Saturday 08 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সাদা ত্বক ও ভিন্ন চোখের বিস্ময় শিশু চেচনিয়ার আমিনা

ফারহানা নীলা
৮ নভেম্বর ২০২৫ ১৪:০৫

রোদে হাঁটলে চোখ আধবুঁজে আসে, কিন্তু তার হাসি কখনও ম্লান হয় না। চেচনিয়ার ১১ বছর বয়সী আমিনা ইপেন্দিভা যেন এক চলমান রূপকথা— চোখ দু’টির রঙ ভিন্ন, ত্বক দুধের মতো সাদা, আর চুল সূর্যের আলোয় রুপালি হয়ে ঝলমল করে।

এই ব্যতিক্রমী সৌন্দর্যের পেছনে আছে দুটি বিরল জিনগত অবস্থা— অ্যালবিনিজম এবং হেটারোক্রোমিয়া।

অ্যালবিনিজম: রঙহীনতার জেনেটিক রহস্য

অ্যালবিনিজম এমন এক অবস্থা যেখানে শরীরে মেলানিন নামক রঞ্জক পদার্থের অভাব থাকে। মেলানিনই আমাদের ত্বক, চোখ ও চুলের রঙ নির্ধারণ করে। এর ঘাটতি হলে ত্বক ও চুল ফ্যাকাশে বা সাদা দেখায়, চোখ হয় নীলচে বা ধূসর।

বিশ্বজুড়ে প্রতি ১৮ হাজারে প্রায় একজন মানুষ এই অবস্থায় জন্ম নেয়। অ্যালবিনো ব্যক্তিদের সূর্যের আলো থেকে ত্বক রক্ষায় বিশেষ সতর্ক থাকতে হয়, কারণ তাদের ত্বক সূর্যদগ্ধ হওয়ার আশঙ্কা বেশি।

বিজ্ঞাপন

আমিনার মা বলেন, ‘জন্মের পরই বুঝতে পারি মেয়েটি অন্যরকম। ডাক্তাররা জানান, সে অ্যালবিনিজমে আক্রান্ত— কিন্তু ওর চোখের ভিন্ন রঙ আমাদের সবাইকে বিস্মিত করে।’

হেটারোক্রোমিয়া: চোখের দুই রঙের জাদু

আমিনার এক চোখ নীল, অন্যটি সবুজাভ বাদামি। এই অবস্থাকে বলা হয় হেটারোক্রোমিয়া, যা ঘটে যখন চোখের আইরিসে রঞ্জকের পরিমাণ দুই চোখে সমান থাকে না।

বিশ্বে প্রতি কয়েক হাজার মানুষের মধ্যে একজনের এমন চোখ দেখা যায়। এটি সাধারণত ক্ষতিকর নয়, বরং একে অনেকেই ‘প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের এক অপূর্ব নিদর্শন’ বলে মনে করেন।

স্কুলে অন্যরকম পরিচিতি

স্কুলে প্রথম দিকে আমিনা অন্যদের কৌতূহলের কেন্দ্র ছিল। বন্ধুরা তার চোখ আর চুল দেখে অবাক হয়ে যেত। কেউ কেউ প্রশ্ন করত—’তুমি কি সত্যিই মানুষ?’ কিন্তু এখন সবাই তাকে ভালোবাসে। তার শিক্ষকরা বলেন, ‘আমিনা খুব মেধাবী, সে বিজ্ঞান আর আঁকায় দারুণ পারদর্শী। তার রঙহীন ত্বক নয়, বরং চিন্তা ও সৃজনশীলতাই ওর সবচেয়ে উজ্জ্বল রঙ।’

আলাদা হওয়াই সৌন্দর্য

অ্যালবিনিজম ও হেটারোক্রোমিয়া নিয়ে জন্মানো মানুষদের অনেক সময় সামাজিক বৈষম্যের মুখে পড়তে হয়। আফ্রিকার অনেক দেশে অ্যালবিনো শিশুদের এখনও কুসংস্কারের শিকার হতে হয়। কিন্তু আমিনার পরিবার এই ভিন্নতাকে আশীর্বাদ হিসেবে নিয়েছে।

আমিনা নিজেও জানে, সে ব্যতিক্রমী। সে বলে, ‘আমি আমার রঙ ভালোবাসি। আমি যেমন, তেমনই থাকতে চাই।’

বিজ্ঞানীরা যা বলছেন

চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা মনে করেন, এমন জিনগত বৈচিত্র্য মানুষকে আরও ভালোভাবে বোঝার সুযোগ দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যালবিনিজম বা হেটারোক্রোমিয়া উভয়ই বংশগত, তবে তা সব সময় পূর্বপুরুষদের মধ্যেই প্রকাশ পায় না—কখনও হঠাৎ করেই নতুন প্রজন্মে দেখা দিতে পারে।

শেষ কথা

আমিনা ইপেন্দিভা আজ চেচনিয়ায় শুধু এক কৌতূহল নয়, বরং বৈচিত্র্যের এক প্রতীক। তার সাদা ত্বক বা ভিন্ন চোখ নয়— তার আত্মবিশ্বাসই পৃথিবীকে শেখায়, সৌন্দর্য মানে একরকম হওয়া নয়, বরং নিজের মতো থাকা।