Tuesday 23 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৪৫০০ বছরের অমীমাংসিত রহস্য— পিরামিড কি সমাধি?

সানজিদা যুথী সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৯:৩৮

চারপাশে শুধু বিস্তীর্ণ মরুভূমি। তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে বিশাল পাথরের পাহাড়— যেন হাজার হাজার বছর ধরে সময়কে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে। এটাই মিশরের রাজধানী কায়রো শহরের উপকণ্ঠে অবস্থিত গিজার পিরামিড— বিশ্বের সপ্তাশ্চর্যের একমাত্র জীবিত নিদর্শন।

আজ থেকে প্রায় ৪ হাজার ৫০০ বছর আগে, যখন আধুনিক প্রযুক্তি, ক্রেন কিংবা লোহার যন্ত্রও ছিল না, তখন কীভাবে তৈরি হলো এই বিশাল কাঠামো?

গিজা মালভূমিতে রয়েছে তিনটি প্রধান পিরামিড—
গ্রেট পিরামিড অব খুফু (Cheops),
পিরামিড অব খাফরে,
পিরামিড অব মেনকাউরে।

এর মধ্যে খুফুর পিরামিড ছিল একসময় প্রায় ৪৮১ ফুট উঁচু। প্রায় ২৩ লক্ষ পাথরের ব্লক দিয়ে তৈরি এই পিরামিডের প্রতিটি পাথরের ওজন গড়ে ২ থেকে ১৫ টন! আজও বিজ্ঞানীদের প্রশ্ন— এত ভারী পাথর কীভাবে এত নিখুঁতভাবে বসানো হলো?

বিজ্ঞাপন

কেউ বলেন র‍্যাম্প ব্যবহার করা হয়েছিল, কেউ বলেন পানির শক্তি, আবার কেউ কেউ মনে করেন— মানুষের পক্ষে এটা একা করা সম্ভব ছিল না। তবে ইতিহাসবিদদের মতে, এগুলো তৈরি করেছিলেন দক্ষ ও প্রশিক্ষিত মিশরীয় শ্রমিকরা— দাস নয়, বরং রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় কাজ করা কর্মী।

পিরামিড কি সত্যিই ফেরাউনের কবর?

এখন আসি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে— গিজার পিরামিডে কি ফেরাউনের কবর আছে? উত্তর হলো— হ্যাঁ, পিরামিড মূলত ফেরাউনদের সমাধি হিসেবেই নির্মিত।
প্রাচীন মিশরীয়দের বিশ্বাস ছিল, মৃত্যুর পর ফেরাউনের আত্মা আবার ফিরে আসবে দেহের কাছে। তাই দেহ সংরক্ষণ, সমাধি আর সম্পদ রাখা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পিরামিডগুলো তৈরি হয়েছিল—
ফেরাউন খুফু,
ফেরাউন খাফরে,
ফেরাউন মেনকাউরে —এই তিন শাসকের সমাধি হিসেবে।

তাহলে মমি কোথায়?

এখানেই শুরু হয় রহস্য। আজ পর্যন্ত গিজার পিরামিডে কোনো ফেরাউনের মমি পাওয়া যায়নি। তবে পাওয়া গেছে—
সমাধি কক্ষ,
পাথরের কফিন (Sarcophagus),
ধর্মীয় ও আচারসংক্রান্ত কাঠামো,
যা প্রমাণ করে— এগুলো সমাধির জন্যই তৈরি হয়েছিল। ধারণা করা হয়— প্রাচীনকালেই কবর লুট হয়েছিল অথবা মমি অন্য কোথাও সরিয়ে ফেলা হয়েছিল কিংবা এখনো কোনো গোপন কক্ষ আবিষ্কারের অপেক্ষায়।

ফেরাউনের আসল কবর

পরবর্তীকালে ফেরাউনরা পিরামিড ছেড়ে লুক্সরের ভ্যালি অব দ্য কিংস এলাকায় গোপন পাহাড়ি সমাধি ব্যবহার শুরু করেন। সেখানেই পাওয়া গেছে— তুতানখামুনসহ বহু ফেরাউনের মমি। লুটপাট ঠেকাতেই এই পরিবর্তন- এমনটাই মনে করেন গবেষকরা।

স্ফিংক্স—নীরব প্রহরী

পিরামিডের পাশেই দাঁড়িয়ে আছে রহস্যময় গ্রেট স্ফিংক্স— মানুষের মুখ, সিংহের দেহ। অনেকে মনে করেন, এই স্ফিংক্সই পিরামিডের রক্ষক। এর বয়স ও উদ্দেশ্য নিয়েও আজও বিতর্ক শেষ হয়নি।

হাজার হাজার বছরেও অটল

নিখুঁত জ্যামিতিক নকশা, আধুনিক প্রযুক্তি ছাড়াই নির্মাণ, ফেরাউনের কবর নিয়ে অমীমাংসিত রহস্য, এ কারণেই গিজার পিরামিড শুধু স্থাপনা নয়— এটা মানব সভ্যতার সবচেয়ে বড় প্রশ্নগুলোর একটি।

বিজ্ঞাপন

আরো

সানজিদা যুথী - আরো পড়ুন
সম্পর্কিত খবর