আজ ১৭ নভেম্বর—বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তিপ্রেমী ব্যবহারকারীদের কাছে এটি এক ভীষণ মজার দিন। নাম ‘ন্যাশনাল আনফ্রেন্ড ডে’। সোশ্যাল মিডিয়ার অতিরিক্ত ভিড়, অচেনা মানুষ, অর্থহীন বন্ধুত্ব— সবকিছুকে ছেঁটে ফেলার দিন আজ।
নামেই বোঝা যায়, আজকের দিনে মানুষ মজার ছলে ফেসবুক, এক্স, ইনস্টাগ্রাম বা অন্যান্য প্ল্যাটফর্ম থেকে অপ্রাসঙ্গিক ও অপ্রয়োজনীয় মানুষদের আনফ্রেন্ড করে। এই ‘ডিজিটাল ক্লিনআপ’ কর্মসূচি শুরু করেছিলেন মার্কিন টকশো হোস্ট জিমি কিমেল— ২০১০ সালে। মজা করেই বলেন, ‘যাদের নাম মনে নেই, যারা কখনো কথা বলেনি— তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব রেখে লাভ কী?’ আর সেই মজা থেকেই জন্ম নেয় এই বিশ্ব-পরিচিত অনানুষ্ঠানিক দিবস।
কেন এত প্রয়োজন এই দিন?
প্রতিদিন সোশ্যাল মিডিয়ার টাইমলাইনে আমরা ডুবে থাকি ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কিন্তু ভেবে দেখেছেন—আপনার ফ্রেন্ডলিস্টে থাকা পাঁচ হাজার মানুষের কতজনকে সত্যিই চেনেন? ডিজিটাল ভিড় মানুষের ব্যক্তিগত পরিসর, মানসিক স্বস্তি, এমনকি মনোযোগেও প্রভাব ফেলে। অযাচিত বন্ধু, নেতিবাচক মন্তব্যকারী, ফেক অ্যাকাউন্ট বা বহু বছর ধরে নিষ্ক্রিয় মানুষ—সব মিলিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া হয়ে ওঠে বিশৃঙ্খল।
এই জায়গায় আসে ‘আনফ্রেন্ড ডে’— যেখানে সবাইকে সুযোগ দেওয়া হয় নিজের ডিজিটাল পরিসরটা একটু গোছানোর।
কারা আনফ্রেন্ডের তালিকায় পড়তে পারে?
১) অচেনা মানুষ
যাদের নাম শুনলেই মাথা চুলকায়— কে, কোথা থেকে রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিল, কিছুই মনে নেই। আজকের দিনটা তাদের বিদায় জানানোর আদর্শ সময়।
২) সবকিছুতে নেগেটিভ ভাইব ছড়ানোরা
আপনি লিখলেন ভ্রমণের পোস্ট—সেখানে এসে কেউ লিখে ফেলল অযাচিত সমালোচনা। অথবা প্রতিটি স্ট্যাটাসেই ট্রলিং। এদের আনফ্রেন্ড করাই শ্রেয়।
৩) বছরের পর বছর নিষ্ক্রিয় থাকা প্রোফাইল
যিনি ২০১৬ সাল থেকে কোনো পোস্ট দেননি—
তারা আপনার ফ্রেন্ডলিস্ট বাড়িয়ে রাখছে শুধু সংখ্যা দিয়ে।
৪) অতিরিক্ত প্রচারক
যারা প্রতিদিন ১০–১২টা ব্যবসা বা স্ক্যামজাতীয় লিংক দেন।
ফিডকে দূষণমুক্ত রাখতে তাদের বাদ দিন নির্দ্বিধায়।
আনফ্রেন্ড নয়, আনফলো!
সব ক্ষেত্রে আনফ্রেন্ড করতে হবে— এমন নয়! কিছু মানুষকে আপনি ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ করেন, কিন্তু তার পোস্টে বিরক্ত? সমাধান— শুধু Unfollow করুন। সম্পর্কও থাকবে, ফিডও পরিষ্কার।
ডিজিটাল ডিটক্সের এক অংশ
বিশেষজ্ঞরা বলেন, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে মানসিক সুস্থতা বজায় রাখার জন্য নিয়মিত ‘ডিজিটাল ডিটক্স’ করা জরুরি।
আজকের দিনটি ঠিক সেই প্রয়োজনে কাজ করে—
মস্তিষ্ককে অগোছালো তথ্য থেকে বিরতি দেওয়া,
নিউজফিডে নিজের পছন্দের লোকজন রাখা,
এবং অনলাইন জীবনে স্পেস তৈরি করা।
শেষ কথা
বন্ধুত্ব অমূল্য— কিন্তু সব বন্ধুত্বই যে বাস্তব বা প্রয়োজনীয়, তা নয়। আজ ১৭ নভেম্বর— ‘আনফ্রেন্ড ডে’ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, ডিজিটাল জগতে সীমা তৈরি করাও আত্ম-যত্নের অংশ। সুতরাং আজ একটু সময় নিন, ফ্রেন্ডলিস্টটা ঘুরে দেখুন, অপ্রয়োজনীয়দের বিদায় দিন— আর নিজের অনলাইন জগৎটাকে করে তুলুন আরও শান্ত, পরিচ্ছন্ন, এবং নিজের মতো!