Wednesday 01 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিশ্বজুড়ে আজব সব হোটেল

বিশ্বজুড়ে আজব সব হোটেল

কেউ কী সমুদ্রের পানির নিচে হোটেলে রাত কাটিয়েছেন? কিংবা বরফের তৈরী বা ক্যাপসুলের মতো দেখতে হোটেল বা নামি-দামি ব্র্যান্ডের গাড়ির আদলে ডিজাইন করা হোটেলে? অবাক হলেও ভ্রমণ পিপাসুদের প্রয়োজনের তাগিদেই বিশ্বজুড়ে গড়ে উঠেছে বিলাসবহুল হোটেল ব্যবসা। এই ভ্রমণপ্রিয় মানুষদের আনন্দ দিতে শুধু বিলাসবহুলই নয়, বিশ্বজুড়ে নানা জায়গায় গড়ে উঠেছে অদ্ভূতদর্শন আর আজব সব হোটেল।

সাধারণ কিছু হোটেলের বাইরে আজ জানবো এমনই কিছু অবাক করা অসাধারণ হোটেল বিষয়ে …

গাড়িরই আদলে হোটেল _

জার্মানি’র ভি-৮ হোটেল (V8 Hotel), এটি বিশ্বজুড়ে গাড়িপ্রেমীদের জন্য এই হোটেলটি এক আদর্শ জায়গা। জার্মানিতে অবস্থিত এই হোটেলের প্রত্যেকটি রুম বিশ্বের বিভিন্ন নামি-দামি ব্র্যান্ডের কারের আদলে ডিজাইন করা হয়েছে। এমনকি এই হোটেলের বিছানা ও আসবাবপত্রগুলোও কারের আদলে তৈরি।

বিজ্ঞাপন
জার্মানি'র ভি-৮ হোটেল

জার্মানি’র ভি-৮ হোটেল

সমুদ্রের তলদেশে বানানো ফাইভ স্টার হোটেল _

পোসাইডোন আন্ডার-সি রিসোর্ট (Poseidon Undersea Resort), ফিজিতে অবস্থিত এই হোটেলটি সমুদ্রের তলদেশে বানানো একটি ফাইভ স্টার মানের হোটেল। পোসাইডোন আন্ডার-সি রিসোর্ট সমুদ্রের তলদেশে বানানো পৃথিবীর সর্বপ্রথম একমাত্র ফাইভ স্টার মানের হোটেল। এই হোটেলটি বিয়ে, জন্মদিনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়ে থাকে।

পোসাইডোন আন্ডার-সি রিসোর্ট

পোসাইডোন আন্ডার-সি রিসোর্ট

আইস হোটেল _

সুইডেনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থানগুলোর একটি হলো জুক্কাসজার্ভির এই আইস হোটেল। এটি ১৯৯০ সালে স্থানীয় একটি লেকের জমে থাকা বরফ কেটে নান্দনিক ডিজাইনে বানানো হয়েছিল। এই হোটেলের প্রত্যেকটি জিনিস বরফের তৈরি। এখানে ৫০ টির উপরে রুম এবং ভোজনবিলাসীদের জন্য একটি রেস্টুরেন্টও আছে। জুক্কাসজার্ভি আইস হোটেল পৃথিবীর সর্বপ্রথম সম্পূর্ণ বরফের তৈরি হোটেল।

জুক্কাসজার্ভির আইস হোটেল

জুক্কাসজার্ভির আইস হোটেল

পাহাড়ের গা ঘেষে শূন্যে ঝুলে থাকা হোটেল _

ন্যাচুরা ভাইভ স্কাইলজ (Natura Vive Skylodge), খাঁড়া পাহাড়ের ঢালে ঝুলে থাকা এই হোটেলটি পেরুতে অবস্থিত। এডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য এই হোটেলটি হতে পারে একটি আদর্শ জায়গা। কারণ এই হোটেলের প্রত্যেকটি রুম বৈজ্ঞানিক উপায়ে পাহাড়ের ঢালে ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এই হোটেলে যেতে হলে আপনাকে অবশ্যই গোটা পাহাড় চড়ে তারপর যেতে হবে।

ন্যাচুরা ভাইভ স্কাইলজ

ন্যাচুরা ভাইভ স্কাইলজ

ক্যাপসুল হোটেল _

জাপানের ক্যাপসুলভ ভ্যালু কান্ডা (Capsulev Value Kanda), জাপানে অবস্থিত ক্যাপস্যুলভ ভ্যালু কান্ডা নিজেই এক আশ্চর্য। এই হোটেলে রাত্রিযাপনের জন্য আপনার জন্য বরাদ্ধ থাকবে ৭ থেকে ৮ ফুট সাইজের একটি ক্যাপসুল রুম। গোটা জাপানজুড়ে এরকম আরও বেশ কয়েকটি ক্যাপসুল হোটেল রয়েছে। একেকটি ক্যাপসুল হোটেলে প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০ টি ক্যাপসুল রুম থাকে। এই হোটেলে প্রত্যেক ফ্লোরে আলাদা করে ওয়াশরুম রয়েছে এবং পর্যটকদের জিনিসপত্র রাখার জন্য প্রথম ফ্লোরে আছে একটি লকার। এই ছোট্ট ক্যাপসুল রুমের মধ্যেই টিভি, রেডিও, ওয়াফাই, এসি সহ আদর্শ হোটেলরুমের মতো মোটামুটি প্রায় সব সুবিধাই বিদ্যমান।

জাপানের ক্যাপসুলভ ভ্যালু কান্ডা

জাপানের ক্যাপসুলভ ভ্যালু কান্ডা

ছোট, কিন্তু অনন্য ডিজাইন আর চমৎকার অভিজ্ঞতার জন্য আধুনিক ক্যাপসুল হোটেলগুলো বিশ্বজুড়ে পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে। এমন আরো কিছু ক্যাপসুল হোটেল রয়েছে।

স্কাইলজ অ্যাডভেঞ্চার সুইটস _

দেখেই মনে হবে এমন শ্বাসরুদ্ধকর সুন্দর আর কিছু হতে পারে না। পাহাড়ের গায়ে স্বচ্ছ কাচের ঝুলন্ত স্লিপিং পড নিয়ে পেরুর স্যাক্রেড ভ্যালিতে এই লজ। এখানে থাকতে হলে ৪০০ মিটার উচ্চতায় চড়তে হবে। প্রতিটি রুমে আধুনিক সব সুযোগ–সুবিধা আছে। একা কিংবা প্রিয়জনের সঙ্গে এক কাপ চা আর সূর্যোদয়ের মুহূর্ত সারা জীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আরেকটু অভিজাত্যপূর্ণ কিছু চাইলে আছে স্টারলজ। স্টারলজ স্কাইলজের সিস্টার সাইট। স্টারলজে বাড়তি পাওয়া হলো পাহাড়ের গা ঘেঁষে ‘হট টাব’। শরীরের ক্লান্তি দূর করতে উষ্ণ গরম পানিতে গা ভিজিয়ে বসে পাহাড়-নদীর প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে চাইলে যেতে হবে পেরুর স্টারলজ অ্যাডভেঞ্চার সুইটসে।

স্টারলজ স্কাইলজ

স্টারলজ স্কাইলজ

টুবো হোটেল _

কলম্বিয়ার টাতাকোয়া মরুভূমিতে এই ক্যাপসুল হোটেল। টাতাকোয়া বিখ্যাত পরিষ্কার আকাশের জন্য। রাতে এখানে তারায় ভরা আকাশ উপভোগ করতে পারেন ভ্রমণকারীরা। দারুচিনি রঙের বালুর ওপর রঙিন ছোট ছোট ক্যাপসুল দূর থেকে দেখায় অনেকটা ক্যান্ডির মতো। ৩৭টি ক্যাপসুল নিয়ে এই টুবো হোটেল।

ক্যাপসুল হোটেল

ক্যাপসুল হোটেল

ফ্রি স্পিরিট স্পিয়ারস _

একটু সবুজের মধ্যে ছুটি কাটাতে চাইলে আছে কানাডার ফ্রি স্পিরিট স্পিয়ারস। ভ্যানকুভার দ্বীপে গাছপালার ভেতর ঝুলন্ত বাবলের মতো ঠিক দেখতে ক্যাপসুলগুলো। রংটা কিছুটা মিষ্টিকুমড়ার মতো। অনেকটা ঝুলে থাকা কোনো মিষ্টিকুমড়ায় বসবাসের মতো। উঠতে হয় গাছে প্যাঁচানো সিঁড়ি দিয়ে। আর ভেতরে আছে আধুনিক সব সুযোগ–সুবিধা।

কানাডার ফ্রি স্পিরিট স্পিয়ারস

কানাডার ফ্রি স্পিরিট স্পিয়ারস

গুহার ভেতরে এক রুমের এই হোটেল _

ফ্রেমিংটন, নিউ মেক্সিকো’র কোকোপেল্লি’স কেভ ব্রেড অ্যান্ড ব্রেকফাস্ট, পর্বতের গায়ে গুহার ভেতরে এক রুমের এই হোটেলটি নির্মিত হয়েছে ১৯৮০ সালে। পর্বতচূড়া থেকে একশো ফুট নিচে গড়ে তোলা হয়েছে এটি। নানাবিধ জিনিসপত্র, বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং আলো-বাতাস যাতায়াতের সুবিধার্থে তিনটি বড় বড় ফুটো তৈরি করা হয়েছে পর্বতচূড়া থেকে। আরাম-আয়েশ আর রোমাঞ্চের যথেষ্ঠ ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। তবু এ হোটেলে থাকতে গেলে কেবল অর্থ থাকাই যথেষ্ট নয়, দরকার পর্যাপ্ত দক্ষতা ও সাহসিকতারও। কেননা, খাড়া পর্বতগাত্রে মই বেয়ে এ হোটেলে পৌঁছতে গেলে জীবননাশেরও সম্ভাবনা আছে।

ফ্রেমিংটন, নিউ মেক্সিকো'র কোকোপেল্লি’স কেভ ব্রেড অ্যান্ড ব্রেকফাস্ট

ফ্রেমিংটন, নিউ মেক্সিকো’র কোকোপেল্লি’স কেভ ব্রেড অ্যান্ড ব্রেকফাস্ট

শপিংমল হোটেল _

মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের সোভোটেল হোটেল। এই হোটেলে আপনাকে ঘুমানোর জন্য আরামদায়ক ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। দেওয়া হবে স্লিপ মাস্ক, বালিশ এবং ঠান্ডা ধাঁচের গান শোনার ব্যবস্থা। চাইলে ঘুমানোর জন্য বিছানাও পাওয়া যাবে এখানে। আপনি এখানে মন ভরে কেনাকাটা করবেন। যখন কেনাকাটা করতে করতে ক্লান্ত হবেন, তখন আরামে ঘুম দেবেন। ঘুম থেকে উঠে আবারও শপিং করবেন।

মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের সোভোটেল হোটেল

মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের সোভোটেল হোটেল

কুকুরের আদলে হোটেল _

যুক্তরাষ্ট্রের আইডাহোতে ডগ বার্ক পার্ক ইন হোটেলটি দৈত্যাকৃতির একটি শিকারী কুকুরের আদলে বানানো হয়েছে। ১৫ ফুট চওড়া এবং ৩০ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট কুকুরটির আবার একটি গালভরা নামও আছে- সুইট উইলি। এই কুকুরের পেটেই রয়েছে একটি ডাবল বেডের কামরা, থুতনির দিকে রয়েছে একটি চিলেকোঠা। শুধু যে হোটেলের আকৃতিই কুকুরের মতো তা-ই নয়, হোটেলের রুমের ভেতরের সাজসজ্জা, কম্বলসহ সবকিছুতেই আছে কুকুরের ছাপ।

যুক্তরাষ্ট্রের আইডাহোতে ডগ বার্ক পার্ক ইন হোটেল

যুক্তরাষ্ট্রের আইডাহোতে ডগ বার্ক পার্ক ইন হোটেল

কফিন, কারাগার, সিংহের খাঁচা রয়েছে এ রুমের হোটেল _

জার্মানির বার্লিনে প্রপেলার আইল্যান্ড সিটি নজ হোটেলকে আজবই নয়, পাগলাটেও বলতে পারেন। এ হোটেলের আছে ২৭টি ঘর, প্রত্যেকটিরই রয়েছে অদ্ভুতুড়ে বৈশিষ্ট্য। যেমন- একটি যদি হয় কারাগারের সেলের মতো, তবে অন্যটি কাচ দিয়ে তৈরি। কী, যথেষ্ট পাগলাটে মনে হচ্ছে না? তবে শুনুন এ হোটেলের রুমের বর্ণনা। টু লায়ন রুম (দুটি সিংহের খাঁচা রয়েছে এ রুমে, যার মধ্যে ঘুমানো যাবে), কফিন রুম (কফিনের মধ্যে শোবার ব্যবস্থা), ব্লু রুম (পুরো রুমের সবকিছুই নীল), আপসাইড ডাউন রুম (উপরের দিকে শোবার ব্যবস্থা, নিচের দিকে ছাদ) সহ হোটেল রুম।

জার্মানির বার্লিনে প্রপেলার আইল্যান্ড সিটি নজ হোটেল

জার্মানির বার্লিনে প্রপেলার আইল্যান্ড সিটি নজ হোটেল

পরিশেষে _

ভ্রমণপ্রিয় শৌখিন যে মানুষেরা অবকাশ যাপনের জন্য একা, বন্ধুদের সাথে বা পরিবার নিয়ে দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করেন, তাদের জন্য উন্নতমানের, আরামদায়ক, আকর্ষণীয় হোটেলের আবেদনই আলাদা। অনন্য ডিজাইন আর চমৎকার অভিজ্ঞতার জন্য এসব হোটেলগুলো বিশ্বজুড়ে পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে। টিকটক আর ইনস্টাগ্রামবান্ধব কনটেন্ট তৈরির জন্যও সবার পছন্দের শীর্ষে এ হোটেলগুলো।

সারাবাংলা/এনএল/এএসজি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর