Sunday 17 Aug 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘লালবাগ কেল্লা’: ইতিহাসের বুকে এক অপূর্ণ স্বপ্ন

ফারহানা নীলা
১৭ আগস্ট ২০২৫ ১৬:৩৩

ঢাকার পুরনো শহরের ব্যস্ততার মাঝেও লালবাগ কেল্লা যেন এক অন্য জগৎ— ইটের দেয়ালে খোদাই করা ইতিহাস, মসজিদের গম্বুজে মোগল নকশা, আর প্রাঙ্গণে বাতাসে ভেসে থাকা শতাব্দী পুরোনো গল্প। ১৭শ শতকের শেষ দিকে মোগল সুবাদার মুহাম্মদ আজম এটি নির্মাণ শুরু করেন। উদ্দেশ্য ছিল এক মহিমান্বিত দুর্গ, যা ঢাকা শহরের প্রশাসনিক ও রাজকীয় কার্যক্রমের কেন্দ্র হবে। কিন্তু আজমের বদলি এবং পরবর্তী সুবাদার শায়েস্তা খানের কন্যা পরী বিবির অকাল মৃত্যু এই প্রকল্পকে থামিয়ে দেয়। ফলে লালবাগ কেল্লা আজও দাঁড়িয়ে আছে এক অসমাপ্ত স্বপ্নের প্রতীক হয়ে।

দেখার মতো জায়গাগুলো _

প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে বিশাল খোলা প্রাঙ্গণ— সবুজ ঘাস আর প্রাচীন স্থাপত্যের মিশ্রণ এক অদ্ভুত শান্তি এনে দেয়।

বিজ্ঞাপন

পরী বিবির মাজার: সাদা মার্বেলের মসৃণ গায়ে সূক্ষ্ম খোদাই, চারপাশে ফুলের বাগান। মাজারকে ঘিরে প্রচলিত গল্পগুলো শোনার জন্য গাইডদের কাছ থেকে কিছু সময় নিয়ে শোনা উচিত।

মসজিদ: পশ্চিম দিকে তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ, আজও সক্রিয়। মিনার ও খিলানের নকশায় ইসলামি শিল্পের সৌন্দর্য স্পষ্ট।

দিওয়ান-ই-আম (দফতরখানা): উত্তরে অবস্থিত এই ভবন ছিল প্রশাসনিক দপ্তর। বর্তমানে এখানে একটি জাদুঘর রয়েছে, যেখানে প্রদর্শিত হয় মোগল আমলের অস্ত্র, অলংকার, পোশাক, মুদ্রা ও বিভিন্ন দলিলপত্র।

উদ্যান ও জলাধার: মোগল নগর পরিকল্পনায় সবুজ বাগান ও পানির ব্যবস্থা ছিল অপরিহার্য। এখানকার জলাধার ও উদ্যান এখনো সেই ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহন করে।

শেখার মতো দিক _

লালবাগ কেল্লা হলো ইতিহাসের এক জীবন্ত পাঠশালা। মোগল আমলের নগর বিন্যাস ও স্থাপত্য পরিকল্পনা কেমন ছিল, তা এখানে সরাসরি দেখা যায়। ইসলামি নকশাশিল্পের সূক্ষ্মতা, মার্বেলের কাজে আরবি ক্যালিগ্রাফি, ফুল-লতার ডিজাইন সবই শিক্ষণীয়। জাদুঘরের নিদর্শনগুলো সেই সময়কার রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরে।

এই কেল্লা মনে করিয়ে দেয়, সব স্বপ্ন পূর্ণ হয় না। রাজনৈতিক পরিবর্তন, ক্ষমতার পালাবদল এবং ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি একটি বিশাল প্রকল্পের ভবিষ্যৎ বদলে দিতে পারে। একই সঙ্গে, মোগল কারিগরি ও শহর পরিকল্পনার উন্নত ধারা আজও আধুনিক স্থপতিদের অনুপ্রেরণা হয়ে আছে।

খোলার সময় ও সাপ্তাহিক ছুটি _

খোলা: প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত (গ্রীষ্মে), শীতকালে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।

বন্ধ: প্রতি রবিবার। শুক্রবার দুপুর ১২টা ৩০ মিনিট থেকে ৩টা পর্যন্ত জুমার নামাজের জন্য বন্ধ থাকে, এরপর আবার খোলা হয়।

সরকারি ছুটি: বিশেষ সরকারি ছুটির দিনে বন্ধ থাকতে পারে।

ভ্রমণ পরামর্শ _

সকাল বা বিকেলে গেলে ভিড় কম থাকে এবং আলো-ছায়ার খেলা ছবিতে অপূর্ব লাগে। প্রবেশের আগে টিকিট নিতে হবে— দেশি ও বিদেশি পর্যটকের জন্য আলাদা মূল্য নির্ধারিত। কেল্লার ভেতরে প্লাস্টিক, খাবারের প্যাকেট বা আবর্জনা ফেলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

ঢাকায় গেলে লালবাগ কেল্লায় একবার যাওয়া মানে শুধু একটি স্থাপনা দেখা নয়— বরং কয়েক ঘণ্টার জন্য অতীতের রাজকীয় পরিবেশে হাঁটাহাঁটি করা, অসমাপ্ত এক গল্পের পাতা উল্টে দেখা, আর শেখা যে ইতিহাস শুধু বইয়ের মধ্যে নয়— কখনো তা দাঁড়িয়ে থাকে ইট, পাথর আর গম্বুজের নিচে, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে।

সারাবাংলা/এফএন/এএসজি

লালবাগ কেল্লা