয়ে দেওয়াটা কি ঠিক ছিল? আমি মনে করেছি, এটা সেনাবাহিনীর জায়গা নয়।’
শেষের দিকে সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা সেখানে এসেছিলেন এবং সেনাবাহিনীর দুটি গাড়িও এসেছিল বলে জানান জামিল আহমেদ। মহাপরিচালক বলেন, সেনাবাহিনীকে জনতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিতে চাননি তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নাটকটির শো শুরুর আগেই কিছু ব্যক্তি শিল্পকলার গেটে সেটির প্রদর্শনী বন্ধের জন্য ব্যানার টানায়। এতে দেশ নাটকের এহসান উল এজাজ বাবুকে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার কথা বলা হয়। সেইসঙ্গে তিনি ফেসবুকে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে কটূক্তি করেছেন বলেও দাবি করা হয়। এ ঘটনা সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুরু হয়ে রাত ৯টা পর্যন্ত চলে। এক পর্যায়ে তারা আগুন লাগিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়।
সারাবাংলা/এজেডএস