একসময় যেখানে চোখ যেত, সেখানেই ছিল শুকনো ধুলোমাখা প্রান্তর। পাখির ডাক নেই, নেই গাছের ছায়া—কেবল নির্জনতা আর নিঃসঙ্গতা। কিন্তু আজ সেই জায়গায় দিগন্তজোড়া সবুজে দুলছে গাছপালা, ডেকে বেড়াচ্ছে পাখি, ফিরে এসেছে জীবনের উচ্ছ্বাস। আর এই অলৌকিক পরিবর্তনের নেপথ্যে আছেন এক দম্পতি— বিশ্বখ্যাত ফটোগ্রাফার সেবাস্তিয়াও সালগাদো (Sebastião Salgado) এবং তার স্ত্রী লেলিয়া ডেলুইজ ওয়ানিক সালগাদো (Lélia Deluiz Wanick Salgado)।
হতাশা থেকে প্রেরণা _
১৯৯০-এর দশকে বহু বছরের ভ্রমণ শেষে সালগাদো ফিরে আসেন ব্রাজিলের মিনাস জেরাইস প্রদেশে তার পারিবারিক খামারে। কিন্তু যে সবুজ পাহাড় আর গাছগাছালি একসময় তাকে স্বাগত জানিয়েছিল, সেগুলো নেই। চারপাশে কেবল ধূসর প্রান্তর। প্রায় সব গাছ কেটে ফেলা হয়েছে, প্রাণীকূলও হারিয়ে গেছে।
এই দৃশ্য তার ভেতরে প্রবল আঘাত হানে। তখন স্ত্রী লেলিয়ার প্রস্তাব— ‘যদি আমরা এই মৃতভূমিকে আবার জীবন্ত করে তুলি?’
নতুন জীবনের বীজ _
১৯৯৮ সালে তারা শুরু করেন বৃক্ষরোপণ। ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে Instituto Terra নামে একটি প্রকল্প। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে অক্লান্ত পরিশ্রমে তারা রোপণ করেন প্রায় ২০ লাখ গাছ। স্থানীয় প্রজাতির গাছ বেছে নিয়ে তারা ফিরিয়ে আনেন প্রকৃতির ভারসাম্য।+
ফিরে আসা জীববৈচিত্র্য _
অলৌকিকভাবে বদলে যায় দৃশ্যপট। যে জায়গা একসময় ছিল ধূসর মরুভূমির মতো, সেখানে এখন দাঁড়িয়ে আছে ঘন সবুজ বন। ফিরে এসেছে ১৭০ প্রজাতির পাখি, ৩০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ১৫ প্রজাতির সরীসৃপ এবং অসংখ্য কীটপতঙ্গ। শুকনো নদী আবার বইতে শুরু করেছে, মাটি ফিরে পেয়েছে উর্বরতা।
বিশ্বের জন্য অনুপ্রেরণা _
সালগাদো দম্পতির এই উদ্যোগ প্রমাণ করে—প্রকৃতিকে ফিরিয়ে আনা অসম্ভব নয়। শুধু দরকার ধৈর্য, ভালোবাসা আর বিশ্বাস। তাদের কাজ আজ বিশ্বজুড়ে পরিবেশবাদী ও প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে এক অনুপ্রেরণা।
শেষ কথা _
ধু ধু প্রান্তরকে সবুজ বনভূমিতে রূপান্তর করা শুধু গাছ লাগানোর গল্প নয়—এটি মানুষের আশা, নিষ্ঠা আর প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনের গল্প। সেবাস্তিয়াও ও লেলিয়া আমাদের শিখিয়েছেন, পৃথিবীকে সুস্থ করতে হলে শুরু করতে হবে আমাদের হাত ধরেই—একটি গাছ, একটি বীজ, একটি নতুন জীবনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে।