Sunday 19 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এক সপ্তাহে ভয়াবহ তিন অগ্নিকাণ্ড— অবহেলা নাকি নাশকতা?

সানজিদা যুথী
১৯ অক্টোবর ২০২৫ ১৮:৪২

এক সপ্তাহ—মাত্র সাত দিন। আর এই সাত দিনেই তিনটি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড— ঢাকা, চট্টগ্রাম, শাহজালাল বিমানবন্দর। দেশের তিন প্রান্তেই দাউ দাউ করে জ্বলেছে আগুন।জ্বলেছে মানুষের জীবন, ভেঙে গেছে শত স্বপ্ন, থেমে গেছে অনেকে জীবিকা।

রাজধানীর মিরপুরের রূপনগর শিয়ালবাড়ি _

মঙ্গলবার সকালের সেই আগুন যেন পুরো দেশকে কাঁপিয়ে দেয়। একটি কেমিক্যাল গোডাউন থেকে ছড়িয়ে পড়া আগুন গ্রাস করে পাশের গার্মেন্টস কারখানাটিকে।

দম বন্ধ হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৬ জন শ্রমিক _

যাদের বেশিরভাগই ছিলেন নারী, যাদের জীবনের একমাত্র স্বপ্ন ছিল—একটু ভালো থাকা, সংসার চালানো, সন্তানদের মুখে হাসি ফোটানো। কিন্তু তারা ফিরে গেলেন না…কারণ ভবনের ছাদের গেট ছিল বন্ধ,কারণ কোনো নিরাপত্তা পরিকল্পনা ছিল না, আর কারণ— আমরা বারবার ভুলে যাই, আগুনের ভয়াবহতা শুধুই খবর নয়,এটা কারও বেঁচে থাকার গল্পের শেষ লাইন।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলের (সিইপিজেড) সেই আটতলা ভবন _

আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে সকাল ৭টা ২৫ মিনিটে, কিন্তু তার আগেই ছাই হয়ে যায় দুটি প্রতিষ্ঠান— অ্যাডামস ক্যাপ অ্যান্ড টেক্সটাইল লিমিটেড এবং জিহং মেডিকেল কোম্পানি।

শত কোটি টাকার মালামাল, শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ, দেশের রপ্তানি সম্ভাবনা— সবই মিশে যায় ধোঁয়ার কুণ্ডলীতে। ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী— সবাই মিলে আগুন নেভায়, কিন্তু প্রশ্নটা থেকে যায়— আগুনের আগেই যদি প্রতিরোধ গড়া যেত,তাহলে হয়তো এই ক্ষতি, এই কান্না— এড়ানো যেত।

ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ _

দেশের অর্থনীতির হৃদপিণ্ড বলা যায় যাকে, সেখানে ২০ ঘণ্টা ধরে জ্বলেছে আগুন।
পুড়ে গেছে আমদানি-রপ্তানির গুদাম, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাজারো ব্যবসায়ী, ধোঁয়ায় ঢেকে গেছে আকাশ, আর এক টুকরো কালো ছায়া নেমে এসেছে পুরো ব্যবস্থার ওপর।

একটা প্রশ্ন এখন জোরালো হয়ে উঠছে—এতো আগুন, এত মৃত্যু, এর দায় নেবে কে?
কেমিক্যাল গোডাউন কেন আবাসিক ভবনে থাকবে?
গার্মেন্টস কারখানার ছাদের গেট বন্ধ কেন থাকবে?
এতো বড় স্থাপনায় কেন অগ্নি-নিরাপত্তার সরঞ্জাম থাকে না? আর রাষ্ট্রীয় নজরদারি কোথায়?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে শিল্প স্থাপনার ৭০ শতাংশেই এখনো নেই আন্তর্জাতিক মানের ফায়ার সেফটি।লাইসেন্স নেওয়া হয়, কিন্তু নিয়ম মানা হয় না।
প্রশিক্ষণহীন কর্মীরা কাজ করেন দাহ্য পদার্থের পাশে, আর ফায়ার হাইড্রেন্টগুলো থাকে বন্ধ বা অচল।

প্রতি অগ্নিকাণ্ডের পরই তদন্ত কমিটি হয়, কিন্তু জোড়ালো ভাবে উঠে আসেনা এটা কি রাষ্ট্রী অবহেলা নাকি নাশকতা?

প্রতিবেদন লেখা হয়— কিন্তু কিছুদিন পর সেই কাগজগুলো হারিয়ে যায় অন্য ফাইলে,আর আমরা হারাতে থাকি আরেকটি জীবন, আরেকটি পরিবার, আরেকটি স্বপ্ন।

আগুন নিভে যায়, ধোঁয়া মিলিয়ে যায়,কিন্তু রয়ে যায় পোড়া গন্ধ _

যে গন্ধে মিশে থাকে অসতর্কতার দগদগে ক্ষত,দায় এড়িয়ে যাওয়ার সংস্কৃতি, আর রাষ্ট্রীয় উদাসীনতার ছায়া।

এই আগুন শুধু ভবন পুড়ায় না, এটা পুড়িয়ে দেয় ভবিষ্যৎ, পুড়িয়ে দেয় আস্থা, পুড়িয়ে দেয় সেই প্রশ্নকে— ‘এই দেশে বাঁচা কি সত্যিই নিরাপদ?’

লেখক: সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, সারাবাংলা ডটনেট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর