Thursday 09 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চিঠির গন্ধে ভালোবাসা: ডাক দিবসে এক হারানো সময়ের গল্প

ফারহানা নীলা
৯ অক্টোবর ২০২৫ ১৩:২৯

সকালটা রোদে গ্রাম ঝলমলে। সেই গ্রামের মাটির পথ ধরে সাইকেলের টুং টাং আওয়াজ করে এগিয়ে আসছিলেন ডাকপিয়ন রহিম মিয়া। কাঁধে পুরনো বস্তার ব্যাগ, মুখে পরিচিত হাসি। রহিম মিয়ার সাইকেল সাথে সাথে দৌড়ে আসছিল গ্রাম-এর ছেলেমেয়েরা। মাটির ঘরের উঠানে ধান মাড়াচ্ছিলো গাঁয়ের বঁধুরা। সেখানে সাইকেল থামতেই গ্রামের ছোটো শিশুরা দৌড়ে এসে বলে, ‘রহিম কাকা, রহিম কাকা, আজ কার কার চিঠি আছে?’ রহিম মিয়া মুচকি হেসে ব্যাগ ঘেঁটে বের করলেন হলুদ খাম— একটা খাম হাতে নিয়ে বললেন, ‘রুবিনা বোন, তোমার জন্য এসেছে বিদেশ থেকে।’

ধান মাড়ানো বন্ধ করে, রুবিনা বেগম হাত কাঁপতে কাঁপতে চিঠিটা নিলেন। প্রবাসে থাকা স্বামীর চিঠি— কতদিন পর তার খবর এল! চিঠির কাগজে লেগে থাকা হালকা পারফিউমের গন্ধ যেন তাকে মুহূর্তেই নিয়ে গেল দূর আরবের মরুপ্রান্তে। চোখ ভিজে গেল, তবু মুখে ছোট্ট হাসি— যেন ভালোবাসা কাগজ ছুঁয়ে ফিরে এল ঘরে।

বিজ্ঞাপন

কেবল পরিবার নয়, প্রেমও একসময় বেঁচে থাকত চিঠির পাতায়। কলেজের বারান্দায় গোপনে আদান-প্রদান হতো চিরকুট— ‘আজ বিকেলে পুরোনো গাছটার নিচে দেখা করো।’ কখনো কাঁপা হাতে লেখা প্রেমপত্র, কখনো ডাকবাক্সে ফেলা একখানা চিঠি, যার জবাবের অপেক্ষায় কেটে যেত দিনরাত। প্রেমিকের কলমে আঁকা শব্দগুলো তখন ছিল সত্যিকারের অনুভূতির ভাষা— যেখানে ইমোজি নয়, ছিল হৃদয়ের স্পন্দন।

কিন্তু সেই কাগজে লেখা অনুভূতির যুগ এখন অনেকটাই হারিয়ে গেছে। প্রযুক্তি আমাদের দিয়েছে গতির আশ্চর্য উপহার, কিন্তু কে জানে, হয়তো কেড়ে নিয়েছে অপেক্ষার সৌন্দর্যও। এখন আর কেউ ডাকবাক্সের পাশে দাঁড়িয়ে থাকে না, চিঠির কাগজে ভাঁজ করা সুবাসও হারিয়ে গেছে ডিজিটাল স্ক্রিনের আলোয়।

তবু আজ, ৯ অক্টোবর, বিশ্ব ডাক দিবসে, আমরা আবার ফিরে দেখি সেই সোনালি দিনগুলোকে। ১৮৭৪ সালের এই দিনে গঠিত হয়েছিল ইউনিভার্সাল পোস্টাল ইউনিয়ন (UPU), যা বিশ্ব ডাক ব্যবস্থার সূচনা ঘটায়। বাংলাদেশ এই সংস্থার সদস্য হয় ১৯৭৩ সালে, আর তখন থেকেই দেশের প্রতিটি প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে যোগাযোগের নতুন দিগন্ত।

বাংলাদেশ ডাক বিভাগ আজ আর কেবল চিঠি নয়— ই-কমার্স, পার্সেল, মানি অর্ডার, এমনকি ডিজিটাল ফাইন্যান্স ‘নগদ’-এর মতো সেবায় যুক্ত হয়ে আধুনিক যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে। তবু তাদের হাতে থাকা সেই খাম, সাইকেলের ঘণ্টাধ্বনি, আর মুখের পরিচিত হাসি এখনও স্মরণ করিয়ে দেয় এক সময়ের উষ্ণ মানবিক সংযোগ।

প্রযুক্তির ঝলমলে যুগে আজও যদি আমরা পুরোনো কোনো চিঠির খাম খুলে দেখি, তার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে কেবল কাগজ নয়— একটি সময়, একটি সম্পর্ক, আর হৃদয়ের এক চিরন্তন ভালোবাসা।

চিঠি কখনো পুরোনো হয় না, কেবল তার পাঠক বদলায়।

সারাবাংলা/এফএন/এএসজি

এক হারানো সময়ের গল্প ডাক দিবস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর