নারী চালকের সংখ্যা বাড়লে সড়ক দুর্ঘটনা কমবে: ওবায়দুল কাদের
২৫ জানুয়ারি ২০২০ ২১:০৩
ঢাকা: নারী চালকের সংখ্যা বাড়লে সড়ক দুর্ঘটনা কমবে বলে মন্তব্য করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
শনিবার (২৫ জানুয়ারি) ব্র্যাকের আয়োজনে নারী গাড়িচালকদের প্রশিক্ষণ পরবর্তী সার্টিফিকেট বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, নারী গাড়িচালকরা তুলনামূলক বেশি নিয়ম মেনে চলেন এবং ঠাণ্ডা মাথায় গাড়ি চালান। নারীরা নেশা করেন না বা গাড়ি চালানোর সময় মোবাইলে কথাও বলেন না। তাই তারা গাড়ি চালালে রাস্তায় দুর্ঘটনা কমে যাবে।
ব্র্যাক অনেকদিন ধরেই সড়ক নিরাপত্তা এবং নারীবান্ধব পরিবহন ব্যবস্থার জন্য পেশাগত নারী গাড়িচালক তৈরির কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এটি ছিল তাদের ৮ম ব্যাচ; যেখানে মোট ১১ জন প্রশিক্ষণার্থী ছিলেন। উত্তরার ব্র্যাক লার্নিং সেন্টারে তিন মাসের আবাসিক প্রশিক্ষণ শেষে এদের সবাই উত্তীর্ণ হয়েছেন এবং লাইসেন্স পেয়েছেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত স্যার ফজলে হাসান আবেদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। তারপর ব্র্যাকের প্রশাসন এবং সড়ক নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিচালক আহমেদ নাজমুল হোসাইন ‘উইমেন বিহাইন্ড দ্য হুইল ফর রোড সেফটি’ বিষয়ে প্রেজেন্টেশন দেখান। এ সময় তিনি বলেন, ‘২০১১ সালে চালু হওয়া ব্র্যাক ড্রাইভিং স্কুলে মূলত পিছিয়ে পড়া নারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তিন মাসের আবাসিক প্রশিক্ষণে মৌলিক ও সুরক্ষামূলক গাড়িচালনা, সাধারণ মেরামতি কাজ এবং পেশাগত আচরণ শেখানো হয়।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই ব্র্যাকের মতো আরও প্রতিষ্ঠান নারীর স্বনির্ভরতা অর্জনে এগিয়ে আসুক। গাড়িচালনায় কয়েকমাস প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কোনো নারী যদি চাকরি না পান, তাহলে এই উদ্যোগ পুরোটাই ব্যর্থ হবে। তাই সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নারী গাড়িচালকের চাকরির পথ সুগম করতে হবে।’ সরকার এ বিষয়ে আরও গুরুত্ব দেবে বলেও জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ব্র্যাক ড্রাইভিং স্কুল থেকে এ পর্যন্ত অপেশাদার মৌালিক গাড়িচালনা প্রশিক্ষণ পেয়েছেন ৭ হাজার ৩৮৮ জন, যার মধ্যে ১ হাজার ৯৭৩ জন নারী। পেশাদার চালকের প্রশিক্ষণ পেযেছেন ১০ হাজার ৩৭৩ জন, যার মধ্যে ২১৪ জন নারী। ৫৯৯ জন নারীকে মোটরসাইকেল চালনার প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। এদের অনেকেই আজ সরকারি, আন্তর্জাতিক ও দেশীয় উন্নয়ন সংস্থা ও বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন।
মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে ‘উইমেন বিহাইন্ড দ্য হুইল ফর রোড সেফটি’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী রওশন আখতার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্।
কাজী রওশন আখতার বলেন, ‘ব্র্যাকের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, গণপরিবহনে ৯৪ শতাংশ নারী কোনো না কোনোভাবে যৌন হয়রানির শিকার হন। তাই এদেশে নারী গাড়িচালকদেরও পদে পদে বাধার মুখোমুখি হতে হয়। এর কারণগুলো খুঁজে বের করে আমাদের সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্ ভবিষ্যতে ব্র্র্যাক ড্রাইভিং স্কুলের কার্যক্রম প্রতিটি জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছার কথা জানান। তিনি বলেন, ‘সার্বিক সড়ক নিরাপত্তা; বিশেষত নারীবান্ধব সড়ক গড়ে তুলতে সরকারের সঙ্গে ব্র্যাক একযোগে কাজ করবে।’
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি মিয়াং টেমবন, সাহিত্যিক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ, ব্র্যাকের পরিচালক আন্না মিনজসহ গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, নিরাপদ সড়ক চাই ও পরিবহন মালিক সমিতির প্রতিনিধিরা।