Monday 13 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শীতের আগমনের আগেই জমে উঠেছে যশোরের গদখালী ফুলের বাজার

সানজিদা যুথী
১৩ অক্টোবর ২০২৫ ১৭:৩৫

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের ছোট্ট এক গ্রাম—যশোরের গদখালী। নামে ছোট্ট হলেও, খ্যাতিতে বিশাল! দেশজুড়ে এখন এক নামেই পরিচিত এই জায়গা—বাংলাদেশের ফুলের রাজধানী হিসেবে।

শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে গদখালী যেন আবারও জেগে উঠেছে রঙে, গন্ধে আর ব্যস্ততায়। শীতকাল মানেই ফুলের মৌসুম, আর এই মৌসুমের শুরুতেই এখানে ফুল বিক্রির ধুম পড়ে গেছে। ভোরের কুয়াশা ভেদ করে মাঠে মাঠে দেখা যায় রঙিন ফুলের সমারোহ— কেউ গোলাপ তুলছেন, কেউ গাঁদা, কেউ আবার রজনীগন্ধা বেঁধে ট্রাকে তুলছেন ঢাকামুখী পথে পাঠানোর জন্য।

চোখ যতদূর যায়, শুধু ফুল আর ফুল। গোলাপ, গাঁদা, গ্লাডিওলাস, জারবেরা, চন্দ্রমল্লিকা, রজনীগন্ধা— সব রঙের, সব ঘ্রাণের মিলনে গদখালী এখন এক জীবন্ত চিত্রকর্ম। ভোরের প্রথম আলোয় যখন বাজার জমে ওঠে, মনে হয় যেন উৎসব চলছে—
ফুলের উৎসব, জীবিকার উৎসব, আর আশার উৎসব।

বিজ্ঞাপন

প্রায় চার হাজার বিঘা জমিতে ফুল চাষ হয় এই অঞ্চলে। এই চাষ শুরু হয়েছিল আশির দশকে—১৯৮২ সালে শের আলী সরদার নামের এক কৃষকের হাত ধরে। তার সেই ছোট্ট উদ্যোগই এখন বদলে দিয়েছে পুরো এলাকার অর্থনীতি। আজ গদখালী আর আশপাশের প্রায় ৯০টি গ্রামে হাজারো পরিবার জীবিকা নির্বাহ করে ফুলের ব্যবসায়।

বিশেষ করে এখন, শীতের শুরুতেই ফুলের চাহিদা বেড়েছে অনেক। ভালোবাসা দিবস, বসন্ত উৎসব কিংবা পয়লা ফাল্গুনের আগে থেকেই ব্যবসায়ীরা ফুল সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। মাত্র কয়েকদিনেই কোটি টাকার ফুল বিক্রি হচ্ছে এই বাজারে।

তবে শুধু ব্যবসা নয়, গদখালী এখন এক রঙিন পর্যটনকেন্দ্রও। প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসে ফুলের মাঠ দেখতে, ছবি তুলতে,আর প্রকৃতির রঙে ভিজে যেতে। রোদে ঝলমলে ফুলের সারি, মৌমাছির গুঞ্জন আর প্রজাপতির উড়াউড়ি— সব মিলিয়ে মনে হয় যেন অন্য এক স্বপ্নরাজ্য।

তবে এই সৌন্দর্যের পাশাপাশি আছে কিছু চ্যালেঞ্জও— ফুল সংরক্ষণ আর পরিবহনে এখনো অবকাঠামো ঘাটতি আছে। ফুল নষ্ট হয়ে যায়, দাম ওঠানামা করে, অনেক সময় চাষিরা ন্যায্য মূল্য পান না। তবুও তারা থেমে নেই— কারণ গদখালীর এই মাটিতে শুধু ফুলই ফোটে না, ফোটে স্বপ্ন—রঙে, গন্ধে, আর পরিশ্রমের আলোয় গড়া জীবনের স্বপ্ন।

এই গদখালীই আজ প্রমাণ— বাংলাদেশের কৃষি শুধু ফসলেই সীমাবদ্ধ নয়, ফুলেও ফুটে ওঠে আমাদের আশা, ভালোবাসা আর জীবিকার রঙিন গল্প।

সারাবাংলা/এসজে/এএসজি