২৫ নভেম্বর— বিশ্ব নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ দিবস। ক্যালেন্ডারের একটি তারিখ হলেও এটি স্মরণ করিয়ে দেয়— নারীর নিরাপত্তা এখনো নিশ্চিত নয়। মানবাধিকার, ন্যায়বিচার ও সমতার প্রশ্ন আজও জরুরি, এবং বৈশ্বিক সমাজ সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে।
জাতিসংঘ জানায়— বিশ্বে প্রতি তিন নারীর একজন জীবনের কোনো পর্যায়ে শারীরিক, যৌন বা মানসিক সহিংসতার মুখোমুখি হন। ভয়, সামাজিক অপবাদ, বিচারহীনতা— এসব কারণে অনেকেই নীরবে সহ্য করেন। নিরাপত্তার সবচেয়ে বড় আশ্রয়— ঘর— অনেক সময়ই হয়ে ওঠে সহিংসতার কেন্দ্র।
বাংলাদেশও এই বাস্তবতার বাইরে নয়। বাসা, রাস্তাঘাট, কর্মক্ষেত্র, শিক্ষাঙ্গন, অনলাইন— সবখানেই নারীরা হয়রানি ও নিপীড়নের ঝুঁকিতে। গৃহসহিংসতা, ধর্ষণ, সাইবার নির্যাতন, বাল্যবিয়ে, অ্যাসিড হামলা— চিত্রটি এখনও উদ্বেগজনক। আইন ও নীতিমালা থাকলেও সামাজিক মনোভাব, সচেতনতা এবং দ্রুত ন্যায়বিচার ছাড়া পরিবর্তন সম্ভব নয়।
এই দিনের পেছনে আছে ত্যাগের ইতিহাস। ১৯৬০ সালে ডোমিনিকান রিপাবলিকের তিন বোন— প্যাট্রিয়া, মিনার্ভা ও মারিয়া মিরাবাল— স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর কারণে নির্মমভাবে নিহত হন। তাদের সাহস ও আত্মত্যাগের স্মৃতি থেকেই শুরু বৈশ্বিক আন্দোলন।
২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে প্রশ্নগুলো আরও তীব্র—
নারীরা কি নিরাপদ?
অভিযোগ জানালে কি সমর্থন ও বিচার পান?
সমাজ কি ভুক্তভোগীকে শক্তি দেয়—নাকি দোষারোপ করে?
নারীর অর্থনৈতিক ও মানসিক ক্ষমতায়ন কতদূর এগিয়েছে?
এ বছরের আন্তর্জাতিক আহ্বান— “অবসান ঘটাও সহিংসতা, গড়ে তোলো সমতা”— শুধু স্লোগান নয়; এটি উন্নয়ন, অর্থনীতি, পরিবার ও মানবতার ভিত্তি। বিশেষজ্ঞদের মতে, সমাধান শুরু হয় কাছের স্থান থেকে—
পরিবারে মূল্যবোধ ও সম্মান,
মেয়েদের আত্মবিশ্বাস ও আর্থিক স্বাবলম্বন,
ছেলেদের জেন্ডার সচেতনতা,
দ্রুত বিচার ও কঠোর শাস্তি,
নিরাপদ ডিজিটাল পরিবেশ,
গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল ভূমিকা।
কারণ নারীর প্রতি সহিংসতা কোনো ব্যক্তিগত ঘটনা নয়—এটি গভীর সামাজিক সংকট। পরিবর্তন আসবে যখন রাষ্ট্র, পরিবার, সমাজ ও ব্যক্তি একসঙ্গে “না” বলবে সহিংসতাকে।
তাই ২৫ নভেম্বর শুধু স্মরণ নয়—এটি প্রতিজ্ঞার দিন। নীরবতা ভাঙার, অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর, সমতার পৃথিবী গড়ার দিন।