সকালে ঘুম ভাঙার পর অনেকের দিনের শুরু হয় ফোন হাতে নিয়ে। কারও জন্য এটি কেবল সময় দেখা বা এলার্ম বন্ধ করার উদ্দেশ্যে, আবার অনেকের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘একটু দেখে নেওয়া’। কিন্তু এই ‘একটু’ কখন ঘণ্টাখানিক সময় গিলে ফেলে, অনেকেই বুঝতে পারেন না। ঘুম থেকে ওঠার কয়েক মিনিটের মধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ঢুঁ মারা অনেকের জন্য যেন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
দিনের অন্যান্য সময়েও সোশ্যাল মিডিয়ার টান কাটানো কঠিন হয়ে পড়েছে। অফিস বা পড়াশোনার ফাঁকে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম স্ক্রোল করা, নোটিফিকেশন চেক করা এখন প্রায় নিয়মিত অভ্যাস। দুপুরের খাবারের সময়, বাসে যাতায়াতের ফাঁকে কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডার মাঝেও কেউ কেউ ফোনের স্ক্রিন থেকে চোখ ফেরাতে পারেন না। সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অনেকে চ্যাট, পোস্ট করা কিংবা রিলস দেখায় সময় কাটান।
গবেষণা বলছে, তরুণ প্রজন্মের (জেন জি) মাঝে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের হার সবচেয়ে বেশি। ১৬ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের গড় সময় দৈনিক প্রায় ৩ ঘণ্টা। এর মধ্যে নারীরা পুরুষদের তুলনায় গড়ে ১০–২০ মিনিট বেশি সময় ব্যয় করেন। বিশেষ করে বিনোদনমূলক ভিডিও, ফ্যাশন কনটেন্ট ও লাইফস্টাইল সম্পর্কিত পোস্ট নারীদের আকর্ষণ করে বেশি, অন্যদিকে পুরুষরা তুলনামূলক বেশি সময় ব্যয় করেন গেমিং ও টেকনোলজি-সংক্রান্ত কনটেন্টে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সোশ্যাল মিডিয়া এখন শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়, বরং তথ্য আদান-প্রদান, ব্যবসা, এমনকি শিক্ষার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। দীর্ঘ সময় ফোনের স্ক্রিনে চোখ রাখার কারণে চোখের ক্লান্তি, ঘুমের ব্যাঘাত, মনোযোগের ঘাটতি, এমনকি উদ্বেগ ও হতাশার ঝুঁকিও বাড়ে।
তাদের পরামর্শ, সোশ্যাল মিডিয়ার ইতিবাচক দিকগুলো উপভোগ করতে হলে ব্যবহার হতে হবে সচেতন ও সীমিত। নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে ব্যবহার, অপ্রয়োজনীয় নোটিফিকেশন বন্ধ করা এবং অফলাইন কার্যক্রমে সময় বাড়ানো—এসব অভ্যাস গড়ে তুললে প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে সমৃদ্ধ করতে পারে, নিয়ন্ত্রণ করতে নয়।