এই শহরে আমরা দৌড়াই প্রতিদিন। সময়ের পেছনে, দায়িত্বের পেছনে, জীবনের এক অদৃশ্য লক্ষ্যকে ছুঁতে ছুঁতে হাঁপিয়ে উঠি কখন যেন। এমন এক ক্লান্ত দুপুরে যদি কারও চুপিসারে বলা শোনা যেত— ‘একবার শুধু দিগন্তের দিকে তাকাও’, কেমন হতো?
আজ ৯ জুলাই। অনানুষ্ঠানিকভাবে পালিত হচ্ছে ‘Call of the Horizon Day’ — এমন একদিন, যেদিন মানুষ নিজেকে মনে করায় যে প্রকৃতি এখনো পাশে আছে, ডাকছে… একটু বাইরে এসো।
কেন এই দিনটি এত গুরুত্বপূর্ণ?
প্রকৃতির কাছে ফিরে যাওয়া—শুধু শরীরের বিশ্রাম নয়, মনেরও আরাম। এই দিনটি কোনো রাজনৈতিক বার্তা দেয় না, কোনো বড় আন্দোলনের দাবিও করে না। শুধু বলে, ‘তুমি অনেক ব্যস্ত, কিন্তু একটু থেমে দাঁড়ালে ক্ষতি কী?’
বিশ্বজুড়ে ২০১১ সাল থেকে দিবসটি পালিত হচ্ছে, যদিও খুব নীরবে। কোন জাঁকজমক নেই। নেই কোনো রঙিন ব্যানার। তবু যারা বুঝেছে, তারা জানে — এই দিনে আকাশটা একটু বেশি নীল মনে হয়, বাতাসটা একটু বেশি মমতা নিয়ে বয়ে যায়।
এর সূচনা হয় ২০১১ সালে, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় একটি ছোট পরিবেশপ্রেমী সংগঠনের উদ্যোগে। প্রথমে এটি ছিল এক ধরনের সামাজিক প্রচারণা — ‘তোমার নীল দিগন্ত কোথায়?’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে তারা উৎসাহিত করতেন মানুষকে শহর ছেড়ে প্রকৃতির কাছে যাওয়ার জন্য।
ধীরে ধীরে এটি একটি বার্ষিক ‘নেচার রিমাইন্ডার ডে’-তে রূপ নেয়, যা বিশ্বের নানা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। যদিও মূলধারার মিডিয়াতে এর প্রচার কম, তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবার ৯ জুলাই-এ #CallOfTheHorizon হ্যাশট্যাগে ঝড় ওঠে।
আমাদের দেশে এই দিনের আলাদা একটা মানে আছে _
আমাদের দেশে ‘দিগন্ত’ মানে কেবল আকাশ আর মাটির মিলনরেখা নয়, মানে শান্তির খোঁজ।
সুনামগঞ্জের হাওরে দাঁড়িয়ে দেখা যায় এক অনন্ত নীল জলরাশি — যেন নিজেকেই ফিরে পাওয়া।
সাজেকের পাহাড় যখন মেঘে ঢেকে যায়, তখন মনে হয়, পৃথিবীটা এমনিই সুন্দর ছিল।
কুয়াকাটার সৈকত, যেখানে সূর্য ওঠে আর ডোবে — সেখানে দাঁড়িয়ে থাকলে শহরের সব শব্দ নিঃশব্দ হয়ে যায়।
এই দিনটি কিভাবে পালন করা হয়?
এই দিনে কেউ বেরিয়ে পড়েন প্রকৃতির দিকে — হয়তো একা, হয়তো প্রিয় কারও হাত ধরে।
কেউ হয়তো শহরের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে কফির কাপ হাতে দিগন্তে তাকিয়ে থাকেন।
কেউ ফোনটা বন্ধ করে রাখেন সারাদিন, যেন বাইরের পৃথিবীর বদলে নিজের ভিতরের শব্দ শুনতে পান।
এই দিনের মূল উদ্দেশ্য _
প্রযুক্তিনির্ভর ও যান্ত্রিক জীবনে ব্যস্ত মানুষের মধ্যে প্রকৃতির গুরুত্ব তুলে ধরা।
মানসিক শান্তি ও ভারসাম্যের জন্য দিগন্তের প্রশান্ত দৃশ্যকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া।
ব্যক্তিগত সময় ও অন্তর্দর্শনের মূল্যবোধ বাড়ানো।
শহুরে জীবনের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে সৃজনশীলতা ও জীবনের আসল সৌন্দর্য খুঁজে পাওয়ার অনুপ্রেরণা দেওয়া।
একটা ছোট্ট অনুরোধ _
আজ না হয় একটু সময় নিয়ে দিগন্তের দিকে তাকাই। হয়তো পাখির ডাক শুনব, হয়তো গোধূলির আলোয় মায়া জাগবে মনে।
হয়তো বুঝে যাব—জীবনটা এত জটিল নয়, আমরা একটু জট পাকিয়ে ফেলেছি।