মিডিয়ায় বডি শেমিংয়ের প্রতিবাদে ৩১ নারীবাদীর বিবৃতি
৭ অক্টোবর ২০২১ ১৩:৫৫
ঢাকা: সম্প্রতি লাইফস্টাইল বিষয়ক ম্যাগাজিন ‘ক্যানভাস’ ১৭ শতকের কবি ভারতচন্দ্র রায় গুণাকরের লেখা কবিতা ‘স্ত্রীজাতি কথন’কে সামনে রেখে ফটোশ্যুট ও ফিচার প্রকাশ করেছে। কবিতাটিতে বর্ণিত পদ্মিনী, হস্তিনী, চিত্রিণী ও শঙ্খিনী নারী কেমন হবে সেটিই তুলে ধরা হয়েছে লেখা ও ছবিতে। পুরো চিত্রায়নটিতে বডি শেমিং করার পাশাপাশি নারীর প্রতি চরম অবমাননাকর অভিহিত করে বিবৃতি দিয়েছেন ৩১ নারীবাদী অধিকারকর্মী। বিবৃতিতে নারীবাদীরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানান।
বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) গণমাধ্যমে পাঠানো ওই বিবৃতিতে বলা হয়, মূলধারার গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন কন্টেন্ট সরাসরি নারীর প্রতি চরম অপমান, অবমাননাকর ও অরুচিশীল। বিবৃতিতে অবিলম্বে ক্যানভাস কর্তৃপক্ষকে এই ফিচার প্রকাশের দায়ে ক্ষমা চাওয়ার ও ম্যাগাজিনের অনলাইন সংস্করণ থেকে লেখাটি তুলে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। সেইসঙ্গে, ভবিষ্যতে এ ধরনের সেক্সিস্ট, বডি শেমিংমূলক কন্টেন্ট প্রকাশ থেকে বিরত থাকতে সতর্ক থাকারও অনুরোধ জানানো হয়।
ক্যানভাসের পাশাপাশি দেশের সব গণমাধ্যমের প্রতি নারীর অগ্রযাত্রা, লিঙ্গ সমতা ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় আরও প্রগতিশীল ও সংবেদনশীল আচরণ করার আহ্বান জানান বিবৃতিদাতা ৩১ নারীবাদী অ্যাক্টিভিস্ট। এ উপলক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুটি হ্যাশট্যাগও চালু করেছেন তারা। হ্যাশট্যাগ দুটি হলো— #stop_body_shaming_in_media, #feminists_of_Bangladesh
কবিতাটিকে নারীর প্রতি চরম অসম্মানজনক হিসেবে আখ্যায়িত করে তারা বলছেন, ‘ভারতচন্দ্র রায় গুণাকরের তৎকালীন সামাজিক ও মানসিক চেতনার প্রেক্ষাপটে লেখা এই চরম পুরুষতান্ত্রিক, নারীবিদ্বেষী, ভোগবাদী কবিতাটিকে নতুন করে কেন সামনে আনা হলো, তা ভেবে দেখার প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। এর পেছনে কোনো পক্ষের কোনো সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য রয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখার রয়েছে। এই একবিংশ শতকে নারীর প্রতি চরম রেসিস্ট, বডি শেমিংভিত্তিক পদ্যটিকে মহিমান্বিত করে তুলে ধরার পেছনে কী উদ্দেশ্য থাকতে পারে একটি গণমাধ্যমের, এদেশের নারীরা তা জানতে আগ্রহী।’
নারীবাদী কর্মীরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বিবৃতিতে বলেন, ‘কোনো একটি অসৎ মহল অসৎ উদ্দেশ্যে নারীর অগ্রযাত্রা, কুপ্রথা ভাঙার লড়াই ও মাথা উঁচু করে চলার জন্য অর্জিত সাহস, মনোবল ও আত্মবিশ্বাসকে ভেঙে দিতে তৎপর হয়েছে। তাই নারীর প্রতি এ ধরনের মনোভাব পোষণকারী কবিতাকে নতুন করে সামনে এনে এই পুরুষতান্ত্রিক, ন্যক্কারজনক মনোভঙ্গি ও চেতনা তোষণকারী গণমাধ্যম ক্যানভাসের এ ধরনের আচরণের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছেন নারীবাদী আন্দোলনে সক্রিয় কর্মীরা।’
বিবৃতিতে তারা আরও বলেন, ‘প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যার অর্ধেক নারী হলেও লিঙ্গ সমতা ও বৈষম্যহীনতার লক্ষ্যে যে বৈশ্বিক যাত্রা তা থেকে এখনও অনেক পিছিয়ে এই বাংলাদেশ। দেশে নারীর প্রতি অবমাননা, নির্যাতন ও বঞ্চনা অপমানের যে করুণ চিত্র আমরা দেখতে পাই, তাতে খুব বেশি আশাবাদী হওয়ার কিংবা স্বপ্ন দেখার সুযোগ নেই। তবুও, এই নিদারুণ প্রতিকূলতার ভেতরেও, নারী পুরুষ ও সব লিঙ্গের মানুষের জন্য একটি সমতার পৃথিবী গড়তে এবং বৈষম্যহীন মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যার যার অবস্থান থেকে কাজ করছেন এদেশের নারীবাদীরা। এদেশে নারীবাদ আন্দোলন ধীরে এগুলেও বর্তমানে তা জোরালো হয়ে উঠছে। এই আন্দোলনের মূল লক্ষ্য নারীর প্রতি সকল অবিচার, অন্যায়, বৈষম্য ও অবমাননা দূর করা। আমাদের কুসংস্কারাচ্ছন্ন, গোঁড়ামিপূর্ণ সমাজে এই ধরনের মানবিক বোধ প্রতিষ্ঠা করা খুব কঠিন। তবু সেই কাজটি যে যার অবস্থান থেকে করে যাচ্ছেন।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা জানি, যে কোনো সমাজ বদলে একটি দেশের গণমাধ্যম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। লিঙ্গ বৈষম্য, নারীর প্রতি অবমাননা ও অবিচার দূরীকরণে গণমাধ্যমের প্রগতিশীল চিন্তা ও পদক্ষেপ সবসময়ই জরুরি। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে আমরা, বাংলাদেশে নারীবাদ আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত কর্মীরা লক্ষ্য করছি যে, বেশ কিছুকাল ধরেই এদেশের বেশ কিছু মূলধারার গণমাধ্যম নারীর প্রতি অবমাননাকর ফিচার, রিপোর্ট, ফটো ইত্যাদি প্রকাশ করে চলেছে। আমরা আতঙ্কিত হয়ে দেখছি যে, যেখানে ক্রমশ আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে চলবার কথা, সেখানে নানারকম কন্টেন্ট তৈরি ও প্রকাশ হচ্ছে মূলধারার গণমাধ্যমে, যে কন্টেন্টগুলো সরাসরি নারীর প্রতি চরম অপমান, অবমাননার পক্ষে অরুচিশীল বহিঃপ্রকাশ ছাড়া আর কিছুই নয়।’
যে নারীবাদী কর্মীরা এই বিবৃতি দিয়েছেন তারা হলেন-
১.সুপ্রীতি ধর
২.শারমিন শামস্
৩. কাবেরী গায়েন
৪. স্নিগ্ধা রেজওয়ানা
৫. ফারহানা হাফিজ
৬. কাশফিয়া ফিরোজ
৭. আফসানা কিশোয়ার লোচন
৮. তাসলিমা মিজি
৯. নাহিদ সুলতানা
১০. দিলশানা পারুল
১১. গীতি আরা নাসরিন
১২. প্রমা ইসরাত
১৩. লাকী আক্তার
১৪. অপরাজিতা সঙ্গীতা
১৫. মাহা মির্জা
১৬. ইশরাত জাহান ঊর্মি
১৭. নাহিদ আক্তার
১৮. কানিজ আকলিমা সুলতানা
১৯. ফুলেশ্বরী প্রিয়নন্দিনী
২০. শাশ্বতী বিপ্লব
২১. জান্নাতুন নাঈম প্রীতি
২২. নাহিদা আক্তার
২৩. অরণি আঞ্জুম
২৪. ফাহমিদা হানিফ ইলা
২৫. মেহেরুন নূর রহমান
২৬. ক্যামেলিয়া আলম
২৭. হাবিবা রহমান
২৮. মিতি সানজানা
২৯. বীথি সপ্তর্ষি
৩০. শাহাজাদী বেগম
৩১. মারজিয়া প্রভা
সারাবাংলা/আরএফ
কাবেরী গায়েন ক্যানভাস ক্যানভাস ম্যাগাজিন গীতি আরা নাসরিন তাসলিমা মিজি নারীবাদী অ্যাক্টিভিস্ট বডি শেমিংয়ের প্রতিবাদ বীথি সপ্তর্ষি মারজিয়া প্রভা মাহা মির্জা মিতি সানজানা লাকী আক্তার শারমিন শামস্ সুপ্রীতি ধর