শিল্পকলার মঞ্চে অভিনয়ে মামুনুর রশীদকে মানা, যা বলছেন ডিজি
২৮ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:৪৩
নাট্যজন মামুনুর রশীদকে শিল্পকলার মঞ্চে অভিনয় না করার কথা বলেছেন এর ডিজি। তবে ডিজি সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেছেন, বিষয়টি কোনো অফিসিয়াল ঘোষণা নয়, এটি আপাতত কয়েকদিনের জন্য। নাট্যপাড়ায় চলমান অস্থির পরিবেশ নিয়েই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোপের মুখে পড়েছেন জামিল আহমেদ। নাট্যকর্মীদের অনেকেই তার এমন বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে ফেইসবুকে পোস্ট লিখছেন।
শিল্পকলায় অভিনয় থেকে দূরে থাকার এমন অনুরোধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মামুনুর রশীদ। তার দাবি, শিল্পকলা একাডেমির কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর কথা শুনে মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ জামিল আহমেদ এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি ওই সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। তারা যেটা বলছেন, সেটাই শুনছেন এবং তাদের কথামতোই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছেন।
মামুনুর রশীদ বলেন, ‘‘আমাকে বিপ্লববিরোধী আখ্যা দিয়ে শিল্পকলা একাডেমি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’ এই স্লোগান দেয়া উচিত হয়নি বলে বিবৃতি দিয়েছিলাম। এই বিবৃতি কোনো বিপ্লবিরোধী বিবৃতি ছিল না।’’
ছাত্র হত্যার বিরুদ্ধে মিছিল করার কথা জানিয়ে মামুনুর রশীদ বলেন, ‘‘পরবর্তীতে নিজেও গণঅভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছি। যখন ছাত্রদের ওপর পুলিশ গুলি চালিয়েছে, তখন রাজপথে অবস্থান নিয়েছি। ছাত্র হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে মিছিল করেছি। তাহলে আমার অপরাধ কোথায়? অথচ সেই বিবৃতির ইস্যুকে কেন্দ্র করে আমাকে শিল্পকলা একাডেমির মঞ্চে অভিনয় না করার সিদ্ধান্ত আরোপ করা হয়। আমি নাকি মঞ্চে অভিনয় করলে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। অথচ কয়েকদিন আগে নাট্যদল আরণ্যকের ‘ময়ূর সিংহাসন’ নাটক নিয়ে আমি মঞ্চে উঠেছি। কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই সুষ্ঠুভাবে নাটকের মঞ্চায়ন হয়েছে। বরং দর্শকরা পুরো নাটকটি মনোযোগ দিয়ে দেখেছেন এবং উপভোগ করেছেন।’’
ক্ষোভ প্রকাশ করে মামুনুর রশীদ বলেন, “আমি কি অভিনয় করতে পারব না! আমার কোনো অপরাধ নেই, অথচ আমাকে অভিনয় করতে দেবে না। রাজাকার স্লোগান নিয়ে ২৪ জন বিশিষ্টজন বিবৃতি দিয়েছিলেন, সেখানে আমার নাম ছিল। ওই বিবৃতিতে কী অপরাধ আছে? এখন তো বলা হচ্ছে, আপনারা কথা বলেন। সেই কথাই বলতে পারব না? এমন একটা সময় চলে এসেছে এই বাংলাদেশে, একটি মহল তো চাচ্ছেই শিল্পসাহিত্য-সংস্কৃতি বন্ধ হয়ে যাক। আমাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছি, রাঢ়াঙ আমরা করব না, “কম্পানি”ও করব না। চলুক যত দিন এই ব্যবস্থা চলে।”
এ বিষয়ে সৈয়দ জামিল বলেন, “মামুনুর রশীদ আমার কাছে ভীষণ সম্মানের জায়গায় আছেন। তাকে নিষিদ্ধ করার আমি কে? আমি কেবল পরিস্থিতি জানানোর জন্য তাকে ফোন করেছিলাম।
“জুলাই আন্দোলনের সময় মামুনুর রশীদসহ কয়েকজন একটা বিবৃতি দিয়েছিলেন। তাতে কিছু লোক তার উপর ক্ষুব্ধ হয়ে আছেন। মামুনুর রশীদের মত একজন গুণী শিল্পী যেন কোথাও অসম্মানিত না হন, এজন্য ব্যক্তিগত জায়গা থেকে তাকে পরিস্থিতিটা বলেছি।”
মহাপরিচালক বলেন, “আমি চেয়েছি আরণ্যক প্রযোজিত ‘রাঢ়াঙ’ নাটকটি সারা দেশে মঞ্চায়ন হোক, এটি আমারও খুবই পছন্দের নাটক। সম্প্রতি ‘নিত্যপুরাণ’ নাটক নিয়ে যা হয়েছে, মামুনুর রশীদকে নিয়ে যেন এরকম কিছু না হয়। তার মতো গুণী শিল্পীকে ঘিরে কোনো রকম বিতর্ক যেন না আসে।
“মামুনুর রশীদকে ভালোবাসার জায়গা থেকেই আমি বলেছিলাম, কিছুদিন আপনি অভিনয় না করলে ভালো হয়। কিছুদিন পর পরিস্থিতি ঠিক হলে, আপনি আবার অভিনয় করেন। তাকে নিষিদ্ধ করা হয়নি।”
সারাবাংলা/এজেডএস