ভাবুন, এক গভীর রাত। পৃথিবীর কোথাও মানুষ ঘুমিয়ে আছে নিশ্চিন্তে। কিন্তু সেই সময়ে দূর মহাবিশ্বের কোটি কোটি আলোকবর্ষ দূরে ঘটছে এক মহাজাগতিক বিস্ফোরণ— দুটি ব্ল্যাক হোল মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে। সংঘর্ষের পর মহাকাশ কেঁপে উঠছে অদৃশ্য তরঙ্গে, যা ধীরে ধীরে ভেসে আসছে পৃথিবীর দিকে। আর আমরা সেই অদৃশ্য কম্পনটিই শুনতে পাচ্ছি, যার নাম GW190521।
২০১৯ সালের ২১ মে। লেজার ইন্টারফেরোমিটার গ্র্যাভিটেশনাল-ওয়েভ অবজারভেটরি (LIGO) আর ইতালির ভার্গো একসাথে ধরা পেল এক অদ্ভুত সংকেত। স্থায়িত্ব মাত্র কয়েক মিলিসেকেন্ড, কিন্তু শক্তিতে অপরিসীম। বিশ্লেষণ শেষে জানা গেল, এটি আসলে দুটি বিশাল ব্ল্যাক হোলের সংঘর্ষের ফল। নতুন যে ব্ল্যাক হোলটি তৈরি হলো, তার ভর সূর্যের ভরের প্রায় ১৪২ গুণ। এভাবেই প্রথমবারের মতো নিশ্চিত প্রমাণ মিলল মধ্যম আকারের ব্ল্যাক হোলের, যার অস্তিত্ব নিয়ে এতদিন শুধু অনুমানই ছিল।
GW190521-কে রহস্যময় করে তুলেছে তার সরলতা। মাত্র চারটি তরঙ্গের ছোট্ট স্পন্দন। কিন্তু তাতেই ভেসে উঠল মহাবিশ্বের বিশাল গল্প। বিজ্ঞানীরা বললেন, মহাজাগতিক “দানবদের নৃত্য” এর সাক্ষী হল পৃথিবী।
কিন্তু রহস্য এখানেই শেষ নয়। ২০২৩ সালে আবারও দেখা গেল একই ধরণের সংকেত। মনে হলো, ২০১৯ সালের ঘটনাটি কোনো ব্যতিক্রম নয়, বরং মহাবিশ্বের গভীরে নিয়মিত ঘটছে এমন সংঘর্ষ। এ যেন মহাবিশ্বের আরেকটি জানালা খুলে দিল মানবজাতির সামনে।
তবে সব বিজ্ঞানী একমত নন। কেউ বলেন, এটা কেবল ব্ল্যাক হোল সংঘর্ষ নয়, বরং হতে পারে অজানা এক জ্যোতির্বস্তু—যেমন বোস-স্টার। আবার কেউ মনে করেন, GW190521 পদার্থবিদ্যার নতুন নিয়মের ইঙ্গিত দিচ্ছে, যা আমরা এখনো বুঝতে পারিনি।
মানুষের দৃষ্টি যতদূর যায়, মহাবিশ্ব তার চেয়েও অসীম। GW190521 আমাদের মনে করিয়ে দেয়— আমরা যে ছোট্ট নীল গ্রহে দাঁড়িয়ে আছি, তা মহাজাগতিক রহস্যের সাগরে এক বিন্দুমাত্র। তবু এই বিন্দুই খুঁজে বের করতে পারছে মহাবিশ্বের শব্দ, ব্ল্যাক হোলের সংঘর্ষের প্রতিধ্বনি।
হয়তো ভবিষ্যতে আরও অনেক GW সংকেত ধরা পড়বে, আর প্রতিটি সংকেত আমাদের শোনাবে মহাবিশ্বের নতুন গল্প। GW190521 তাই কেবল একটি সংকেত নয়, বরং মানুষের জ্ঞানপিপাসার এক অনন্ত যাত্রার দিশারী।
(GW190521 এর তথ্য সংগ্রহ – information source)