Tuesday 24 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আজ ফেইরি ডে! কল্পনার জগতে স্বাগতম

ফারহানা নীলা
২৪ জুন ২০২৫ ১৪:৫৪ | আপডেট: ২৪ জুন ২০২৫ ১৪:৫৫

আমরা যারা গ্রামে বড় হয়েছি, তাদের শৈশবের অনেকটা সময় কেটেছে ঠাকুমা-নানুর মুখে শোনা রূপকথার জগতে।

ঝোপের মধ্যে পরী থাকে, বাঁশঝাড়ের ওপারে আলোর রূপসী দেখা যায়, আর গভীর রাতে আকাশ ভেঙে কোনো ‘জাদুর পাখি’ নেমে আসে—এমন সব গল্প ছিল আমাদের বড় হওয়ার অক্সিজেন। সেরকমই আজ একটু ছোট্ট পরীর কথা ভাবুন। কারন আজ ক্যালেন্ডারের আর দশটা দিনের মতো সাধারণ মনে হলেও, আজকের দিনে রয়েছে একটু জাদুকরী ছোঁয়া! কারণ আজ ‘ইন্টারন্যাশনাল ফেইরি ডে’ — মানে, রূপকথার পরীদের নিয়ে বিশেষ দিন! প্রতিবছর ২৪ জুন এই দিবসটি পালন করা হয়।

হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন। আজকের দিনটা রূপকথা, জাদু, চকচকে ডানাওয়ালা ছোট ছোট পরী আর তাদের দুষ্টুমিপূর্ণ জগতকে উৎসর্গ করা হয়েছে। পশ্চিমা দেশে এ দিনটি মূলত ‘Fairy’ বা রূপকথার ছোট ডানাওয়ালা জাদুকরী প্রাণীদের উদযাপন করে।

বিজ্ঞাপন

ফেইরি বলতে আমরা কী বুঝি?

পরী বা ফেইরি হচ্ছে সেইসব ছোট্ট জাদুকরী প্রাণী যারা বনের ভিতর থাকে, ফুলের মাঝে ঘুমায়, আর ঝিকিমিকি আলো ছড়িয়ে রাতের বেলায় উড়ে বেড়ায়।

এরা কারো ইচ্ছা পূরণ করে, দুষ্টুদের শাস্তি দেয়, আর মাঝে মাঝে কানের পাশ দিয়ে হেসে উড়ে যায়—আপনি শুধু হাওয়া টের পান, ওদের দেখা না পেলেও!

এই দিবস কেমন করে এলো?

এই দিবসের সূত্রপাত হয় মূলত ফ্যান্টাসি প্রেমিকদের হাত ধরে। রূপকথা, মিথ আর ফ্যান্টাসি সাহিত্যে যারা আগ্রহী, তারা ২৪ জুনকে নিজেদের কল্পনার ছোট্ট বন্ধুদের জন্য উৎসর্গ করেন। ধীরে ধীরে এটি মজার, আনন্দের ও বাচ্চাদের প্রিয় একটি দিবসে পরিণত হয়।

কিন্তু আমাদের বাংলাদেশের কল্পনা কি তাতে পিছিয়ে?

বাংলাদেশের ‘পরী’ সংস্কৃতি

আমাদের পরীরা শহুরে ফেইরিদের মতো নয়। ওরা থাকে পুকুরপাড়ে, বটগাছে, চাঁদের দেশে বা রাতের স্বপ্নে। ‘এক যে ছিল রাজা, এক যে ছিল রানী…’ দিয়ে শুরু হওয়া সব গল্পেই তো ছিল একটা পরী, যার হাতে একটা জাদুর কাঠি বা ছোঁয়ায় ঘোড়া হতো পাখা দেওয়া উড়ুক্কু!

আজও বাংলাদেশের গ্রামের অনেক ঘরে সন্ধ্যার পর শিশুরা জ্বিন, পরী, রাক্ষস আর রাজকুমারীর গল্পে বিভোর হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।

শহুরে শিশুরা কোথায় পায় পরী?

স্মার্টফোনে ‘টিঙ্কারবেল’ দেখে তারা। ইউটিউবে রঙিন কার্টুনে পরীরা উড়ে বেড়ায়।
কিন্তু একটা খেয়াল করলেই বোঝা যায়, এই ডিজিটাল যুগেও বাচ্চারা এখনো ‘পরী’ শব্দটা শুনলে চোখ বড় করে বলে— ‘ওটা কি আসলেই আছে?’

তাদের জন্য আজকের দিন একটা সুযোগ—জাদুতে বিশ্বাস ফিরিয়ে আনার দিন।
একটা ছোট ডানা বানিয়ে দিন, তারা নিজেই হয়ে যাক ‘বাংলার পরী!’

কীভাবে পালন করা যায় ফেইরি ডে?

পরীর মতো সাজুন – একটা ছোট্ট টিয়ার্ড স্কার্ট, মাথায় ফুলের মুকুট আর পিঠে ডানা—বাহ্! আপনি তো একেবারে পরী হয়েই গেলেন!

পরীর গল্প পড়ুন – বাচ্চাদের নিয়ে বসে গল্পের বই খুলে ফেলুন— ‘টিঙ্কারবেল’, ‘সিন্ডারেলা’, ‘পিটার প্যান’–কোনটায় পরী নেই বলুন?

পরীর চিঠি লিখুন – হ্যাঁ, আপনার ইচ্ছাগুলো লিখে একটা ছোট্ট কাগজে রেখে দিন বালিশের নিচে। কে জানে, রাতের বেলা সত্যিকারের কোনো পরী পড়ে ফেলতে পারে!

পরীর কেক বা কুকি বানান – রঙিন আইসিং, চকচকে ছিটা, আর গোলাপি ক্রিম—দেখলেই মনে হবে পরীর রান্নাঘর থেকে উঠে এসেছে!

কীভাবে বাংলাদেশে উদযাপন করা যায় এই দিনটি?

স্কুলে ছোট্ট ‘ফেইরি সাজো’ প্রতিযোগিতা
গ্রন্থাগারে পরীর গল্প পাঠের আসর
মা-বাবা মিলে সন্ধ্যায় পরীর গল্প বলা
চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় ‘আমার কল্পনার পরী’
বইমেলা বা শিশু দিবসে ‘বাংলাদেশি ফোক ফেইরি’ থিমে স্টল সাজানো

পরী কি সত্যিই আছে?

এই প্রশ্নের উত্তর আপনি নিজেই খুঁজে নিন! কারণ কল্পনা যেখানে শেষ হয়, ঠিক সেখান থেকেই তো পরীদের শুরু। কেউ দেখে না মানেই তারা নেই—এমনটা কে বলল?

আপনি যদি বিশ্বাস করেন, যদি একটা ফুলের পাপড়িতে কোনো পরীর পদচিহ্ন কল্পনা করতে পারেন—তাহলেই তারা আসল। আর যদি মন থেকে না বিশ্বাস করেন, তবে তারা থাকবে ঠিক আপনার চোখের এক ইঞ্চি সামনে—তবুও আপনি দেখতে পাবেন না।

‘পরী’ কি আজকের বাস্তবতায় ফেলে দেওয়ার বিষয়?

না! ‘পরী’ মানে কেবল জাদুর গল্প নয়—এ এক চাপমুক্ত, কল্পনায় ডুবে থাকা এক আত্মার বিশ্রাম। যে দেশে শিশুদের পরীক্ষার ভয়, কর্পোরেট দুনিয়ার চাকরি-চাকরি খেলা, আর যান্ত্রিক শহুরে জীবন ক্লান্ত করে তোলে— সেই দেশে পরী মানে ছোট্ট একটা বাঁচার আনন্দ।

আজকের দিনটা একটু আলাদা। বাস্তবের খবর, হিসাব-নিকাশ, ব্যস্ততা ভুলে আজ চলুন ছোটদের মতো কল্পনায় ডুব দিই।

হোক না আজকের রাতটা একটু জাদুময়…
হয়তো আজ রাতেই জানালার ধারে উড়ে এসে বসবে একটা ছোট্ট পরী। আপনি কি তৈরি?

সারাবাংলা/এফএন/এএসজি

কল্পনার জগত ফেইরি ডে