Wednesday 08 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আন্তর্জাতিক লেসবিয়ান দিবস
আজ সাহস, দৃশ্যমানতা ও সম্মানের দিন

ফারহানা নীলা
৮ অক্টোবর ২০২৫ ১৩:৪৯

বিশ্বের নানা প্রান্তে আজ, ৮ অক্টোবর, পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক লেসবিয়ান দিবস (International Lesbian Day)। এই দিনটি শুধু লেসবিয়ান নারীদের ভালোবাসার প্রকাশ নয়— এটি তাদের অস্তিত্ব, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর এক মানবিক আহ্বানও বটে।

লেসবিয়ান কারা?

‘লেসবিয়ান’ শব্দটি মূলত এমন নারীদের বোঝায়, যারা অন্য নারীর প্রতি মানসিক, রোমান্টিক ও যৌন আকর্ষণ অনুভব করেন। অর্থাৎ, একজন লেসবিয়ান নারী অন্য নারীর সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়তে চান বা গড়ে তোলেন।

আজকের দিনে ‘লেসবিয়ান’ পরিচয় শুধু যৌন আকর্ষণের বিষয় নয় — এটি একটি যৌন অভিমুখিতা (sexual orientation) এবং একটি সাংস্কৃতিক ও সামাজিক পরিচয়ও বটে।
বিশ্বের নানা দেশে লেসবিয়ান নারীরা সমান অধিকার, সামাজিক স্বীকৃতি ও নিরাপত্তার দাবিতে কাজ করে যাচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

সূচনাটা কোথায়?

এই দিবসের সূচনা হয় ১৯৮০ সালে অস্ট্রেলিয়ার নিউজিল্যান্ডে, একদল নারী অধিকারকর্মীর উদ্যোগে। তারা চেয়েছিলেন এমন একটি দিন, যেদিন লেসবিয়ান নারীরা নিজেদের প্রকাশ করতে পারেন, সামাজিক বাঁধন ছেঁড়ে গর্বের সঙ্গে নিজেদের পরিচয় তুলে ধরতে পারেন।

পরবর্তীতে, দিনটি বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে, বিশেষ করে যুক্তরাজ্য, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে—যেখানে নানা সংগঠন, শিল্পকলা প্রদর্শনী, আলোচনাসভা ও উৎসবের মাধ্যমে পালিত হয় এই দিন। কেন এই দিবস গুরুত্বপূর্ণ?

বিশ্বজুড়ে আজও বহু নারী নিজেদের যৌন পরিচয় গোপন করে জীবন কাটান সামাজিক ভয়ের কারণে। এই দিনটি তাদের জন্য এক ‘নিরাপদ স্পেস’— যেখানে তারা নিজেদের গল্প বলতে পারেন, ভালোবাসাকে গর্বের সঙ্গে ঘোষণা করতে পারেন, এবং সমাজকে স্মরণ করিয়ে দেন— ভালোবাসার কোনো একক সংজ্ঞা নেই।

লেসবিয়ান সম্প্রদায় ইতিহাস জুড়ে সমাজের অনেক আন্দোলনের অংশ। নারী অধিকার, শ্রম অধিকার, ও নাগরিক অধিকারের সংগ্রামে তাদের অবদান গুরুত্বপূর্ণ হলেও, অনেক সময়ই তাদের কণ্ঠ উপেক্ষিত হয়েছে। এই দিবস তাই শুধু উদযাপন নয়— এটি এক দৃশ্যমানতার দিন।

উদযাপনের নানা রূপ

প্রতি বছর এই দিনে অনেক দেশে প্যারেড, সেমিনার, আর্ট প্রদর্শনী, চলচ্চিত্র প্রদর্শন ও মিউজিক ফেস্টিভ্যাল হয়। অনলাইনেও হ্যাশট্যাগ #InternationalLesbianDay ট্রেন্ড করে, যেখানে হাজারো মানুষ শেয়ার করেন নিজেদের গল্প, অনুপ্রেরণার কথা ও ভালোবাসার বার্তা।

বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষাপটে এই দিনটি এখনও খুব বড় পরিসরে পালিত না হলেও, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম ধীরে ধীরে বৈচিত্র্য ও সহনশীলতার সংস্কৃতি গড়ে তুলছে।

ভালোবাসার চেয়েও বেশি কিছু

এটি আত্মমর্যাদা, সাহস ও মানবাধিকারের প্রতীক।
যে নারী সমাজের নিয়ম ভেঙে নিজের সত্যিকারের সত্তাকে গ্রহণ করেন, তিনি সমাজে পরিবর্তনের প্রতীক হয়ে ওঠেন।

অন্তর্ভুক্তির পথে

আজকের বিশ্বে ‘প্রেম’ কেবল রোমান্টিক অনুভূতি নয়, বরং এক সামাজিক দায়িত্বও—সব ধরনের ভালোবাসাকে মর্যাদা দেওয়া। ইন্টারন্যাশনাল লেসবিয়ান ডে আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ‘যেখানে ভালোবাসা আছে, সেখানে স্বাধীনতা আছে।’

তাই, এই দিনটি কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর নয়; এটি মানবতার, গ্রহণযোগ্যতার, এবং একে অপরকে বুঝে নেওয়ার দিন। ভালোবাসার পৃথিবী তখনই সম্পূর্ণ হয়, যখন সবাই নিজের মতো করে ভালোবাসার অধিকার পায়।

সারাবাংলা/এফএন/এএসজি

আন্তর্জাতিক লেসবিয়ান দিবস