যখন আমরা শহরের আরামদায়ক কফি শপে বসে প্রকৃতি রক্ষার গল্প শুনি, তখনও কোনো এক পাহাড়ি এলাকায় অগ্নিসংযোগে জ্বলছে বিস্তীর্ণ বনভূমি। আর সেই আগুনের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছেন কিছু মানুষ, যাদের নাম আমরা কখনও শুনিনা— তারা বন্য আগুন নিবারক, তারা প্রকৃতির নীরব বীর।
আজ, ২ জুলাই, বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে ‘বন্য আগুন নিবারক দিবস’ বা National Wildland Firefighter Day। এই দিনটি সেই সব ফায়ারফাইটারদের প্রতি সম্মান জানাতে উদযাপিত হয়, যারা বনভূমির আগুন নিয়ন্ত্রণে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধ করেন।
তাদের যুদ্ধে গোলা-বারুদ নয়, থাকে পানির পাইপ আর নিঃশ্বাস কাঁপানো সাহস।
বন্য আগুন যখন ছড়িয়ে পড়ে, তখন সেটা শুধু একটি গাছের মৃত্যু নয়— একটি বাস্তুতন্ত্রের ধ্বংস, হাজারো প্রাণীর ঘরছাড়া হয়ে যাওয়া। এই আগুন থামাতে যে মানুষগুলো দিনরাত কাজ করেন, তাদের কাজটা শুধু শারীরিকভাবে কঠিন নয়, মানসিকভাবেও এক ভয়ংকর চ্যালেঞ্জ। তারা প্রতিদিনের অনিশ্চয়তার মধ্যেই কাজ করেন— জানেন না কখন দিক বদলাবে আগুন, কখন ছড়িয়ে পড়বে আরও ভয়ঙ্করভাবে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও দিনটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে
যদিও বাংলাদেশে এখনও বৃহৎ পরিসরে বন্য আগুন নিবারক বাহিনী নেই, তবে সুন্দরবন, পার্বত্য চট্টগ্রাম কিংবা সিলেটের রেইনফরেস্ট এলাকায় মাঝে মাঝে যে ধরনের আগুন লাগে, সেগুলো নিবারণে স্থানীয় বন বিভাগের কর্মীরা অনেক সময় নিজের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে কাজ করেন। দুঃখের বিষয়, তাদের ত্যাগ আমরা তেমনভাবে জানি না, জানলেও ভুলে যাই।
এই দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয়—প্রকৃতিকে বাঁচাতে যাঁরা ঝুঁকি নেন, তাদের স্বীকৃতি ও সুরক্ষা কতটা প্রয়োজন।
এই দিনে আমরা কী করতে পারি?
একটি সোশ্যাল পোস্ট দিয়ে তাদের সম্মান জানানো,
বনভূমি রক্ষা ও অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে সচেতনতা ছড়ানো,
বন আগুনের কারণ ও প্রতিকার নিয়ে শিখে নেওয়া,
সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের জন্য উন্নত নিরাপত্তা ও প্রশিক্ষণের দাবি তোলা।
বন্য আগুন শুধু গাছের শত্রু নয়, মানবতারও এক মৌন সংকট। আর এই আগুনের বিরুদ্ধে যারা রুখে দাঁড়ান, তারা নীরব যোদ্ধা।
আজকের এই দিনে, তাদের গল্পগুলো ছড়িয়ে দিই, সম্মান জানাই। কারণ তারা শুধু আগুন নেভান না, তার চেয়েও বেশি কিছু— তারা জীবন রক্ষা করেন।