Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নারীর জীবনে ন্যায়বিচার কতদূর?


১১ ডিসেম্বর ২০১৭ ১৬:২৮

আজকাল নানা পাবলিক পরীক্ষার রেজাল্ট পত্রিকায় আসলে আমরা দেখতে পাই মেয়েরা বেশি ভালো রেজাল্ট করছে। প্রতিযোগিতামূলক চাকুরীর পরীক্ষায়ও মেয়েরা এগিয়ে। তার মানে কি আমরা ধরে নেব সমাজের নারীরা দিন দিন খুব এমপাওয়ার্ড হচ্ছে? মেয়েদের এই ভালো রেজাল্ট বা চাকুরী ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়াটা নারী নির্যাতন কিংবা নারীর প্রতি সহিংসতা কমিয়ে দিচ্ছে?

প্রকৃত অর্থে যতজন নারী নির্যাতনের শিকার হন তার শতকরা কত অংশ আইনের দরজায় পৌঁছাতে পারে? আইন অঙ্গনে কাজ করতে এসে দেখেছি, এক – তারা তাদের অধিকার সম্পর্কে জানেনা; আর দুই হলো তারা তাদের অধিকার এনফোর্স করতে চায়না।  আমাদের এই কনজারভেটিভ পুরুষতান্ত্রিক সমাজে সকল মেয়েকে বলা হয় অত্যাচার মেনে নিতে স্যাকরিফাইসের নামে এবং মেয়েরা এটা করেও থাকে। পারিবারিক নির্যাতনের ক্ষেত্রে আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় ধরে নেয়া হয় একটা সময় পর সব ঠিক হয়ে যাবে; এই ঠিক হতে থাকার অপেক্ষায় হারিয়ে যায় মামলা করার অনেক উপাদান!

বিজ্ঞাপন

পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারী নির্যাতিত হয়ে আসছে নানা ভাবে, নির্যাতন কমেনি, বদলে গেছে অত্যাচার ও নির্যাতনের ধরন। প্রতিটি রাষ্ট্রের সরকারের অনেক পলিসির মাঝে একটি পলিসি হলো তার সমাজের পিছিয়ে পরা জনগণের প্রতি বেশি খেয়াল রাখা যেন সমাজে ভারসাম্য বজায় থাকে; সমাজে পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠী হিসেবে যখন নারী নানারকম অত্যাচারের শিকার হচ্ছিলো তখন সরকার নারীর জন্য কিছু আইন প্রণয়ন করলেন; কিন্তু এই আইনগুলো কতটুকু বাস্তবসম্মত? আসলেই কি আইনগুলো নারীবান্ধব? আমাদের সমাজব্যবস্থা, আইনী জটিলতা এবং অত্যাচারের ধরন অনুযায়ী আইনগুলো নারীর জন্য কতটুকু সময়োপযোগী?  ১৯৮০ সালে যে আইন প্রনয়ন করা হয়েছিলো ঐ সময়ের নির্যাতনের প্রেক্ষাপটে সেটা এই যুগে এসে কতটুকু  নির্যাতন প্রতিরোধ করতে পারছে অথবা বিচারপ্রার্থীকে ন্যায়বিচার দিতে পারছে?

বিজ্ঞাপন

কোর্টে মামলাজট, প্রক্রিয়াগত জটিলতা, ইনফরমেশন গ্যাপ, সময় ও মামলা পরিচালনার খরচের  কারনে অধিকাংশ নারীই মামলা করতে চাননা। তার উপর এই সব নির্যাতনের পর একজন নারী একজন পুরুষ আইনজীবীকে সেই অত্যাচারের কথা বলতে চান, সেটা তার জন্য আরেক ধরনের ট্রমা তৈরি করে। বাংলাদেশের নিম্ন ও উচ্চ আদালতে মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে আমার দেখার সুযোগ হয়েছে, যেসব নারী আদালতে আসে তাদের কী ধরনের সমস্যা হয় এবং শেষ পর্যন্ত তাদের অবস্থা কী হয়! এই বিপুল জনসংখ্যার দেশে যেখানে মানুষ প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে যাচ্ছে খাদ্য, বাসস্থান ও বস্ত্রের জন্য; এর পর আসছে চিকিৎসা ও শিক্ষার চাহিদা, সেখানে ন্যায়বিচার চাওয়া নেহায়েতই বিলাসিতার পর্যায়ে পরে। কখনো কখনো ন্যায়বিচার চাইতে আসাটাও এক ধরনের নির্যাতন হয়ে যায় বিচারপ্রার্থী এই মানুষগুলোর কাছে। সবকিছু উপেক্ষা করে খুব কম সংখ্যক নারী কোর্টের দরজায় কড়া নাড়ে। তবে এই কম সংখ্যকও কিন্তু একদম কম নয়!

আজ থেকে বহু বছর আগে যৌতুক হিসেবে চাওয়া হতো সাইকেল, ঘড়ি, মোটর সাইকেল, স্বর্নালংকার কিংবা টাকা; সময়ের সাথে এখন যৌতুকের উপাদান পাল্টে হয়ে গেছে গাড়ি, চাকুরীর জন্য ঘুষ অথবা ভালো জায়গায় পোস্টিংয়ের জন্য শ্বশুরবাড়ি থেকে তদ্বির, ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য খরচ কিংবা বিদেশে পড়তে যাবার সময় প্লেনের টিকেট!!

একজনকে মেরে রক্তাক্ত করে ফেললে যেমন নির্যাতন হয় ঠিক তেমনি শুধু একটি থাপ্পড় দিলেও নির্যাতন হয়। কিন্তু একটি থাপ্পড় দিলে মেডিকেল সার্টিফিকেট যোগাড় করা যায়না তাই মামলাও করা যায়না। আবার যেখানে এই শারীরিক নির্যাতন বিষয়টি সর্বক্ষেত্রে দেখানো যাচ্ছেনা, সেখানে পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০ এ মানসিক নির্যাতন কীভাবে দেখাবে?  ভারতের যৌতুক নিরোধ আইন, ১৯৬১ কে অনুসরণ করে আমাদের দেশে যৌতুক নিরোধ  আইন, ১৯৮০ প্রণয়ন করা হয়; অর্থাৎ ভারত ১৯৬১ সালে যা চিন্তা করেছে আমরা তা ১৯৮০ তে এসে ভাবতে পেরেছি!

অধিকাংশ নারী আসে রক্ষণশীল পরিবার থেকে, তাই শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে যখন কোন অ্যাকশন নেবার কথা ভাবে তখন তাদের মাঝে ইমোশনাল এবং এ্যাথিকাল বিষয় কাজ করে। উপরন্তু অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না থাকার কারনে তারা কোন পদক্ষেপ নিতে পারেনা। তাদের বিচার চাইবার ভাবনা উকিলের ঐ চেম্বারেই শেষ হয়ে যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা মামলা না করে ফেরত যান।  যে কয়জন নারী মামলা করেন একসময় তারা নানা জটিলতায় ক্লান্ত হয়ে, আদালত প্রাঙ্গণে চক্কর কাটতে কাটতে একসময় মামলা মোকাবেলা করার মত ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন।

তখন কেবল বেঁচে থাকাটাই মুখ্য হয়।

 

সারাবাংলা/ এসএস

 

 

আইন নারী ন্যায়বিচার

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর