Monday 27 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রাচীন চীনা উঠোন: গরমে ঘর ঠান্ডা রাখার প্রাকৃতিক কৌশল

ফারহানা নীলা
২৭ অক্টোবর ২০২৫ ১৩:৪৯

গরমে স্বস্তি পেতে আমরা প্রায়ই এসির ওপর নির্ভর করি। কিন্তু কয়েকশ বছর আগে থেকেই চীনের মানুষ এমন স্থাপত্য কৌশল ব্যবহার করত, যেখানে বিদ্যুৎ ছাড়াই ঘর ঠান্ডা থাকত। এই কৌশলের মূল রহস্য হলো বাড়ির ভেতরে উঠোন বা খোলা আঙিনা রাখা।

চীনের ঐতিহ্যবাহী বাড়িতে দেখা যায়, মাঝখানে আয়তাকার ফাঁকা জায়গা রাখা হতো যাকে বলা হয় ‘তিয়ান জং’। উঠোনের চারপাশে ঘর থাকলেও কেন্দ্রে খালি জায়গা থাকত। এর ফলে বাতাস সহজে চলাচল করত, সূর্যের আলো নিয়ন্ত্রিতভাবে প্রবেশ করত এবং বৃষ্টির পানি জমা হতো।

গবেষণায় দেখা গেছে, এমন উঠোনওয়ালা ঘরের ভেতরের তাপমাত্রা বাইরের তুলনায় গড়ে ২.৫ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম হয়। বাতাস চলাচলের কারণে ভেতরে তৈরি হয় এক ধরনের ‘চিমনি প্রভাব’। গরম বাতাস ওপরে উঠে বের হয়ে যায়, আর ঠান্ডা বাতাস ভেতরে ঢুকে ঘরকে প্রাকৃতিকভাবে শীতল করে।

বিজ্ঞাপন

চীনের আনহুই, সিচুয়ান, জিয়াংসি অঞ্চলের শতবর্ষী বাড়িগুলোতে এখনো এই কৌশল দেখা যায়। ধনী পরিবারগুলো একাধিক উঠোন রাখত যাতে আলো ও বাতাসের প্রবাহ আরও উন্নত হয়। অনেক উঠোনে পানি জমিয়ে রাখা হতো, যা বাষ্প হয়ে বাতাস ঠান্ডা করত। এটি ছিল প্রাকৃতিক ‘ইভাপোরেটিভ কুলিং সিস্টেম’।

উঠোন শুধু শীতল রাখার জায়গা নয়, পরিবার ও প্রতিবেশীদের মিলনস্থলও ছিল। আড্ডা, উৎসব আর পারিবারিক জমায়েত এই খোলা জায়গাতেই হতো। ফলে সামাজিক বন্ধনও দৃঢ় হতো।

আজকের দিনে বহুতল ভবন আর এয়ারকন্ডিশনের কারণে এমন স্থাপত্য অনেকটাই হারিয়ে গেছে। তবে জলবায়ু পরিবর্তন আর বিদ্যুতের বাড়তি খরচ মানুষকে আবার টেকসই স্থাপত্য নিয়ে ভাবাচ্ছে। আধুনিক স্থপতিরাও এখন প্রাচীন এই কৌশল কাজে লাগাচ্ছেন। চীনের কয়েকটি নতুন টাওয়ার মাঝখানে বড় খোলা জায়গা রেখে তৈরি হয়েছে। এতে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়, প্রাকৃতিক বাতাস ও আলো পাওয়া যায়।

আমাদের দেশেও চাইলে এ কৌশল ব্যবহার করা সম্ভব। বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্টে উঠোন বা খোলা জায়গা রাখলে গরমে স্বস্তি মিলবে, বিদ্যুতের ব্যবহার কমবে আর প্রকৃতির সঙ্গেও ঘনিষ্ঠতা বাড়বে।

চীনারা আমাদের শিখিয়েছেন, প্রকৃতিকে কাজে লাগিয়েই ঘর ঠান্ডা রাখা যায়। প্রযুক্তি নয়, বুদ্ধিদীপ্ত নকশাই হতে পারে গরম মোকাবিলার সেরা সমাধান।