পাহাড়ের চূড়া বেয়ে, মরুভূমি ছুঁয়ে, উপত্যকা পেরিয়ে হাজার হাজার কিলোমিটার জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে এক বিশাল দেয়াল। যেন সময়কে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া মানবসভ্যতার এক অমর নিদর্শন। এটাই চীনের মহাপ্রাচীর— বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ মানবনির্মিত স্থাপনা।
চীনের উত্তরাঞ্চলজুড়ে বিস্তৃত এই প্রাচীরের মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ২১ হাজার কিলোমিটার। বর্তমান চীনের প্রায় অর্ধেক প্রদেশ ছুঁয়ে গেছে এই দেয়াল।
কীভাবে শুরু হয়েছিল এই মহাকীর্তি?
খ্রিস্টপূর্ব ৭ম শতাব্দী থেকে বিভিন্ন রাজবংশ নিজেদের মতো করে দেয়াল নির্মাণ শুরু করে। তবে সবচেয়ে বড় ও সংগঠিত কাজটি হয় চিন রাজবংশের সম্রাট চিন শি হুয়াং–এর সময়। উদ্দেশ্য ছিল একটাই— উত্তরের যাযাবর ও শত্রু জাতিগুলোর আক্রমণ থেকে চীনকে রক্ষা করা।
কী দিয়ে তৈরি হয়েছিল মহাপ্রাচীর?
প্রাচীরের অংশভেদে ব্যবহার হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন উপকরণ— পাহাড়ি এলাকায় পাথর সমতলে মাটি ও ইট, কোথাও কোথাও চালের আঠা মেশানো চুন, এই বিশেষ নির্মাণ কৌশলের কারণেই হাজার বছর পরেও অনেক অংশ আজও অটুট।
ইতিহাসের নীরব কষ্ট
এই প্রাচীর শুধু গৌরবের নয়, এটা ত্যাগ আর কান্নারও ইতিহাস। কথিত আছে— প্রাচীর নির্মাণে প্রাণ হারিয়েছেন লক্ষ লক্ষ শ্রমিক। অনেকে বলেন, এটাই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ‘কবরস্থান’— যার নিচে ঘুমিয়ে আছে অগণিত অচেনা মানুষ।
পৃথিবী থেকে কি সত্যিই দেখা যায়?
একটা প্রচলিত গল্প আছে— চীনের মহাপ্রাচীর নাকি চাঁদ থেকেও দেখা যায়! কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন— খালি চোখে মহাকাশ থেকে এটি দেখা সম্ভব নয়। তবে বিশেষ স্যাটেলাইট ছবিতে এর অস্তিত্ব ধরা পড়ে।
বিশ্ব ঐতিহ্যের মর্যাদা
১৯৮৭ সালে ইউনেস্কো চীনের মহা প্রাচীরকে ঘোষণা করে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে। আজ এটি শুধু চীনের নয়, পুরো মানবজাতির গর্ব। প্রতি বছর কোটি কোটি পর্যটক এই প্রাচীর দেখতে ছুটে যান।
শেষ কথা হলো
চীনের মহা প্রাচীর শুধু ইট-পাথরের দেয়াল নয়— এটা শক্তি, কৌশল, ত্যাগ আর ইতিহাসের এক জীবন্ত দলিল। সময় বদলায়, সভ্যতা বদলায়— কিন্তু কিছু সৃষ্টি সময়কে অতিক্রম করে চিরকাল দাঁড়িয়ে থাকে।
চীনের মহাপ্রাচীর— ঠিক তেমনই এক বিস্ময়।