মোবাইল আমাদের জন্য এখন আর কোনো শখের বা বিলাসী পণ্য নয়। এটি এখন আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। তাই যারা পড়াশোনা বা চাকরির জন্য দিনের বেশিরভাগ সময় বাড়ির বাইরে থাকেন তাদের জন্য পাওয়ার ব্যাঙ্ক অতি প্রয়োজনীয়। আর যারা প্রচুর ট্রাভেল করেন তাদের জন্য এটি অতীব জরুরি।
পাওয়ার ব্যাঙ্ক কেন জরুরি _
জরুরি মুহূর্তে ফোনের চার্জ শেষ হয়ে গেলে, সেই বিপদজনক পরিস্থিতির মোকাবেলায় রয়েছে পাওয়ার ব্যাঙ্ক। এজন্য বাজারে রয়েছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিভিন্ন ক্যাপাসিটির পাওয়ার ব্যাঙ্ক। এর ফলে অনেককেই পাওয়ার ব্যাঙ্ক বাছাই করতে গিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়তে হয়। পাওয়ার ব্যাঙ্কের সব স্পেসিফিকেশনও জানা থাকেও না সবার। ফলে বিভ্রান্তি আরও বাড়ে।
আসুন জেনে নেই, পাওয়ার ব্যাংক কেনার আগে জরুরি কিছু বিষয় …
পাওয়ার ব্যাঙ্কের চার্জ ক্যাপাসিটি _
পাওয়ার ব্যাঙ্ক কেনার আগে অবশ্যই যেটা দেখে নিতে হবে, সেটা হলো ভোল্টেজ আউটপুট কতটা। এখনকার স্মার্টফোনের ভোল্টেজ আউটপুট সাধারণত ৫ ভোল্ট। কিছু ক্ষেত্রে আরও বেশি। তাই ফোনের যা ভোল্টেজ পাওয়ার ব্যাঙ্কের ক্যাপাসিটি তার চেয়ে অবশ্যই বেশি হতে হবে। সেটা না হলে পাওয়ার ব্যাঙ্কের সব চার্জ মোবাইল টেনে নেবে। এতে ফল হবে উল্টো। তাই ফোনের ভোল্টেজ এবং পাওয়ার ব্যাঙ্কের ভোল্টেজ এই দুটো বিষয় ভালো ভাবে দেখে নিয়ে তবেই পাওয়ার ব্যাঙ্ক কেনা উচিত।
পাওয়ার ব্যাঙ্কের চার্জ ক্যাপাসিটি _
পাওয়ার ব্যাঙ্কের চার্জ ক্যাপাসিটি অর্থাৎ, জিরো থেকে ১০০ শতাংশ চার্জ কতটা সময়ে এবং কতবার করতে পারছে পাওয়ার ব্যাঙ্ক। মোটের উপর একটা ভালো পাওয়ার ব্যাঙ্ক একটা ফোন তিনবার চার্জ দিতে পারে। তিন না হলেও ফুললি চার্জড পাওয়ার ব্যাঙ্ক যেন দু’বার ফোন চার্জ দিতে পারে। এর জন্য পাওয়ার ব্যাঙ্ক কেনার আগে ফোনের ক্যাপাসিটি অনলাইনে বা সেটিংসে গিয়ে চেক করে নিন। দেখুন ফোনের ব্যাটারির mAh কত।
এই mAh অর্থাৎ miliamperes-hour কতটা। যদি ব্যাটারির mAh ৪০০০ হয়, তবে অবশ্যই পাওয়ার ব্যাঙ্কের ক্যাপাসিটি ৮০০০ হতে হবে। তবেই অন্তত দু’বার ফোন ফুল চার্জড করতে পারবে সেই পাওয়ার ব্যাঙ্ক।
mAh কী?
mAh হল মিলি অ্যাম্পিয়ার আওয়ার। অর্থাৎ এক ঘণ্টা ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে পাওয়ার ব্যাংকটি কত তড়িৎপ্রবাহ সরবরাহ করতে পারে। যদি কোনো পাওয়ার ব্যাংক-এর ক্ষমতা ৬০০০mAh হয়, তার মানে বোঝায় ওই পাওয়ার ব্যাংকটি টানা ১ ঘণ্টা ধরে ৬০০০ মিলি অ্যাম্পিয়ার বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারে। বড় ব্যাটারির ক্ষেত্রে একে Ah বা অ্যাম্পিয়ার আওয়ারে মাপা হয়।
সেফটি _
পাওয়ার ব্যাঙ্কের সেফটির বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। পাওয়ার ব্যাঙ্কের কাজ শুধু চার্জ দেওয়াই নয়, চার্জ দেওয়া শেষ হলে অটোমেটিক্যালি বন্ধ হয়ে যাওয়া। ওভার হিটিং যাতে না হয়, সেটা নিশ্চিত করা। এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, ফোনের ইন্টিগ্রেটেড সার্কিটকে সুরক্ষিত রাখা।
বিবিধ _
ফোন তো খারাপ হবেই, আপনিও আহত হতে পারেন। তাই পাওয়ার ব্যাঙ্ক খুব ভালো ও পরিচিত কোম্পানিরই কেনা উচিত। আর কখনই কম দামের কেনা উচিত নয়। পাওয়ার ব্যাঙ্ক কেনার আগে অবশ্যই দেখতে হবে, সেটির মধ্যে কী রকমের ব্যাটারি আছে।
তাতে যেন লিথিয়াম পলিমার বা লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি থাকে। কম দামের পাওয়ার ব্যাঙ্কে অনেক সময়েই এই গোত্রের ব্যাটারি থাকে না। সে জন্য এই পাওয়ার ব্যাঙ্কগুলি ফেটে যায়। যেটা খুব ক্ষতিকর।
কোয়ালিটি অফ বিল্ডটাও খুব জরুরি একটা বিষয়। দেখে নিতে হবে জিনিসটি যেন ভালো মানের প্লাস্টিক বা অ্যালুমিনিয়াম মেড হয়। এ রকম হলে ডাস্ট বা জল ঢোকার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়।
পাওয়ার ব্যাঙ্কে যেন ইন্ডিকেটর থাকে। অর্থাৎ সেটিতে কতটা চার্জ আছে, কতক্ষণ চলবে, সেটি যেন জানা যায়। ভালো পাওয়ার ব্যাঙ্কে ব্যাটারি পার্সেন্টেজ বা লাইট ইন্ডিকেটর থাকে। সেগুলি দেখে নেওয়া উচিত।
পাওয়ার ব্যাংকে কতক্ষণ চার্জ দেওয়া উচিত?
পাওয়ার ব্যাংক-এ কতক্ষণ চার্জ দিতে হবে তা পাওয়ার ব্যাংকটির ক্যাপাসিটির ওপর নির্ভর করে। বেশি ক্ষমতার পাওয়ার ব্যাংকে বেশি সময় চার্জ দিতে হতে পারে। এছাড়া কীভাবে চার্জ দিচ্ছেন তার ওপরেও চার্জিংয়ের সময় নির্ভর করে। অরিজিনাল চার্জার ব্যবহার করলে দ্রুত ও নিরাপদভাবে চার্জ দেওয়া সম্ভব।
কখনো কখনো পাওয়ার ব্যাংক ফুল চার্জ হতে বেশি সময় লাগে কেন?
অনেক সময়, কম ক্ষমতাসম্পন্ন চার্জার বা ল্যাপটপ থেকে চার্জ দিলে চার্জ হতে বেশি সময় লাগে। তাছাড়া কী কেবল ব্যবহার করছেন বা তাপমাত্রার ওপরেও চার্জিংয়ের সময় নির্ভর করে।
শেষ কথা _
যে কোনো পাওয়ার ব্যাংক নির্দেশনা মেনে ব্যবহার না করলেই বিস্ফোরণ হতে পারে। তাই পাওয়ার ব্যাংক ব্যবহারের ভুলে এটি বিপদের কারণ হতে পারে। ছোট দেখতে ডিভাইসটি কখনো কখনো বিপজ্জনক এমনকি মারাত্মকও হতে পারে। তাই পাওয়ার ব্যাংকে কেন কিনবেন আর কি কি বিষয় দেখে কিনবেন আর কিভাবে বেবহার করবেন আগে ভালো করে জেনে নিন। এতে এড়িয়ে যাওয়া যাবে যেকোনো দুর্ঘটনা।