একটা সময় ছিল, ছবি তোলার মানেই ছিল উৎসব। ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালে সবাই যেন হঠাৎ করে ‘মডেল মোডে’ ঢুকে যেত! কেউ নাক সোজা করত, কেউ চুল ঠিক করত, কেউ আবার বলত— ‘না না, আমি মোটা হয়ে আসি!’
২৯ জুন ক্যামেরা দিবস। ছবি তোলার সেই যাদুকর যন্ত্রটিকে স্যালুট জানানোর দিন। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে আমরা যখন হাজার হাজার সেলফি তুলতে পারি, তখন ভাবতেই কষ্ট হয়— একটা সময় ছবি তোলার জন্য মাস খানেক অপেক্ষা করতে হতো!
ক্যামেরার দিনলিপি _
প্রথম দিকে ক্যামেরা ছিল রীতিমতো ‘বাহারি ডিভাইস’— বোঝাই যেত কারও বাসায় ক্যামেরা থাকলে সে বেশ ধনী। সেই বক্স ক্যামেরা থেকে শুরু করে এখনকার স্মার্টফোন— সবই আসলে ক্যামেরার বিবর্তনের গল্প। এখন তো প্রায় প্রতিটা মোবাইলই হয়ে উঠেছে ‘ফুল টাইম ফটোগ্রাফার’!
ছবি মানেই গল্প _
ছবি মানেই তো একটা মুহূর্তকে ধরে রাখা— যেটা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে যেত। একটা পুরনো ফটো অ্যালবাম খুললেই তো দেখা মেলে দাদুর বিয়ের সময়কার বাঁশি বাজানো ভাইয়ের ছবি, বা বাবার স্কুল জীবনের ফুটবল টিমের ছবি। তখন ছবি মানেই ছিল— নস্টালজিয়া!
সেলফি যুগের ক্যামেরা _
আজকাল আর কাউকে অনুরোধ করতে হয় না, ‘ভাইয়া, একটা ছবি তুলে দিবেন?’ এখন সব নিজের হাতে— নিজেই ক্লিক, নিজেই এডিট, নিজেই পোস্ট! কেউ কেউ ক্যামেরার অ্যাঙ্গেল এমনভাবে বুঝে গেছেন, দেখে মনে হয় তারা জন্ম থেকেই ক্যামেরা ফ্রেন্ডলি!
কবে থেকে শুরু?
যদিও এর নির্দিষ্ট সূচনাবর্ষটি নিয়ে কোনো সরকারি রেকর্ড নেই, তবে এই দিবসটি ২০০০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে অনানুষ্ঠানিকভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, বিশেষ করে ফটোগ্রাফি কমিউনিটি এবং সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের মধ্যে। ধীরে ধীরে এটি একটি আন্তর্জাতিক দিবসে রূপ নেয়।
কেন উদযাপন করা হয়?
এই দিবসটির মূল উদ্দেশ্য—ক্যামেরার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলো সংরক্ষণ করার সক্ষমতা উদযাপন করা।
বাংলাদেশে এই দিনটি _
বিশ্বজুড়ে এই দিনটি ক্যামেরার অবদানকে স্মরণ ও উদযাপন করার দিন। যদিও এটি মূলত পশ্চিমা দেশগুলোতে শুরু হয়েছিল, এখন এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশেও। বিশেষ করে ফটোগ্রাফি, মিডিয়া, ও ডিজিটাল কনটেন্টের যুগে।
বাংলাদেশেও ক্যামেরা এখন শুধু ছবি তোলার যন্ত্র নয়— এটি প্রতিবাদের হাতিয়ার, শিল্পচর্চার মাধ্যম এবং স্মৃতির বাহক।
বাংলাদেশে ক্যামেরার প্রথম উপস্থিতি _
ব্রিটিশ আমলেই ক্যামেরার আগমন বাংলাদেশে। তখন রাজপরিবার, জমিদার পরিবার এবং সংবাদপত্র অফিসে ছবি তোলার চল ছিল। পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশে, ৭০ ও ৮০-এর দশকে— ফিল্ম ক্যামেরার জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। কেউ ঈদের জামা পরলে ফটোস্টুডিওতে গিয়ে ছবি তুলত, সেটা একপ্রকার ইভেন্ট হয়ে দাঁড়াত।
ফটোস্টুডিওর দেয়ালে ঝোলানো ‘দাঁড়িয়ে থাকা ছবি’, কাঁধে ক্যামেরা নিয়ে গ্রামাঞ্চলে যাওয়া ঘুরন্ত ফটোগ্রাফার— সবই সেই সময়ের ক্যামেরার রোমান্টিক অধ্যায়।
ডিজিটাল ক্যামেরা ও স্মার্টফোনের যুগে রূপান্তর _
২০০০ সালের পর ক্যামেরা গণমানুষের হাতে চলে আসে। ডিজিটাল ক্যামেরা এবং পরে স্মার্টফোনের মাধ্যমে ক্যামেরা হয়ে ওঠে ঘরের অংশ। এখন একটি মাধ্যম নয়, বরং জীবনযাপনের শৈলী।
বাংলাদেশি তরুণ সমাজ ইউটিউব, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টিকটক ভিডিওতে ক্যামেরাকে ব্যবহার করে নিজেদের গল্প বলছে, সমাজের বাস্তবতা তুলে ধরছে, আবার অনেকেই আন্তর্জাতিক পুরস্কার জিতছে তাদের অসাধারণ ফটোগ্রাফির জন্য।
স্মার্টফোন আসার আগে ক্যামেরা ছিল একমাত্র মাধ্যম, যার মাধ্যমে আমরা বিয়ের, ঈদের, জন্মদিনের, বা স্কুল জীবনের স্মৃতিগুলো ধরে রাখতে পারতাম। ক্যামেরা শুধু যন্ত্র নয়, এটি এক একটি টাইম মেশিন— যা আমাদের নিয়ে যায় ফেলে আসা সময়ের কোলে।
এছাড়াও এই দিনটি ফটোগ্রাফারদের, ভিজ্যুয়াল স্টোরিটেলারদের, এবং স্মৃতিকে ভালোবাসা মানুষদের অনুপ্রাণিত করে— নতুন করে ফ্রেমে বন্দি করতে জীবনের গল্পগুলো।
ক্যামেরা দিবসে করণীয় _
পুরনো অ্যালবামটা খুলে বসুন, হারানো স্মৃতিগুলো রিফ্রেশ করুন।
পছন্দের কিছু ছবি প্রিন্ট করে নিজের রুমে সাজিয়ে ফেলুন।
আজ অন্তত একটা ছবিতে ‘না, আমি ভালো আসি না’ বলবেন না!
ক্যামেরা শুধু ছবি তোলে না, সময়কেও ধরে রাখে। হাসি, কান্না, আনন্দ, ভালোবাসা— সবটাই ফ্রেমবন্দি করে রাখে চিরতরে। ক্যামেরা দিবসে তাই ক্যামেরা হাতে একটা মিষ্টি হাসির ছবি তুলে দিনটাকে স্মরণীয় করে তুলুন।