Monday 03 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শিক্ষায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাব: আশীর্বাদ না অভিশাপ?

সানজিদা যুথি সিনিয়র নিউজরুম এডিটর
২২ জুলাই ২০২৫ ১৮:৪৬

স্কুল জীবনের অংক কিংবা ইতিহাসের বই দেখে ভয় পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা নেহাতই কম নয়। অংকের জটিল সূত্র, ইতিহাসের দীর্ঘ ঘটনার পরম্পরা, ইংরেজি সাহিত্যের গভীর বিশ্লেষণ— সবকিছুই যেন শিক্ষার্থীদের জন্য একেকটা ‘ভয়ের ঘর’। এসব বিষয়ে দক্ষতা অর্জনের জন্য আগে যেমন পরিশ্রম করতে হতো, ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে পড়তে হতো বই— এখন সেই দৃশ্য অনেকটাই বদলে গেছে।

কারণ? – কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই।

বর্তমানে নানা আন্তর্জাতিক ও দেশীয় সমীক্ষা বলছে, শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ প্রতিদিনই এআই ব্যবহার করছে পড়াশোনার কাজে। স্কুল বা কলেজের অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি হোক, পরীক্ষার প্রস্তুতির নোট হোক, এমনকি প্র্যাকটিক্যাল খাতার আঁকা ছবি— সবকিছুই এখন তৈরি হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায়।

বিজ্ঞাপন

চ্যাটজিপিটি, কোয়িজলেট, পিকটোরি, ক্যানভা, এবং মাইক্রোসফট কপাইলটের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো শিক্ষার্থীদের দ্রুত ও সহজে কাজ সম্পন্ন করতে সাহায্য করছে। কেউ কেউ বলছে, এটি শিক্ষার democratization—অর্থাৎ সহজে সবার কাছে শিক্ষার পথ উন্মুক্ত করে দিচ্ছে।

কিন্তু প্রশ্ন উঠছে—এটা কি শুধুই আশীর্বাদ? নাকি এর ছায়ায় লুকিয়ে আছে কোনো অশনি সংকেত?

সমস্যার দিকগুলো কী?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রযুক্তির অতিনির্ভরতা শিক্ষার্থীদের নিজস্ব বিশ্লেষণী ও গবেষণাধর্মী চিন্তা থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।

মুখস্থ না করেই ‘ভালো’ উত্তর লিখে ফেলছে শিক্ষার্থীরা, ফলে তাদের ধারণা বা আত্মস্থ করার ক্ষমতা কমছে। তত্ত্বের গভীরে ঢোকার আগেই সহজ সমাধান হাতে পেয়ে যাচ্ছে, যা তাদের মৌলিক জ্ঞানচর্চাকে হ্রাস করছে। শুধু নম্বর পাওয়ার দিকেই মনোযোগ কেন্দ্রীভূত হচ্ছে, ফলে জ্ঞান অর্জনের প্রকৃত উদ্দেশ্য হারিয়ে যাচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরাও অভিযোগ করছেন, অনেক শিক্ষার্থী এখন গবেষণামূলক প্রবন্ধ লেখার সময় পুরোপুরি এআই-এর উপর নির্ভর করছে। ফলে মৌলিক চিন্তা, বিশ্লেষণ এবং প্রমাণভিত্তিক যুক্তির অভাব লক্ষ করা যাচ্ছে।

তাহলে কী করণীয়?

প্রযুক্তিকে বাদ দিয়ে রাখার সুযোগ নেই—এটা সময়ের দাবি। কিন্তু এর ব্যবহার যেন হয় ‘সহায়ক শক্তি’ হিসেবে, ‘মূল চালিকাশক্তি’ নয়।

স্কুল-কলেজে ‘ডিজিটাল লিটারেসি’ কোর্স চালু করা যেতে পারে, যেখানে এআই ব্যবহারের নৈতিকতা ও সীমাবদ্ধতা শেখানো হবে।

শিক্ষকদের ভূমিকা হতে হবে গাইডের মতো, যিনি শিক্ষার্থীদের বোঝাবেন কখন এবং কীভাবে প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া যায়।

পরীক্ষা পদ্ধতিতেও কিছু পরিবর্তন আনা প্রয়োজন, যাতে কেবল মুখস্থ জ্ঞান নয়, বিশ্লেষণ, যুক্তি ও প্রয়োগমূলক প্রশ্নের মাধ্যমে মূল্যায়ন হয়।

শেষ কথা হলো _

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আমাদের জীবনে নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে নিঃসন্দেহে। কিন্তু চোখ বন্ধ করে এর উপর নির্ভর করাটা আমাদের চিন্তার ও শেখার শক্তিকে ভোঁতা করে দিতে পারে। তাই চাই সচেতন ব্যবহার—যেখানে প্রযুক্তি থাকবে আমাদের সহায়ক হিসেবে, প্রতিস্থাপক হিসেবে নয়।

‎সারাবাংলা/এসজে/এএসজি
বিজ্ঞাপন

আরো

সানজিদা যুথি - আরো পড়ুন