লকডাউনে বাড়ছে নারীর প্রতি বৈষম্য: জাতিসংঘ মহাসচিব
২ মে ২০২০ ০৪:৫৩
জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে লিঙ্গবৈষম্যসহ সকল ধরণের শোষণ ও নির্যাতনের ঘটনা আরও বেশি ঘটছে। বৃহস্পতিবার (৩০ এপ্রিল) জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক নিবন্ধে তিনি এ মত প্রকাশ করেন।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লকডাউন ও কোয়ারেনটাইন পরিস্থিতি চলমান থাকায় নারীরা মারাত্মক ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। কেননা এতে পরিবারের নির্যাতক সদস্য বা সঙ্গীর সঙ্গে বেশি সময় ব্যয় করতে হচ্ছে তাদের।
গুতেরেস লিখেন, এই মুহূর্তে লকডাউনের মত বিধিনিষেধ অপরিহার্য, কিন্তু এর ফলে নির্যাতনকারী সঙ্গীর সঙ্গে একই ঘরে আটকে থাকতে বাধ্য হচ্ছে নারীরা ফলে তাদের উপর সহিংসতার ঝুঁকিও বাড়ছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সারা বিশ্বেই গৃহসহিংসতা বেড়ে গেছে। যুক্তরাজ্যের একটি সহায়তাকারী সংগঠনের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, সেখানে গৃহসহিংসতা ৭০০ শতাংশ বেড়ে গেছে। একইসঙ্গে ঝুঁকির মুখে থাকা নারীদের জন্য চলমান পরিষেবাগুলোও এসময়ে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব লিখেন, মহামারিটির সঙ্গে গভীর অর্থনৈতিক মন্দা যেমন আসতে যাচ্ছে তেমনি এটির কারণে নারীরাও ভিন্নরকম এক বাস্তবতার মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন।
গৃহসহিংসতা রোধ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে দেশগুলোর সরকারের উদ্দেশ্যে জাতিসংঘের মহাসচিব লিখেন, ১৪৩টি দেশের সরকার এই মহামারির সময়ে সহিংসতার ঝুঁকিতে থাকা নারী ও শিশুদের রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। দেশগুলো অনলাইনের মাধ্যমে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে, ডমেস্টিক ভায়োলেন্স সেন্টারের সংখ্যা বাড়াতে পারে এবং এদের নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলোতে সহায়তা বাড়াতে পারে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে জাতিসংঘের অংশিদারিত্বের মাধ্যমে তারা পঁচিশটিরও বেশি দেশে একইধরণের কার্যক্রম চালাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
কোভিড-১৯ এর ফলে নারীনির্যাতন শুধুই শারীরিক নির্যাতনেই সীমাবদ্ধ নেই, এটি নারী অধিকার ও স্বাধীনতার জন্যও হুমকিস্বরুপ। অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের ফলে মারাত্মক পরিণতির শিকার হবেন নারী। কর্মক্ষেত্রে সমান অধিকার ও সমান বেতন না পাওয়ার বিষয়টি আরও মারাত্মকভাবে দেখা দেবে বলে মনে করেন তিনি।
গুতেরেস তার নিবন্ধে এও জানিয়েছেন, নারীর সঙ্গে হওয়া এসব বৈষম্য তাকে ভাবিয়ে তুলত বলেই ষাটের দশকে রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কয়েক শতাব্দী পরে এসে উপলব্ধি করছেন, বিশ্বজুড়ে নারীর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।
নারীদের শুধু স্বল্প বেতনের কাজগুলোতেই নেওয়া হয় না, তারা ঘরের কাজ করে, ফেরিওয়ালা বা ছোট পার্লার চালানোর মত কাজও করে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার তথ্যমতে আগামী তিন মাসে প্রায় দুই কোটি মানুষ চাকরি হারাবে যার বেশিরভাগই এসব সেক্টরে কাজ করেন। মত প্রকাশ করেন গুতেরেস।
এসব কর্মক্ষেত্র বন্ধ হয়ে গেলেও অনেক নারীই অবশ্য সেবা দেওয়ার কাজ— যেমন স্বাস্থ্যখাত, বৃদ্ধাশ্রম ইত্যাদি পেশায় আগের মতই যুক্ত থাকবেন। জাতিসংঘের মহাসচিবের আশঙ্কা— বর্তমানের চেয়ে ভবিষ্যতের অবস্থা আরও খারাপ হবে, কারণ অনেক মেয়েই লেখাপড়া করার সুযোগ হারাবে। দীর্ঘমেয়াদে তা নারীর জন্য দুরবস্থা তৈরি করবে।
অ্যান্তোনিও গুতেরেস কোভিড-১৯ জাতিসংঘ নারীর প্রতি সহিংসতা লকডাউন