Sunday 19 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

১২৩ বছরেও নেভেনি যে বাল্ব: আলোয় ভরা এক আশ্চর্য ইতিহাস

ফারহানা নীলা
১৯ অক্টোবর ২০২৫ ১৫:২৬

ভাবুন তো, আপনার ঘরে একটা বাল্ব লাগালেন— এক মাস না হয় এক বছর চলল, কিন্তু শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে যদি সেটা জ্বলে থাকে! অবিশ্বাস্য শোনালেও ক্যালিফোর্নিয়ার লিভারমোর শহরে এমনই এক আশ্চর্য বাল্ব রয়েছে। এই বাল্বটি টানা ১২৩ বছর ধরে আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে, আর এর নাম উঠেছে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডেও।

আলো জ্বালানোর ইতিহাস

বাতি বা প্রদীপ নিয়ে মানুষের কৌতূহল হাজার বছরের পুরোনো। প্রাচীন মিশরে প্রদীপ ব্যবহার করা হতো, আবার রূপকথায় আছে আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের গল্প। তবে সেগুলো ছিল কেবল কাহিনি। বাস্তবে বৈদ্যুতিক আলো আমাদের জীবনে এনেছিলেন টমাস আলভা এডিসন। যদিও তার আগেও একাধিক গবেষক বৈদ্যুতিক বাতি নিয়ে কাজ করেছিলেন, এডিসন প্রথম বাণিজ্যিকভাবে টেকসই বাল্ব উদ্ভাবন করেন। আজ সেই উদ্ভাবন আধুনিক সভ্যতার অন্যতম ভিত্তি।

বিজ্ঞাপন

লিভারমোরের অবিশ্বাস্য বাল্ব

১৯০১ সালের জুন মাসে লিভারমোর ফায়ার স্টেশনে একটি বিশেষ বাল্ব লাগানো হয়। আশ্চর্যের বিষয়, সেই বাল্বটি এখনো জ্বলছে। মাত্র চার ওয়াট শক্তি খরচ হয়, অথচ আলো ছড়াতে ছড়াতে একবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি এসে দাঁড়িয়েছে।

এই বাল্ব তৈরি করেছিল শেলবি ইলেকট্রিক কোম্পানি। প্রথমবার এটি বন্ধ করা হয়েছিল ১৯৩৭ সালে, সেটাও শুধু তার বদলানোর জন্য। এরপর আবার জ্বলে উঠেছিল, আর থামেইনি। ২০০১ সালে শতবর্ষী বাল্বটির জন্মদিনও পালন করা হয়েছিল জমকালোভাবে— সংগীত আর পার্টি দিয়ে!

রহস্য কোথায়?

প্রশ্ন হলো—এতদিন ধরে এই বাল্ব জ্বলছে কীভাবে? বিজ্ঞানীরা বহুবার পরীক্ষা করেছেন, কিন্তু আশ্চর্যজনক কোনো ভিন্নতা পাননি। সাধারণ কার্বন ফিলামেন্ট দিয়েই বানানো হয়েছিল। তবু শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে টিকে থাকা এক ধরনের রহস্যই বটে।

এ নিয়ে অনেকে মজার তত্ত্ব দাঁড় করিয়েছেন। কেউ বলেন, আগের দিনে জিনিসপত্র বানানো হতো মজবুত আর স্থায়ী করে। আবার কেউ মজা করে বলেন, যদি কোম্পানিগুলো এমন টেকসই বাল্ব বানাতো, তাহলে তো আজ বাল্ব বিক্রির বাজারটাই শেষ হয়ে যেত!

ছোটখাটো বিপত্তি

২০১৩ সালে হঠাৎ একদিন বাল্বটি নিভে যায়। সবার ধারণা হয়েছিল, হয়তো অবশেষে শতবর্ষী আলোর মৃত্যু হলো। কিন্তু পরীক্ষা করে দেখা গেল, আসল সমস্যা বাল্বে নয়, তারে! তার বদলানোর পর আবার উজ্জ্বল হয়ে ওঠে সেই ইতিহাসঘেরা আলো।

আলো দেখতে ভিড়

আজ এই বাল্ব শুধু আলো দেয় না, হয়ে উঠেছে পর্যটনের আকর্ষণ। লিভারমোরের ফায়ার স্টেশন অনেকটা মিউজিয়ামের মতো হয়ে গেছে। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসেন বাল্বটি দেখার জন্য। এমনকি এর ওপর নজরদারি রাখতে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরাও।

গিনেস রেকর্ড আর মানুষের বিস্ময়

গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে এই বাল্বের নাম নথিভুক্ত রয়েছে। এটি শুধু বৈদ্যুতিক প্রযুক্তির নয়, মানব সভ্যতারও এক আশ্চর্য নিদর্শন। মানুষের মনে প্রশ্ন জাগে— কোনো জিনিস যদি সত্যিই এতদিন টিকে থাকতে পারে, তবে কেন আজকের প্রযুক্তি এত ভঙ্গুর?

শেষ কথা

আজকের দিনে যেখানে মোবাইল চার্জার থেকে শুরু করে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি অল্পতেই নষ্ট হয়ে যায়, সেখানে এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে একটি ছোট্ট বাল্ব। লিভারমোরের সেই বাল্ব আমাদের মনে করিয়ে দেয়—আসল টেকসই জিনিস কেবল প্রযুক্তির কৌশলে নয়, বরং মানুষের কল্পনা আর অধ্যবসায়ের মধ্যেই নিহিত।

এই বাল্ব প্রমাণ করেছে— একটা আলো যদি জ্বলে, তবে তা শতাব্দী পার করেও নিভে যেতে বাধ্য নয়।

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর