‘সকালটা ছিল ভালবাসায় ভরা… বিকেলে যেন কফিনে মোড়া এক দুঃস্বপ্ন!’
রাজধানীর বুকে এক ভয়াবহ ট্র্যাজেডি।একটি প্রশিক্ষণ বিমান উড়ছিল স্কুলের ওপর।
কয়েক মিনিট পরই বিকট শব্দে ধসে পড়ে সেটি সরাসরি স্কুলের ছাদে।
আর মুহূর্তেই স্তব্ধ হয়ে যায় কিছু কচি প্রাণের হাসি-কান্না।
কিন্তু প্রশ্ন একটাই—
‘প্রশিক্ষণ বিমান কেন স্কুলের উপর দিয়ে উড়বে?’
‘কেন ঢাকার মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার উপরেই নির্ধারিত হয় ট্রেনিং রুট?’
বাংলাদেশে বিগত এক দশকে অন্তত ৮টি প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনার রেকর্ড পাওয়া গেছে। বেশিরভাগই ঘটেছে আবাসিক বা জনবসতিপূর্ণ এলাকায়। এগুলো কি নিছক দুর্ঘটনা, নাকি নিরাপত্তার নামে এক প্রশাসনিক গাফিলতি?
শহরের ভেতরেই কেনো বিমানবন্দর?
ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর,তার কাছেই বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বেস এবং প্রশিক্ষণ ইউনিট। ফলে দিনের পর দিন প্রশিক্ষণ ফ্লাইটগুলো উত্তরা, খিলক্ষেত, বনানী, নিকেতনের মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার উপর দিয়ে উড়ে যায়।
বিশ্বের মানচিত্রে কোথায় শহরের মাঝে বিমানবন্দর?
জার্মানি, জাপান বা ব্রিটেন—প্রশিক্ষণ বিমানগুলো শহরের বাইরে নির্ধারিত ফ্লাই জোনে চলে।
যুক্তরাষ্ট্র— FAA আইন অনুযায়ী, জনবসতির উপর দিয়ে প্রশিক্ষণ ফ্লাইট চালানো নিষিদ্ধ। দুবাই, সিঙ্গাপুর, কাতার—আবাসিক এলাকা থেকে বেশ কয়েক মাইল দূরে থাকে বিমানবন্দর ও রুট।
তাহলে প্রশ্ন ওঠে—
কেন শুধু বাংলাদেশেই স্কুলের উপর প্রশিক্ষণ বিমান উড়ে বেড়াবে?
কেন আমাদের শিশুদের জীবন ঝুঁকিতে রেখে নিরাপত্তার অনুশীলন হবে?
নিয়ম আছে, কিন্তু বাস্তবায়ন কোথায়?
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (CAAB) ও বিমান বাহিনী – দু’পক্ষই নিজের মতো করে নিয়ন্ত্রণ করে বিমান চলাচল। তবে কোথাও নেই জনবসতির নিরাপত্তার প্রতি বাস্তবসম্মত নীতিমালা। ফলে দিনের পর দিন ঝুঁকির মাঝেই চলছে আকাশপথের ‘ট্রেনিং’!
শেষ প্রশ্ন, উত্তর কোথায়?
এই প্রশ্নগুলো আজ ঘুরপাক খাচ্ছে—
কতটা দায় নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ?
এ ঘটনা কি কেবল মিডিয়ার শিরোনাম হয়ে হারিয়ে যাবে?
শিশুদের জীবন কি এতটাই মূল্যহীন?
আজ যারা হারিয়ে গেল, তারা আর ফিরবে না। কিন্তু যে শিশুরা আজ বেচে আছে আমরা কি পারিনা তাদের জন্য নিরাপদ একটি আকাশ নিশ্চিত করতে পারি না?
লেখক: সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, সারাবাংলা ডটনেট