ভারতের উত্তর প্রদেশের আগ্রা শহরে দাঁড়িয়ে আছে এক সাদা রূপকথা… যেন মেঘের ভেতর খোদাই করে বানানো কোনো স্বপ্ন। বিশ্বের কোটি মানুষের কাছে এটি শুধু একটি স্থাপনা নয়— এটি ভালোবাসার চিরন্তন স্মারক— তাজমহল।
মমতাজ— যার জন্য জন্ম নিলো এক মহাকাব্যিক প্রেমকাহিনি। মুঘল সম্রাট শাহজাহান… আর তার প্রিয়তমা স্ত্রী মমতাজ মহল। রাজপ্রাসাদের জাঁকজমক, যুদ্ধ, ক্ষমতার ভিড়েও শাহজাহানের হৃদয় জুড়ে ছিলেন শুধু একটাই নাম—মমতাজ।
১৬৩১ সালে, সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে মমতাজ মারা গেলে, শাহজাহান যেন পুরো পৃথিবী হারিয়ে ফেলেন। সম্রাট হয়েও তিনি অসহায়, ভেঙে পড়া এক মানুষ।
তখনই তিনি সবার জন্য রেখে যেতে চাইলেন তাদের ভালোবাসার অমর সাক্ষী… যা সময়ের দেয়াল ভেদ করে যুগ যুগ ধরে বলে যাবে— ‘এই পৃথিবীতে সত্যিকারের ভালোবাসা আছে!’ এভাবেই শুরু হয় তাজমহলের নির্মাণ।
তাজমহল যেনো সাদা মার্বেলে লেখা প্রেমের কবিতা। ২০ হাজারেরও বেশি কারিগর, শিল্পী, মিস্ত্রি— দিন-রাত পরিশ্রম করেছেন ২২ বছর ধরে। ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ায় বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর সমাধি, যা দেখতে সাদা মার্বেলও যেন লজ্জায় ঝলমল করে।
চারটি মিনার, পেঁয়াজ গম্বুজ, ক্যালিগ্রাফি, মার্বেলে ইনলে কাজ— সব মিলিয়ে তাজমহল যেন একটি স্থাপনা নয়… একটি নিখুঁত প্রেমের কবিতা। শান্ত প্রবাহমান যমুনা নদীর তীরে, তার প্রতিচ্ছবি আজও বলছে— ‘মমতাজ শুধু মারা যাননি… তিনি তাজমহলে বেঁচে আছেন।’
তাজমহলের সামনে বিস্তৃত চারবাগ— চারটি অংশে ভাগ করা পারস্যশৈলীর বাগান।
মাঝখানে প্রতিফলন পুকুর, যেখানে তাজমহল নিজের সৌন্দর্য নিজেই দেখে… যেনো মমতাজের জন্য সাজতে থাকা এক রানি!
১৯৮৩ সালে ইউনেস্কো তাজমহলকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ ঘোষণা করে। ২০০৭ সালে এটি বিশ্বের নতুন সাত আশ্চর্যের একটি হয়।
প্রতি বছর ৫০ লাখের বেশি দর্শনার্থী দূর–দূরান্ত থেকে আসে এই ভালোবাসার মন্দির দেখতে। কারো চোখে বিস্ময়… কারো মনে প্রশ্ন— ‘ভালোবাসা কি সত্যি এত সুন্দর হতে পারে?’
সময় বদলায়, মানুষ বদলায়, রাজ্য বদলায়— কিন্তু তাজমহল বদলায় না। এটি দাঁড়িয়ে আছে ঠিক আগের মতোই, শাহজাহানের অশ্রুতে ভেজা মার্বেলে আজও ঝলমল করছে তাদের প্রেম।
তাই তাজমহল শুধু ইতিহাস নয়, এটি প্রতিটি প্রেমিক-প্রেমিকার হৃদয়ে ভালোবাসার অমর স্বাক্ষর।