।। মাকসুদা আজীজ, অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর।।
পুতুল বললেই গোলগাল গাল, টুকটুকে ঠোঁট, এক ঢালা চুল সব মিলিয়ে দারুণ সুন্দর একটা মানুষের অবয়ের ছবি ভেসে আসে। তবে পুতুল কি শুধু সুন্দরের প্রতিমা নাকি? তাহলে এত সব বাহারী পুতুল আসার আগে ছেঁড়া টুকরো কাপড় বেঁঁধে শুধু কল্পনা শক্তি দিয়ে যে পুতুলগুলো শিশুদের জগৎ জুড়ে থাকত তারা কি পুতুল ছিল না?
পুতুল শুধু কোনো খেলনা না এটা শিশুদের কল্পনার বহিঃপ্রকাশ। আর শিশুদের নরম কাদামাটির মতো মনে কত শত কল্পনা দানাবাঁধতে পারে! শুধু সেই জগতের দরজায় ছোট্ট একটু কড়া নেড়ে দিলেই হয়। বাকিটা তো তাদের জন্য জলের মতোই সহজ!
জলপুতুল পাপেট স্টুডিও। তবে জল বা পানির সঙ্গে তাদের পুতুল তৈরির কোনো সম্পর্ক নেই। শুধু তারা যেভাবে পুতুল তৈরি করে সেই প্রক্রিয়াটা জলের মতো সহজ। একটা ঠোঙ্গা, একটা পানির খালি বোতল অথবা আইসক্রিমের কাঠি। একটু সুতা, একটু আঠা, একটা কলম… একমাত্র দুষ্পাপ্র যে জিনিসটা লাগে তা হচ্ছে রঙিন কাগজ। এটা নিয়েই জলপুতুল পাপেট স্টুডিও এগিয়ে আসে শিশুদের কাছে। তারপর তাদের কিছুটা কারিগরি জ্ঞান ও শিশুদের অসীম কল্পনা দিয়ে তৈরি হয় পুতুল, সেই পুতুলদের নিয়ে গল্প আর চমৎকার আনন্দময় একটা সময়।
মাত্র ষোলজন মানুষ নিয়ে এই পাপেট স্টুডিও। তারা প্রত্যেকেই জীবিকার জন্য অন্য কিছু কাজ করেন। জলপুতুল তাদের অতিরিক্ত কাজ। আর স্টুডিওর পরিধি সারাটা বাংলাদেশ। ১৬ জন মানুষ যে যখন সময় পায় ছুটে যায় দেশের নানানপ্রান্তে। তাদের একটাই কাজ, দেশের আনাচে কানাচে থাকা শিশুদের পুতুল বানানো শিখানো।
২০০৫ সাল থেকে জলপুতুল পাপেট স্টুডিও শিশুদের জন্য এ কাজ করে আসছে। স্কুলে যাওয়া শিশু, পথশিশু সবাই তাদের এই পুতুল শিল্পের ভক্ত। এমনকি যেসব শিশু প্রতিবন্ধী তাদের জীবনেও এই পুতুল তৈরি কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে না, এমনই সোজা এই পুতুল বানানো।
জলপুতুল পাপেট স্টুডিও কিছুদিন আগেই ঘুরে এলো রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে সেখানের শিশুদের ছোট্ট তুচ্ছ জিনিস থেকে শুধু কল্পনাশক্তি কাজে লাগিয়ে বানাতে শেখালো দারুন সব পুতুল। এমনিতে তাদের ইচ্ছে ছিল এক দুইশ শিশুকে পুতুল বানানো শেখাভে কিন্তু বাড়ি ছাড়া, দেশ ছাড়া, স্বপ্ন হারা শিশুগুলো যেন স্বপ্নের খোঁজ পেলো এখানে এসে। একের পর এক শিশু কাকে ফেলে কাকে শেখানো হবে এই নিয়েই যখন হিমসিম খাচ্ছিলেন আয়োজকরা তখন দেখা গেলো এখানেই কিছু শিশু আছে যারা সহজাত দক্ষতায় আয়ত্ত্ব করে নিয়েছে পুতুল বানানোর কলাকৌশল।
এরপর শিশুরাই বানালো পুতুল, ফেলে দেয়া বোতল, বাজার আনার ঠোঙা, টুকড়া কাপড়, কাগজ। কে জানত এত তুচ্ছ জিনিস জুড়ে যে একটা শিশুর শৈশবকে রঙ্গিন করে দেওয়া যায়।
এইবার পুতুলদেরও কিছু করার পালা। তাদের নিয়ে একটা গল্প লিখলো শিশুরাই। সেই গল্প আবার মঞ্চস্থ করা হলো ঠিক পুতুল নাচের মতো। আনন্দের তরঙ্গ বয়ে গেলো দর্শকদের।মধ্যে। সত্যি শিশুদের আনন্দ দেওয়া জলের মতোই সহজ কাজ।
সারাবাংলা/এমএ/এমআই