একটা ছোট্ট পোকা— ঝিনঝিনে ডানার শব্দ করে উড়ে আসে ফুলের কাছে। পরাগ জমায়, মধু জমায়, জীবন জমায়। সে মৌমাছি। অথচ আমাদের চোখে সে কেবলই একটা কামড়ানো প্রাণী— যার ভয় থেকে নিজেকে রক্ষা করতেই আমরা অনেক সময় না ভেবেই পা ফেলি তার ওপর। কিন্তু এ পৃথিবীতে, তারও অবদান রয়েছে অনেক।
মৌমাছির অবদান _
মৌমাছি শুধু মধু দেয় না, দেয় জীবন।
আমাদের পরিচিত সবজি, ফলমূল, ফুল—এসবের পেছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে এই ক্ষুদ্র পতঙ্গ। পরাগায়ন (Pollination) নামের প্রক্রিয়ায় মৌমাছি এক ফুল থেকে আরেক ফুলে পরাগ বয়ে নিয়ে গিয়ে ফল ও বীজ উৎপাদনে সহায়তা করে।
জাতিসংঘের এক তথ্যমতে, পৃথিবীর ৭৫% খাদ্যশস্য মৌমাছি ও অন্যান্য পরাগবাহীর ওপর নির্ভরশীল। আর বাংলাদেশে যেহেতু কৃষিই প্রধান ভিত্তি—তাই মৌমাছির অবদান এখানে আরও তাৎপর্যপূর্ণ।
দিন দিন কমে যাচ্ছে মৌমাছি _
গ্রামীণ এলাকায় এখনো প্রচুর মৌচাক দেখা যায়। তবে নগরায়ন, রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহার ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মৌমাছির সংখ্যা দিন দিন কমছে। শহরের পরিবেশে ফুল-ফলের গাছ কমে যাওয়া, টিলাভূমি বা বনভূমি হারিয়ে যাওয়া, এমনকি মোবাইল টাওয়ার থেকে নির্গত রেডিয়েশন— সবই মৌমাছির জীবনঘাতী পরিবেশ তৈরি করছে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় এখনো মৌচাষ (Beekeeping) হয়— বিশেষ করে সুন্দরবন অঞ্চলে, দিনাজপুর, নওগাঁ, সিলেট ও মধুপুর এলাকায়। তবে চাষের পাশাপাশি প্রাকৃতিক মৌচাক ও মৌমাছির সংখ্যা রক্ষাও জরুরি হয়ে উঠেছে।
মৌমাছি মানেই ভয় নয়
শিশুরা অনেক সময় মৌমাছি দেখলেই ভয় পায়, পাথর ছুড়ে মারে বা পিষে ফেলে। অথচ তারা জানেই না, এই ছোট্ট প্রাণীটির ঘামেই আমরা মধু খাই, আর তার উড়ে চলায়ই ফুটে ওঠে ফলফলাদি। স্কুলে বা বইয়ের পাতায় মৌমাছি সম্পর্কে বেশি করে গল্প, ছড়া বা সচেতনতা থাকা দরকার।
আমরা কী করতে পারি _
বাগানে বা বারান্দায় মৌমাছি-বান্ধব গাছ লাগাতে পারি (যেমন: ধনে, সরিষা, সূর্যমুখী)।
অকারণে মৌচাক ভাঙা বা পাথর ছুঁড়ে মারা থেকে বিরত থাকি।
কীটনাশকের বদলে পরিবেশবান্ধব কৃষির প্রতি জোর দিই।
শিশুদের নিয়ে ‘Bee Day’ উপলক্ষে মধু সংগ্রহের ভিডিও দেখানো, মৌমাছি নিয়ে গল্প বলা বা ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা আয়োজন করা যায়।
মৌমাছির মৃত্যুর মধ্যেই লুকিয়ে আছে জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের অশনি সংকেত। একটি মৌমাছির জীবন হয়তো খুব ক্ষুদ্র, কিন্তু তার কাজের গুরুত্ব পুরো পৃথিবী জুড়ে বিশাল। তাই ছোট্টো এই পোকাটি রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য।