দেহদানের ইচ্ছে প্রত্যাহার করছি: কবীর সুমন
৫ মার্চ ২০২৫ ১৮:৩৫
‘টাকা পয়সা একদিন থাকবে না। কাজটা থেকে যাবে।’- এটাই চিরায়ত সত্য। কিন্তু এমন সত্যের বিপরীতে দাঁড়িয়ে ২০২০ সালের ২৩ অক্টোবর গীতিকবি, সুরকার ও শিল্পী কবীর সুমন বলেন অন্য কথা!
নিজের ফেসবুকে একটি ইচ্ছেপত্র (উইল) প্রকাশ করেন কবীর সুমন। সেখানে তিনি স্পষ্ট বাংলায় জানান, তার মৃত্যুর পর যেন তার সমস্ত সৃষ্টি ও স্মৃতিবিজড়িত জিনিসপত্র ধ্বংস করে দেয়া হয়!
কিংবদন্তী এই শিল্পীর এমন ইচ্ছেপত্র নিয়ে তখন আলোচনা চলে সর্বত্ব! ইচ্ছেপত্রে আর কী লিখেছিলেন? নিজের প্যাডে লেখা ‘সকলের অবগতির জন্য’ শিরোনামের সেই ইচ্ছাপত্রে তিনি লিখেন, ‘আমার মৃতদেহ যেন দান করা হয় চিকিৎসাবিজ্ঞানের কাজে। কোনও স্মরণসভা, শোকসভা, প্রার্থনাসভা যেন না হয়। আমার সমস্ত পাণ্ডুলিপি, গান, রচনা, স্বরলিপি, রেকর্ডিং, হার্ড ডিস্ক, পেনড্রাইভ, লেখার খাতা, প্রিন্ট আউট যেন কলকাতা পৌরসভার গাড়ি ডেকে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় সেগুলি ধ্বংস করার জন্য। আমার কোনও কিছু যেন আমার মৃত্যুর পর পড়ে না থাকে। আমার ব্যবহার করা সব যন্ত্র, বাজনা, সরঞ্জাম যেন ধ্বংস করা হয়। এর অন্যথা হবে আমার অপমান।’
এমন কথার প্রায় ৫ বছর পর ২০২৫ সালের ৫ মার্চ দুপুরে একই মাধ্যমে কবীর সুমন ‘সকলকে জানাতে চাই’ শিরোনামে বললেন ভিন্ন কথা।
কবীর লিখেছেন, “কিছুকাল আগে এই ফেসবুকেই ঘোষণা করেছিলাম – আমি আমার দেহ দান করেছি, কোনও ধর্মীয় শেষকৃত্য আমি চাই না। অনেক ভেবে আমি সেই সিদ্ধান্ত পাল্টালাম।”
কবীর সুমন লিখেন,“দেহদানের ইচ্ছে প্রত্যাহার করছি আমি। আমার দেহ আমি দান করব না। আমি চাই আমায় এই কলকাতারই মাটিতে, সম্ভব হলে গোবরায়, ইসলামী রীতিতে কবর দেওয়া হোক। এটাই আমার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। আমার কতিপয় স্বজনকে এটা জানিয়ে দিলাম। আমার এই ঘোষণা বিষয়ে কারুর কোনও মত বা মন্তব্য চাই না।
সকলের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক।”
ভারতীয় বাঙালি গায়ক, গীতিকার, অভিনেতা, বেতার সাংবাদিক ও গদ্যকার কবীর সুমন। তার পূর্বনাম সুমন চট্টোপাধ্যায়। ২০০০ সালে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়ে তিনি তার পুরনো নাম পরিত্যাগ করেন।
সুমন একজন বিশিষ্ট আধুনিক ও রবীন্দ্রসংগীত গায়ক। ১৯৯২ সালে তার ‘তোমাকে চাই’ অ্যালবামের মাধ্যমে তিনি বাংলা গানে এক নতুন ধারার প্রবর্তন করেন। তার স্বরচিত গানের অ্যালবামের সংখ্যা পনেরো। সংগীত রচনা, সুরারোপ, সংগীতায়োজন ও কণ্ঠদানের পাশাপাশি গদ্যরচনা ও অভিনয়ের ক্ষেত্রেও তিনি স্বকীয় প্রতিভার সাক্ষর রেখেছেন। তিনি একাধিক প্রবন্ধ, উপন্যাস ও ছোটোগল্পের রচয়িতা এবং হারবার্ট ও চতুরঙ্গ প্রভৃতি মননশীল ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের রূপদানকারী। বিগত কয়েক বছর ধরে বাংলা খেয়াল নিয়ে মেতে আছেন এই শিল্পী।
সারাবাংলা/এজেডএস