Tuesday 11 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ফাঁসির পরও ২০০ বছর ধরে বেঁচে আছে এক খুনির মাথা!

ফারহানা নীলা
১১ নভেম্বর ২০২৫ ১৭:১৪

লিসবনের এক কোণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরিতে কাচের এক জারে রাখা আছে একটি মানুষের মাথা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ধুলো জমেছে জারের গায়ে, কিন্তু ভিতরে থাকা মুখটি এখনো শান্ত, স্থির। যেন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। ইতিহাসের ভয়ংকরতম এক হত্যাকারীর মুখ সেটি— ডিয়োগো আলভেস।

দরিদ্রতার আঁধার থেকে অপরাধের জগতে

১৮১৯ সালে স্পেনের গ্যালিসিয়া শহরে দরিদ্র এক পরিবারে জন্ম ডিয়োগোর। ছোটবেলায় শিক্ষা পাননি, জীবিকার খোঁজে পাড়ি জমান পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে। কাজ না পেয়ে হতাশায় যখন দিন কাটে, তখনই খুলে যায় অপরাধের দরজা। অন্ধকারে ডুব দিতে শুরু করেন তরুণ ডিয়োগো।

মৃত্যুর সেতু: ‘Aqueduto das Águas Livres’

বিজ্ঞাপন

লিসবনের বিখ্যাত একটি সেতু ছিল তার অপরাধের কেন্দ্র। সন্ধ্যা নামলেই সেতুর নিচে ঘাপটি মেরে বসতেন ডিয়োগো। কৃষকরা শস্য বিক্রি করে ফেরার পথে তার হাতে পড়তেন। প্রথমে ডাকাতি, তারপর হত্যা। ১৮৩৬ থেকে ১৮৩৯ সালের মধ্যে প্রায় ৭০ জন মানুষকে হত্যা করে সে। মৃতদেহগুলো একে একে সেতু থেকে ফেলে দিত ২১৩ ফুট নিচের পানিতে।

আত্মহত্যা নয়, ছিল খুন

প্রথমে পুলিশ এসব মৃত্যু ‘আত্মহত্যা’ ভেবে মামলা বন্ধ করত। কিন্তু কয়েকটি মৃতদেহের গায়ে গভীর ক্ষতচিহ্ন দেখে সন্দেহ হয় তদন্তকারীদের। শুরু হয় অনুসন্ধান, আর তাতেই ফাঁস হয়ে যায় ডিয়োগোর ভয়ংকর রহস্য।

ডাক্তারদের বাড়িতে রক্তের দাগ

লুটপাটের পাশাপাশি শহরের ধনীদের টার্গেট করা শুরু করে ডিয়োগো। এক পর্যায়ে বিখ্যাত এক চিকিৎসকের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে চারজনকে হত্যা করে সে। এ ঘটনার পর পুলিশের জাল আরও আঁটসাঁট হয়। অবশেষে গ্রেপ্তার হন ডিয়োগো, স্বীকার করেন ভয়াবহ সব হত্যাকাণ্ড।

শেষ পরিণতি: ফাঁসির দড়িতে এক খুনি

১৮৪১ সালে আদালতের রায়ে ফাঁসি দেওয়া হয় ডিয়োগো আলভেসকে। কিন্তু এখানেই শেষ নয় তার গল্প। সেই সময় ইউরোপে ‘ফ্রেনোলজি’— মানব মস্তিষ্কের গঠন ও চরিত্র বিশ্লেষণ— নিয়ে গবেষণা চলছিল। বিজ্ঞানীরা অপরাধীর মস্তিষ্ক অধ্যয়ন করতে চাইলেন।

ইতিহাসে বন্দি এক মাথা

ফাঁসির পর ডিয়োগোর মাথা কেটে সংরক্ষণ করা হয় লিসবন বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রায় ২০০ বছর পেরিয়ে গেলেও সেই মাথা আজও রয়েছে জারে, সময়ের সাক্ষী হয়ে। অজানা রয়ে গেছে, তার মস্তিষ্কে কি সত্যিই ‘অপরাধের সূত্র’ খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল?

ভয় ও বিস্ময়ের প্রতীক

আজও লিসবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই করিডরে দর্শনার্থীরা থমকে দাঁড়ান। কাচের ভেতর তাকালে দেখা যায় এক নিষ্পাপ মুখ— যে মুখ একসময় ছিল মৃত্যুর প্রতীক। ইতিহাসে ভয়, গবেষণায় বিস্ময়— ডিয়োগো আলভেস এখন দুয়েরই মিশেল।

সারাবাংলা/এফএন/এএসজি
বিজ্ঞাপন

আমরা তাহলে এখন কী করবো
১১ নভেম্বর ২০২৫ ১৬:৫৮

আরো

সম্পর্কিত খবর