Sunday 12 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ড্রাগন বাঁশ: প্রকৃতি আর মানুষের যৌথ শিল্পকর্ম

ফারহানা নীলা
১২ অক্টোবর ২০২৫ ১৭:৪৩

প্রথম দর্শনে মনে হবে, কোনো পরাবাস্তব স্বপ্নের জগতের এক অচেনা দৃশ্য। বিশাল সর্পিল বাঁশের অরণ্য যেন পৃথিবীর নয়, অন্য কোনো গ্রহের। অথচ অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি— এটি আসলে আমাদের পরিচিত বাঁশই! মধ্য চীনের ঘন বাঁশবনে দেখা মেলে এ আশ্চর্য কাঠামোর, যাকে স্থানীয়রা বলেন ‘ড্রাগন বাঁশ’।

বাঁশ সাধারণত সোজা সূর্যের আলো খুঁজে ওপরে উঠে যায়। কিন্তু এখানে প্রতিটি কাণ্ড জট পাকানো সর্পিল গোলকধাঁধার মতো। যেন প্রকৃতিই সমস্ত নিয়ম ভেঙে দিয়েছে। আসলে এর পেছনে রয়েছে মানুষের অবিশ্বাস্য সৃজনশীলতা আর প্রকৃতির সঙ্গে এক মায়াবী বোঝাপড়া।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, ড্রাগন বাঁশ কোনো জেনেটিক পরিবর্তনের ফল নয়, বরং এক দুর্লভ শিল্পকলা ‘আর্বোরিস্কাল্পচার’ বা জীবন্ত ভাস্কর্যের উদাহরণ। বহু বছর আগে কিছু দক্ষ কারিগর কচি বাঁশকে ধীরে ধীরে বাঁকিয়ে বেঁধে দিয়েছেন, দিক পরিবর্তন করেছেন বারবার। বাঁশ বেড়ে উঠতে চেয়েছে নিজের মতো করে, কিন্তু প্রতিটি ধাপে তাকে চালিত করা হয়েছে নির্দিষ্ট পথে।

বিজ্ঞাপন

ফলাফল—আজকের এই বিরল দৃশ্য। প্রায় ৫০ থেকে ৬০ মিটার দীর্ঘ প্রতিটি বাঁশ যেন প্রকৃতির নয়, কোনো শিল্পীর তুলি দিয়ে আঁকা। দাঁড়িয়ে থাকা এই সর্পিল বাঁশগুলো দেখতে একদিকে শৈল্পিক, অন্যদিকে বিস্ময়কর।

ভাবুন তো, কচি চারাগুলো থেকে এমন কাঠামো দাঁড় করাতে কত বছরের ধৈর্য আর শ্রম লেগেছে! প্রকৃতি নিজেই যেভাবে বাঁশকে দ্রুত বেড়ে ওঠার শক্তি দিয়েছে, মানুষ সেটিকে ব্যবহার করেছে নকশা তৈরির ক্যানভাস হিসেবে। হয়তো কয়েক দশক ধরে কেউ প্রতিদিন এই বাঁশগুলোর পাশে দাঁড়িয়ে তাদের বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করেছে, সময়মতো দিক পাল্টে দিয়েছে। আজ তাদের শ্রমের ফলেই প্রকৃতি দাঁড় করিয়েছে এক অনন্য ভাস্কর্য।

ড্রাগন বাঁশ তাই শুধু একটি উদ্ভিদ নয়, বরং মানুষ ও প্রকৃতির এক যৌথ কীর্তি। আধুনিক স্থাপত্য কিংবা ভাস্কর্য যতই প্রযুক্তিনির্ভর হোক, এই বাঁশ আমাদের মনে করিয়ে দেয়—প্রকৃতিকে সঙ্গী করে শিল্প সৃষ্টির সম্ভাবনা অসীম।

একটু দূরে দাঁড়িয়ে এই বাঁশবন দেখলে মনে হয় যেন ড্রাগন নিজের শরীর কুণ্ডলী পাকিয়ে শুয়ে আছে। এই নামকরণ তাই যথার্থ। প্রকৃতির শক্তি আর মানুষের শৈল্পিক স্পর্শের মেলবন্ধনেই জন্ম নিয়েছে এমন এক সৌন্দর্য, যা একইসঙ্গে রহস্যময়, বিস্ময়কর আর অনুপ্রেরণাদায়ী।

সারাবাংলা/এফএন/এএসজি

ড্রাগন বাঁশ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর