রুনা লায়লার জীবনের হিসেব নিকেশ
১৭ নভেম্বর ২০২৪ ১৬:৩৩
কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী রুনা লায়লার বয়স ৭২ থেকে ৭৩ এ পড়লো। রোববার (১৭ নভেম্বর) তার জন্মদিন। গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানালেন, জীবনের নানান হিসেব নিকেশের গল্পের কথা।
এক জীবনে পাওয়া না পাওয়ার হিসাব মেলান কিনা? এ প্রশ্নের জবাবে একটি গণমাধ্যমে রুনা লায়লা বলেন, ‘একদমই না। আল্লাহর রহমতে অনেক পেয়েছি। এক জীবনে দেশ–বিদেশের শ্রোতাদের ভালোবাসা, শ্রদ্ধা এত এত পেয়েছি, শুকরিয়া আদায় করেও শেষ করতে পারব না। এখনো পাচ্ছি। ৬০ বছর ধরে পেয়ে চলেছি। শ্রোতাদের বাইরে আমার অঙ্গনের অগ্রজ, অনুজ এবং সমসাময়িক সবার স্নেহ, সম্মান, ভালোবাসা তো অতুলনীয়।’
সুযোগ পেলে জীবনের কোন ভুলটি মুছে ফেলতে চান? জবাবে রুনা লায়লা বলেন, ‘একসময় যেগুলো মনে করতাম ভুল হয়েছে, সেগুলোতে কিছু বোনাসও পেয়েছি। আমার ব্যক্তিগত জীবনে এমনটা ঘটেছে। সেখানে কিন্তু আমি অনেক কিছু অর্জনও করেছি। তাই অতীতের ওসব নিয়ে চিন্তাও করি না। অতীত অতীতেই থাকুক। আমি সুখে আছি, শান্তিতে আছি—আলহামদুলিল্লাহ।’
১৯৫২ সালের ১৭ নভেম্বর সিলেট জেলায় জন্মগ্রহণ করেন রুনা লায়লা। বাবার নাম সৈয়দ মোহাম্মদ ইমদাদ আলী ও মা আমিনা লায়লা। বাবার চাকরির সূত্রে রুনা লায়লার শৈশব এবং কৈশোরের কিছু সময় তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে কেটেছে। মাত্র ৬ বছর বয়সে রুনা লায়লা প্রথম মঞ্চে গান পরিবেশন করেন। তার প্রথম গান প্রকাশিত হয় ১৯৬৪ সালে। অল্প বয়স থেকে স্টেজে সংগীত পরিবেশনের পাশাপাশি করাচি রেডিওতে গান গেয়ে পরিচিতি লাভ করেন তিনি।
১৯৬৭ সালে পাকিস্তানি চলচ্চিত্রে ‘দাইয়ারে দাইয়ারে দাইয়া’ গানটি গেয়ে ব্যাপক প্রশংসা পান রুনা লায়লা। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর নিজের সিদ্ধান্তে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে চলে আসেন রুনা লায়লা। ১৯৭৪ সালের শুরুতে প্রয়াত সত্য সাহার সুরে ‘জীবন সাথী’ চলচ্চিত্রে গান গাওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে প্রথম প্লে-ব্যাক করেন তিনি। এরপর অসংখ্য চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়েছেন এই সংগীতশিল্পী। বাংলাদেশে চলচ্চিত্র, পপ ও আধুনিক সংগীতের জন্য বিখ্যাত রুনা লায়লা। বাংলাদেশের বাইরে গজল গায়িকা হিসেবেও তার সুনাম আছে।
১৯৭৪ সালে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশনশিপসের (আইসিসিআর) আমন্ত্রণে ভারত সফর করেন রুনা। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাস করেন। কল্যাণজি-আনন্দজির সুরে হিন্দি ছবি ‘এক সে বারকার এক’-এর টাইটেল সঙে প্লেব্যাক ছিল তার প্রথম হিন্দি গান। এ ছাড়া ‘দমাদম মাস্ত কালান্দার’-এর কথা সবারই জানা- যার জন্য ভারতে তার নাম হয়েছিল ‘দামদাম গার্ল’। তার গাওয়া অন্যান্য হিন্দি গানের মধ্যে আছে ‘দে দে পেয়ার দে’, ‘আও সুনলো’, ‘মেরা বাবু ছেল ছাবিলা’ ইত্যাদি।
সুরকার নিসার বাজমির ১০টি করে তিন দিনে মোট ৩০টি গান রেকর্ডের পর রুনা লায়লা নাম লেখান গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে। বাংলা-হিন্দি-উর্দু ছাড়াও গুজরাটি, পাঞ্জাবি, সিন্ধি, পশতু, বেলুচ, আরবি, পারসিয়ান, মালয়, নেপালি, জাপানি, ইতালিয়, স্প্যানিশ, ফরাসি ও ইংরেজিসহ মোট ১৮টি ভাষায় গান গাওয়া, নিজের সংগীতজীবন নিয়ে নির্মিত ‘শিল্পী’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করা— সব মিলিয়ে রুনা লায়লা হয়ে উঠেন উপমহাদেশের অন্যতম সংগীত কিংবদন্তি।
বাংলাদেশে সাতবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার, ভারতের সায়গল পুরস্কার, পাকিস্তানে দুইবার নিগার পুরস্কার, দুইবার গ্র্যাজুয়েট পুরস্কার, সমালোচক পুরস্কার ও জাতীয় সংগীত পরিষদ স্বর্ণপদকসহ দেশ-বিদেশের নানা পুরস্কার অর্জন করেছেন রুনা লায়লা। এ পর্যন্ত ১৫ হাজারেরও বেশি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন এই গুণী সংগীতশিল্পী।
সারাবাংলা/এজেডএস