তিনি ছিলেন এক নারী, যাকে ভালোবাসত গোটা বিশ্ব। তিনি ছিলেন এক রাজকুমারী, যিনি মুকুটে নয়—মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন। হ্যাঁ, বলছি প্রিন্সেস ডায়ানার কথা।
১৯৬১ সালের ১ জুলাই, ইংল্যান্ডের স্যান্ড্রিংহামে জন্মগ্রহণ করেন ডায়ানা। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন সরল, স্নিগ্ধ আর মানবিকতায় ভরা। মাত্র ২০ বছর বয়সে বিয়ে করেছিলেন ব্রিটিশ সিংহাসনের উত্তরসূরি প্রিন্স চার্লসকে। সেই রাজকীয় বিয়ের আয়োজন ছিল বিশ্বের ইতিহাসের অন্যতম আলোচিত ঘটনা। প্রায় ৭৫ কোটি মানুষ সরাসরি দেখেছিলেন এ আয়োজন।
কিন্তু রাজপ্রাসাদের চাকচিক্য তার ব্যক্তিগত জীবনে আনতে পারেনি শান্তি। প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে সম্পর্কে ভাঙন, মিডিয়ার তীব্র নজরদারি—সব মিলিয়ে ডায়ানা হয়ে ওঠেন ভিন্নধর্মী এক আইকন।
তিনি শুধু ব্রিটিশ রাজপরিবারের রাজকুমারী ছিলেন না, ছিলেন মানবতার রোল মডেল। এইচআইভি আক্রান্ত রোগীর হাত ধরে সমাজকে দেখিয়েছেন ভালোবাসা ও সহমর্মিতা। আফ্রিকায় অনাহারী শিশুদের পাশে দাঁড়িয়ে হয়েছেন ‘হোপের প্রতীক’। ল্যান্ডমাইন বিরোধী আন্দোলনে তার সাহসী অংশগ্রহণ বদলে দিয়েছিল বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি।
ফ্যাশনের দিক থেকেও তিনি ছিলেন অনন্য। পোশাক, স্টাইল ও অনবদ্য উপস্থিতি দিয়ে বিশ্ব ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে তৈরি করেছিলেন নতুন ধারা। অনেকেই তাকে বলতেন ‘ট্রেন্ডসেটার’। মৃত্যুর বহু বছর পরও তার ফ্যাশন স্টাইল এখনো ডিজাইনারদের অনুপ্রেরণা।
কিন্তু পৃথিবী তাকে বেশিদিন পায়নি। ১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট, ফ্রান্সের প্যারিসে এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় মাত্র ৩৬ বছর বয়সে পৃথিবীকে বিদায় জানান প্রিন্সেস ডায়ানা। তার মৃত্যুতে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল পুরো বিশ্ব। লক্ষ লক্ষ মানুষ কেঁদেছিল তার জন্য, আর অশ্রুসিক্ত লন্ডনের রাস্তায় শেষযাত্রায় শামিল হয়েছিল কোটি জনতা।
আজও তিনি পরিচিত—‘জনগণের রাজকুমারী’ নামে। রাজকীয় জীবনের সব আড়ম্বরের বাইরে, তিনি প্রমাণ করেছিলেন—সত্যিকারের মহিমা লুকিয়ে থাকে ভালোবাসা, সহমর্মিতা, মানবতা আর স্টাইলের ভেতরে।