Tuesday 03 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ডিজিটাল প্রযুক্তি ও বর্তমান বিশ্ব

মো. জাহিদুল ইসলাম
২ জুন ২০২৫ ১৪:২১

বর্তমান বিশ্ব নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে। আধুনিক বিশ্বে যে দেশ যত বেশি ডিজিটাল প্রযুক্তিতে উৎকর্ষ সাধন করেছে কিংবা করছেন বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় তারা তত বেশি এগিয়ে রয়েছেন। বর্তমান যুগে ডিজিটাল প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে সহজ ও কার্যকর করেছে। আমাদের বাক্তিগত এবং পেশাগত জীবনে ডিজিটাল প্রযুক্তি ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। ডিজিটাল প্রযুক্তি হলো এমন এক ধরনের প্রযুক্তি, যা তথ্য সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ, এবং ট্রান্সফার করতে ডিজিটাল ডাটা (বাইনারি কোড: ০ এবং ১) ব্যবহার করে। এই প্রযুক্তি ইলেকট্রনিক ডিভাইস এবং কম্পিউটার সিস্টেমের মাধ্যমে কাজ করে এবং একে খুব সহজে কম্পিউটার, স্মার্টফোন, ইন্টারনেট, স্যাটেলাইট, স্মার্ট ডিভাইস ইত্যাদির সাথে যুক্ত করা যায়। ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষ দ্রুত এবং দক্ষভাবে তথ্য আদান-প্রদান করতে পারে।

বিজ্ঞাপন

ডিজিটাল নেটওয়ার্ক হলো একটি যোগাযোগ ব্যবস্থা যেখানে তথ্য বা ডেটা ডিজিটাল সংকেত হিসেবে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পাঠানো হয়। মূলত ইন্টারনেট বা মোবাইল নেটওয়ার্কে আমরা যে তথ্য আদান-প্রদান করে থাকি তা সবই ডিজিটাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে হয়। বর্তমান আধুনিক বিশ্বে মানুষের জীবন এখন ডিজিটাল প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল। প্রযুক্তি মানুষের জীবনকে সহজ ও গতিশীল করে তুলেছে। ইন্টারনেট এবং মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে ব্যবসায়ীরা সহজেই তাদের পণ্য এবং সেবা বাজারজাত করতে পারছেন। বিভিন্ন ধরনের ই-কমার্স ওয়েবসাইটগুলো অনলাইনে মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করছেন। এছাড়া বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম ব্যবহার করে লেনদেন করা আরও সহজ হয়েছে। ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো দূরত্ব অনেক কমিয়ে এনেছে। মুহূর্তের মধ্যেই আমরা ফেইসবুক ও ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে সকলের আপডেট জানতে পারি।

আমরা বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করে অডিও, ভিডিওসহ অন্যান্য মিডিয়ার মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারি। করোনাভাইরাসের মহামারির সময়ে আমরা সবক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার স্পষ্টভাবে দেখেছি। অনলাইনে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রত্যেকটি কাজকর্ম থেকে শুরু করে বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে সব ধরনের যোগাযোগ সম্ভব হয়েছে একমাত্র ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমেই। বর্তমানে ডিজিটাল ইনফর্মেশন টেকনোলজির মাধ্যমে ব্যবসা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, এবং অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোতে যোগাযোগ ও তথ্য ব্যবস্থাপনা অনেক সহজ হয়েছে। এটি বিশ্বব্যাপী তথ্যের দ্রুত প্রবাহ নিশ্চিত করে থাকে। হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার, নেটওয়ার্কিং, এবং ডাটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের সমন্বয়ে ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি ডিজিটাল সেবাগুলো প্রদান করে থাকে। ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সফটওয়্যার, ই-কমার্স, ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, এবং কম্পিউটার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকেন। এই বিজনেস টেকনোলজির মাধ্যমে ব্যবসার কাজগুলো উন্নতভাবে করে ভালো সেবা দেওয়া হয় এই ডিজিটাল ইনফর্মেশন টেকনোলজির মাধ্যমে। ইআরপি (এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্ল্যানিং) সফটওয়্যার, সিআরএম (কাস্টমার রিলেশনশিপ ম্যানেজমেন্ট) সিস্টেম, এবং ডিজিটাল মার্কেটিংয় প্লানিং ইত্যাদি এগুলো হচ্ছে বিজনেস টেকনোলজির উদাহরণ।

ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের সকল কার্যক্রম অ্যাপ বা ওয়েবসাইটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। গ্রাহকরা কোনো ধরনের ফিজিক্যাল শাখায় যাওয়া ছাড়াই লেনদেন ও ঋণসহ সকল ধরনের ব্যাংকিং সেবা পেতে পারে ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। নানারকম সুযোগ-সুবিধার কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডিজিটাল ব্যাংকিং জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যবহারকারীরা যেকোনো সময়, যেকোনো অবস্থান থেকে তাদের অ্যাকাউন্টে প্রবশে করতে পারা, ব্যালেন্স চেক করা, তহবিল স্থানান্তর, বিল পরিশোধ এবং ঋণের জন্য আবেদন করার মতো বিস্তৃত কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারেন। ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের যেকোনো কার্যক্রমের জন্যই কখনও ফিজিক্যালি ব্যাংকে যাওয়া লাগে না। তাই অনেক সময় বেঁচে যায়। ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের আরেকটি সম্ভাবনাময় দিক হচ্ছে ক্যাশ টাকার ব্যবহার এড়িয়ে চলা। পুরোপুরি ক্যাশলেস সমাজ গঠনে ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের সহজলভ্যতা অপরিহার্য। ডিজিটাল লেনদেনে সক্ষম একটি ক্যাশলেস সমাজে আর্থিক ব্যবস্থাপনা আরও বেশি দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন হতে পারে। ডিজিটাল ব্যাংকিং একটা নতুন ধরনের সেবা। তাই এই ডিজিটাল প্লাটফর্মে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা জরুরি। না হলে মানুষের আস্থা আনা যাবে না।

অনলাইনে আর্থিক লেনদেনের সুযোগ থাকায় সবার জীবনযাত্রা অনেকটাই সহজ হয়ে গিয়েছে। বিকাশ, নগদ, রকেট, শিওরক্যাশ, ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড ইত্যাদি অনলাইন ব্যাংকিং সেবার কারণে আর্থিক লেনদেন জনসাধারণের জন্যে সহজ হওয়ায় এর গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেড়ে গিয়েছে। বর্তমানে আস্তে আস্তে অনেক কিছুই ক্যাশলেস হয়ে যাচ্ছে। এখন অনেকই কেনাকাটায় নগদ টাকার পরিবর্তে মোবাইল ফাইন্যান্সিং সার্ভিস ব্যবহার করেন। আবার অনেকে মোবাইল ফোনের কিউআর কোড স্ক্যান করে পেমেন্ট করে থাকেন। এভাবেই ব্যাংকের অনেক সেবা পুরোপুরি ডিজিটাল হয়ে যাচ্ছে। বর্তমান যুগে টাকাপয়সা লেনদেনের ক্ষেত্রে অনলাইন মাধ্যমগুলো অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বর্তমানে অনেকেই ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড কিংবা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অনলাইন লেনদেন করা হয়ে থাকেন। এসব লেনদেনের ক্ষেত্রে তথ্য ও অর্থের নিরাপত্তা একটি চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিরাপদ অনলাইন লেনদেন করতে হলে কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকা খুবই জরুরি। অন্যদিকে বর্তমান ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারে অনেকের দক্ষতার অভাব রয়েছে। এর পাশাপাশি প্রযুক্তি নির্ভর আধুনিক মোবাইল ফোন না থাকায় তাদের এ ধরনের ব্যাংকিংয়ের সেবা নেয়া কঠিন হয়ে পড়ছে । ডিজিটাল মাধ্যমের ঝুঁকি যেমন হ্যাকিং, ডেটা চুরির সম্ভাবনা, সাইবার আক্রমণ ইত্যাদি থাকে, আবার নন-ডিজিটাল মাধ্যমে যেমন ডাকব্যবস্থার বিলম্ব, তথ্যের ভুল স্থানান্তর, যোগাযোগের সীমাবদ্ধতা থাকে। এদিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় অসত্য তথ্য ছড়ানো, অনলাইন হয়রানি এবং সাইবার বুলিং-এর মতো সমস্যা ডিজিটাল প্রযুক্তির অপব্যবহারের উদাহরণ। ডিজিটাল প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে ব্যবহারকারীদেরকে প্রযুক্তির সুফল এবং কুফল সম্পর্কে স্বচ্ছ ও পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে। প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করা এবং সাইবার বুলিং-এর মতো অপব্যবহার থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে সকলকে সচেতন হতে হবে। তাই ডিজিটাল প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে ডিজিটাল দক্ষটা বৃদ্ধির প্রয়োজন। সেই সাথে সাইবার নিরাপত্তা ও প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এদিকে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা মানুষদের মধ্যে ডিজিটাল প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারনা কম। এগুলো মূলত ডিজিটাল বিভাজন সৃষ্টির কারণ।

এক্ষেত্রে ডিজিটাল বিভাজন দূর করতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন থেকে দূরে থাকা অর্থাৎ গ্রামীণ এলাকায় উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও ডিজিটাল সেবা নিশ্চিত করতে হবে। এসব অঞ্চলে বিনামূল্যে বা কম খরচে প্রযুক্তি শিক্ষা প্রদান করা খুবই জরুরী। দিন দিন ডিজিটালাইজেশনের অগ্রগতির সাথে সাথে সাইবার অপরাধও বাড়ছে। বিশ্বব্যাপী তথ্য চুরি ও অনলাইন জালিয়াতির মতো সমস্যা প্রায়ই দেখা যাচ্ছে। এই সমস্যা সমাধানে প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এনক্রিপশন, মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন, এবং নিয়মিত সিস্টেম আপডেট করা অত্যন্ত জরুরি। পাশাপাশি সাইবার অপরাধ দমন এবং আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে কঠোর হতে হবে। ডিজিটালাইজেশনের যুগে ডিজিটাল দক্ষতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। ডিজিটাল প্রযুক্তির অবদানে অনেক নতুন নতুন ব্যবসা-বাণিজ্যের আবির্ভাব হয়েছে। ডিজিটাল দক্ষতার প্রসারের মাধ্যমে বেকারত্ব দূর করা সম্ভব।

ডিজিটাল দক্ষতা বৃদ্ধি করতে ডিজিটাল টুলগুলোর ব্যবহার আয়ত্ত করে নিতে হবে। আধুনিক বিশ্বে মাইক্রোসফট অফিস, গুগল ডকস, এবং গুগল অ্যানালিটিকস এর মতো ইত্যাদি টুলগুলো ব্যবসায়ের কাজে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। বর্তমান যুগে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে সেলস ও মার্কেটিংয়ের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে খুব দ্রুত এবং সহজেই ব্যবসায়ের প্রচার ও প্রসার ঘটানো সম্ভব।

লেখক: নেটওয়ার্ক টেকনিশিয়ান (আইসিটি সেল), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

সারাবাংলা/এএসজি

ডিজিটাল প্রযুক্তি প্রযুক্তি ফিচার মো. জাহিদুল ইসলাম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর