Monday 07 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভ্যাটিকান সিটি: যে দেশে ১০০ বছরেও জন্মায়নি কোনো শিশু!

সারাবাংলা ডেস্ক
৭ জুলাই ২০২৫ ১৯:২৮

একটা দেশ, যার কোনো হাসপাতাল নেই। নেই মাতৃসদন বা প্রসূতিবিভাগ। এমনকি গত শতাব্দীজুড়ে জন্ম নেয়নি একটি শিশুও।
বিষয়টি শুনলে রূপকথা মনে হতে পারে, কিন্তু বাস্তবে পৃথিবীতে সত্যিই রয়েছে এমন একটি দেশ—ভ্যাটিকান সিটি।

বিশ্বের ক্ষুদ্রতম রাষ্ট্র

ইতালির রোম নগরীর বুকে অবস্থিত এই দেশটির আয়তন মাত্র ১১৮ একর—অর্থাৎ একটি মাঝারি মানের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের চেয়েও ছোট! জনসংখ্যা প্রায় ৮০০ থেকে ৯০০ জন, যাদের বেশিরভাগই ধর্মযাজক, বিশপ, কার্ডিনাল ও নিরাপত্তা সদস্য। এটি শুধু বিশ্বের সবচেয়ে ছোট রাষ্ট্র নয়, বরং খ্রিস্টান বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় কেন্দ্র হিসেবেও বিবেচিত।

বিজ্ঞাপন

একটি গির্জার দেশ

১৯২৯ সালে ল্যাটেরান চুক্তির মাধ্যমে ভ্যাটিকান সিটি একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। এই রাষ্ট্রের প্রধান হলেন পোপ—বিশ্বব্যাপী রোমান ক্যাথলিকদের আধ্যাত্মিক নেতা। ভ্যাটিকান কোনো সাধারণ রাষ্ট্র নয়—এটি একাধারে একটি গির্জা, একটি ধর্মীয় কেন্দ্র এবং একটি প্রতীকী রাষ্ট্র।

হাসপাতাল নেই, শিশুও নেই

ভ্যাটিকান সিটিতে আজ পর্যন্ত কোনো শিশুর জন্ম হয়নি।
এর পেছনে রয়েছে একাধিক কারণ—

হাসপাতালের অনুপস্থিতি:
দেশটিতে কোনো হাসপাতাল নেই। ফলে প্রসূতি বা গর্ভবতী নারীদের চিকিৎসার জন্য ইতালির রোমে যেতে হয়।

ধর্মযাজকদের আবাসস্থল:
এখানকার স্থায়ী বাসিন্দাদের মধ্যে অধিকাংশই পাদ্রী বা সন্ন্যাসী, যাদের পারিবারিক জীবন নেই। ফলে স্বাভাবিকভাবেই জন্মহার শূন্য।

নাগরিকত্বের চরিত্র:
ভ্যাটিকানের নাগরিকত্ব জন্মসূত্রে নয়; বরং এটি দেয়া হয় নির্দিষ্ট ধর্মীয় বা প্রশাসনিক দায়িত্বের জন্য। দায়িত্ব শেষ হলে সেই নাগরিকত্বও প্রত্যাহার করা হয়।

এই ব্যতিক্রমী কাঠামোর ফলে ১৯২৯ থেকে ২০২৫— প্রায় এক শতক ধরে দেশটির মাটিতে কোনো নবজাতকের কান্না শোনা যায়নি।

পর্যটকের ভিড়, অপরাধের ছায়া

প্রতিদিন ভ্যাটিকানে পা রাখেন হাজারো পর্যটক। সেন্ট পিটার্স বাসিলিকা, ভ্যাটিকান জাদুঘর এবং সিস্টিন চ্যাপেল— এইসব নিদর্শন ঘিরে ঘুরপাক খায় ইতিহাস ও বিশ্বাস।

তবে আশ্চর্যজনকভাবে, এত ছোট একটি দেশে অপরাধের হার তুলনামূলক বেশি। এর কারণ হলো পর্যটকদের ভিড়ের মধ্যে ছিনতাই, পকেটমারি ও চুরি বেড়ে যাওয়া। স্থানীয়রা এজন্য দায়ী করেন বাইরের আগত মানুষদের।

বিশ্বের সবচেয়ে ছোট রেলওয়ে স্টেশন

আরও একটি ব্যতিক্রম রয়েছে ভ্যাটিকানের নামের পাশে— এখানেই অবস্থিত বিশ্বের সবচেয়ে ছোট রেলস্টেশন, যার নাম Città del Vaticano। মাত্র ৩০০ মিটার লম্বা দুইটি রেললাইন রয়েছে, যা শুধুই পণ্য পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত হয়। যাত্রী পরিবহন এখানে হয় না।

জন্মহীন একটি দেশ: কী বার্তা দেয়?

ভ্যাটিকান সিটি এমন এক রাষ্ট্র, যেখানে সম্ভবত আগামী বহু বছরেও কোনো শিশুর জন্ম হবে না। এটি কেবল একটি পরিসংখ্যান নয়— এটি একটি দর্শন, একটি জীবনব্যবস্থার প্রতিফলন। যেখানে গোটা পৃথিবী জন্মহার নিয়ে চিন্তিত, খাদ্য ও চিকিৎসা নিয়ে দিশেহারা— সেখানে ভ্যাটিকান এক অনন্য ব্যতিক্রম।

এ যেন সভ্যতার মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা এক নীরব, নির্জন অধ্যায়। যেখানে শিশুর কান্না নেই, কিন্তু প্রার্থনার গুঞ্জন আছে।

সারাবাংলা/এফএন/এএসজি

ভ্যাটিকান সিটি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর