‘খড়ের ঘরে খড়খড়ি, খড়খড়ি ঘষে খড় খসখস…’
বলার সময়েই জিভটা যেন গিঁট খেয়ে যায়! এমন মজার বাক্য বা শব্দগুচ্ছ নিয়েই সারা বিশ্বের ভাষাপ্রেমীরা প্রতিবছর ৯ নভেম্বর উদ্যাপন করেন ‘টাং টুইস্টার ডে’ ‘Tongue Twister Day’ — এক অভিনব আন্তর্জাতিক দিবস, যার মূল উদ্দেশ্য ভাষার সৌন্দর্য, উচ্চারণ দক্ষতা ও মজাকে একত্রে উদ্যাপন করা।
কীভাবে শুরু হলো এই দিবস
‘Tongue Twister Day’–এর সূচনা হয় যুক্তরাষ্ট্রে, ভাষাবিদ ও শিক্ষাবিদদের উদ্যোগে। ধারণা করা হয়, ২০০৪ সালের দিকে এটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। দিনটি নির্ধারণ করা হয় প্রতি বছরের নভেম্বরের দ্বিতীয় রবিবারে, যা ২০২৫ সালে পড়েছে ৯ নভেম্বর।
টাং টুইস্টার আসলে কী?
টাং টুইস্টার (Tongue Twister) হলো এমন একটি বাক্য বা বাক্যাংশ, যা দ্রুত উচ্চারণ করা কঠিন— বিশেষ করে একাধিকবার টানা বললে জিভ যেন জড়িয়ে যায়।
এর লক্ষ্য শুধু মজা নয়, বরং উচ্চারণ ও ভাষাগত নিখুঁততা অনুশীলনের একটি চমৎকার উপায়। ভাষাতত্ত্ববিদরা বলেন, টাং টুইস্টার আসলে মানুষের বক্তৃতা অঙ্গ—বিশেষ করে জিহ্বা, ঠোঁট ও স্বরযন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ দক্ষতা বাড়ায়।
বিশ্বজুড়ে উদযাপন
বিভিন্ন দেশে এই দিনটিতে ভাষা অনুশীলন প্রতিযোগিতা, উচ্চারণ কর্মশালা ও ‘Tongue Twister Challenge’ অনুষ্ঠিত হয়।
স্কুল, ভাষা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও রেডিও স্টেশনগুলোতে মজার প্রতিযোগিতা চলে— কে সবচেয়ে দ্রুত জটিল বাক্যটি স্পষ্টভাবে বলতে পারে!
সোশ্যাল মিডিয়ায় #TongueTwisterDay হ্যাশট্যাগে ভরে ওঠে ইংরেজি ও অন্যান্য ভাষার মজার বাক্যচর্চা।
জনপ্রিয় কিছু টাং টুইস্টার
বাংলায়—
‘খড়ের ঘরে খড়খড়ি, খড়খড়ি ঘষে খড় খসখস।’
‘চিনি পাত্রে চিনে চিনি চেনা চেনা চিনি।’
‘বকুল বনে বক বকে, বক বনে বকুল বকে।’
ইংরেজিতে—
She sells seashells by the seashore.
Peter Piper picked a peck of pickled peppers.
How much wood would a woodchuck chuck if a woodchuck could chuck wood?
ভাষা শেখার মজার কৌশল
ভাষা বিশেষজ্ঞদের মতে, টাং টুইস্টার উচ্চারণ অনুশীলনের পাশাপাশি মস্তিষ্কের নিউরোলজিক্যাল সংযোগও মজবুত করে।
বিশেষ করে যারা দ্বিতীয় ভাষা শেখেন (যেমন ইংরেজি বা বাংলা), তাদের উচ্চারণ নির্ভুল করতে টাং টুইস্টার এক কার্যকরী ও বিনোদনমূলক পদ্ধতি।
বাংলা ভাষার টাং টুইস্টার সংস্কৃতি
বাংলা ভাষাতেও টাং টুইস্টার বা ‘জিভ জড়ানো বাক্য’ বেশ জনপ্রিয়। শিশুদের ভাষা শেখানোর অংশ হিসেবে এগুলো ব্যবহৃত হয়।
বাংলা সাহিত্যের শিশুপত্রিকা ও রেডিও অনুষ্ঠানে ‘জিভ জড়ানো প্রতিযোগিতা’ বহুদিন ধরেই বিনোদনের অংশ।
শেষ কথা
ভাষা শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, এটি আনন্দ ও খেলার ক্ষেত্রও হতে পারে— এই বার্তাই দেয় টাং টুইস্টার ডে। ভাষার এই মজাদার খেলা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়— ভুল না করে কথা বলার চেয়ে, আনন্দ নিয়ে বলাটাই অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ!