হজযাত্রায় প্রতি মুহূর্ত কাটুক ইবাদতে
৭ আগস্ট ২০১৮ ১২:৩৩
।। জহির উদ্দিন বাবর ।।
পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা মাত্র ৪-৫ দিনের। তবে এই আনুষ্ঠানিকতা পালনের জন্য হজযাত্রীকে এক থেকে দেড় মাস পর্যন্ত পবিত্র ভূমি মক্কা-মদিনায় থাকতে হয়। মূল হজের কাজ হাতেগোনা কয়েক দিন হলেও বাকি সময়টুকুও হজযাত্রীদের জন্য অতি মূল্যবান। মূলত হজব্রত পালনের আগে-পরের পুরো সফরটাই হজের মধ্যে গণ্য। হজযাত্রার প্রতি পদক্ষেপে সওয়াব পাওয়ার আশা করতে পারেন হজযাত্রীরা। এজন্য প্রতিটি মুহূর্তে যেন হজের পবিত্রতা রক্ষা হয়, পবিত্র স্থানের প্রতি সম্মান যেন বজায় থাকে সে চেষ্টা থাকতে হবে সবার।
বাংলাদেশ থেকে বেশির ভাগ হজযাত্রী প্রথমে মক্কায় যান। যারা ‘কেরান’ বা ‘তামাত্তু’ হজ করেন তাদেরকে হজের আগেই ওমরা করতে হয়। ওমরা মূলত ইহরামের কাপড় পরে মিকাত অতিক্রম করা, বায়তুল্লাহয় সাতবার তওয়াফ এবং সাফা-মারওয়ায় সাতবার সায়ী করার নাম। পরে মাথা মুড়িয়ে হালাল হয়ে যান হজযাত্রীরা। বাংলাদেশি হাজি সাহেবরা প্রথমে মক্কায় পৌঁছেই আগে ওমরার কাজটি সারেন। কারণ যেহেতু ঢাকা থেকেই ইহরাম পরিধান করে যান এজন্য ওমরা করা ছাড়া তারা হালাল হতে পারেন না।
ইহরামের প্রতিটি মুহূর্ত খুবই সতর্ক থাকতে হয়। শরীরের একটি লোমও ইচ্ছাকৃতভাবে ছিঁড়লে এর জন্য জরিমানা (দম) দিতে হবে। ইহরাম অবস্থায় কোনো মশা-মাছিও মারা যাবে না। ইহরাম গায়ে জড়ানোর পর মানুষের মানসিক অবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়ে যায়। তখন তার কাছে দুনিয়ার সবকিছু তুচ্ছ মনে হয়; একমাত্র আল্লাহর সান্নিধ্যই তার কাছে তখন একান্ত আকাঙ্ক্ষার বস্তু হয়ে যায়। ইহরাম গায়ে জড়িয়ে বায়তুল্লাহর সফরকে আখেরাতের সফরের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। হজের সফরের সঙ্গে আখেরাতের সফরের অনেকটা মিল আছে। এ জন্য হজের সফরে বেশি বেশি পরকালকে স্মরণ করা; পরকালের পাথেয় সংগ্রহের চেষ্টা থাকা একান্ত করণীয়।
সাধারণত মক্কায় পৌঁছার পর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে হজযাত্রীদের ওমরা সম্পন্ন হয়ে যায়। মাথা মুড়েয়ে গোসল করার পর স্বাভাবিক সবকিছুই করতে পারেন তারা। এরপর থেকে হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হওয়া পর্যন্ত মূলত কোনো কাজ নেই। তবে এই সময়টুকুও যথাসম্ভব হজের ভাবগাম্ভীর্য বজায় রেখে আল্লাহর ইবাদতে কাটানো উচিত। বিশেষ করে যত সম্ভব তওয়াফ করা চাই। কারণ, অন্য ইবাদত সারাবছর বাড়িতেও করা যায়। কিন্তু বায়তুল্লাহ তওয়াফ পরে আর সম্ভব নয়। মক্কায় অবস্থানকালে তওয়াফের চেয়ে ফজিলতপূর্ণ আর কোনো ইবাদত নেই। হজের সময় লাখ লাখ লোকের সমাগম হওয়ায় তওয়াফ করা কিছুটা কষ্টের। তবুও যাদের সামর্থ্য আছে যতটুকু সম্ভব বেশি বেশি তওয়াফ করা উচিত।
মক্কায় অবস্থানস্থল যত দূরেই হোক যথাসম্ভব পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ বায়তুল্লাহয় পড়ার চেষ্টা করতে হবে। কারণ দুনিয়ার সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ জায়গা হলো মসজিদে হারাম। এখানে নামাজ পড়লে স্বাভাবিক নামাজের চেয়ে অনেক গুণ বেশি সওয়াবের কথা হাদিসে উল্লেখ আছে। মক্কায় অবস্থান করেও অলসতার কারণে মসজিদে হারামে নামাজ না পড়ে অন্য কোথাও নামাজ আদায় করা দুর্ভাগ্যজনক। ফরজ নামাজ ছাড়াও মসজিদে হারামে যত সম্ভব নফল আদায় করবেন। জান্নাতি পরিবেশে বসে কোরআন তেলাওয়াত করবেন। আল্লাহর দরবারে একনিষ্ঠভাবে দোয়া করবেন।
অনেকে হজের আগেই মদিনার সফর সম্পন্ন করেন। মদিনায় মূলত হজের কোনো আনুষ্ঠানিকতা নেই। সেখানে প্রিয়নবীর (সা.) রওজা মোবারক জিয়ারতই প্রধান উদ্দেশ্য। তবে ফজিলতের দিক থেকে মক্কার পরই মদিনার অবস্থান। যেহেতু এখানে প্রিয়নবী (সা.) শুয়ে আছেন এজন্য এখানকার আবেগটা অন্যরকম। হাজি সাহেবদেরকে সাধারণত মসজিদে নববীতে ৪০ ওয়াক্ত নামাজের সুযোগ করে দেওয়া হয়। মদিনায় সফরকালে প্রতি ওয়াক্ত নামাজ যেন মসজিদে নববীতে আদায় করা যায় সে ব্যাপারে হজযাত্রীদের আন্তরিক থাকা চাই। মসজিদে নববীতে নামাজের সওয়াবও অনেক গুণ বেশি। সুতরাং এই সুযোগ হাতছাড়া করা উচিত নয়।
চেনা-পরিচিত অনেক লোক একসঙ্গে যাওয়ার কারণে অনেক সময় হজের সফরের গাম্ভীর্য নষ্ট হয়। পবিত্র ভূমিতে গিয়েও অনেকে গল্প-গুজব, আড্ডাবাজি করে সময় কাটান। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এতো অর্থ ও শ্রমের বিনিময়ে যাদের পবিত্র এই সফরের সৌভাগ্য হয়েছে তাদেরকে এর মর্যাদা রক্ষা করা উচিত। আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াও হজযাত্রার প্রতিটি মুহূর্তই ইবাদতে কাটানোর চেষ্টা থাকা চাই।
লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরাম।
সারাবাংলা/এমআই