হজ ও কোরবানির মাস জিলহজ
১৮ আগস্ট ২০১৮ ০৮:১২
।। জহির উদ্দিন বাবর।।
চন্দ্রবর্ষের যে মাসগুলো ফজিলতপূর্ণ এর অন্যতম জিলহজ। এটি চন্দ্রবর্ষের দ্বাদশ মাস। এ মাসেই অনুষ্ঠিত হয় ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ হজ। ঈদুল আজহা বা কোরবানিও এই মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমল। এ মাসের প্রথম দশ দিন অত্যন্ত ফজিলতের। হজের মাস হিসেবে এ মাসের ফজিলত ও তাৎপর্য অনেক বেশি।
রাসুল সা. বলেন, আল্লাহ তায়ালা জিলহজকে তোমাদের জন্য ফজিলত রূপে দান করেছেন। অতএব তোমরা এই ফজিলতময় মাসের প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহূর্ত তার ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে কাটাও।
পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘শপথ ফজরের, শপথ দশ রাত্রির, শপথ তার, যা জোড় ও যা বেজোড় এবং শপথ রাত্রির যখন তা গত হয়ে যায়।’ এই ‘দশ রাত্রি’ কোনটা?
ব্যাখ্যাকারকেরা লিখেছেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য জিলহজের প্রথম ১০ রাত। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এ ১০ রাতের কসম খেয়েছেন। এর দ্বারাই জিলহজের প্রথম দশ রাতের মাহাত্ম্য অনুমান করা যায়। রাসুল সা. এই দশ দিনের মহান ফজিলতের কথা বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলেছেন, ইবাদতের জন্য জিলহজের মতো উত্তম আর কোনো মাস নেই। এমনকি কারও কারও মতে রমজানের চেয়েও জিলহজের ইবাদত আল্লাহর দরবারে বেশি কবুল হয়। জিলহজের দশম দিন ঈদুল আজহা। এদিন রোজা রাখা হারাম। বাকি নয় দিনের ব্যাপারে রাসুল সা. বলেছেন, এই দিনগুলোতে রোজা রাখা বছরজুড়ে রোজা রাখার মতো। এক রাতের ইবাদত শবে কদরের ইবাদতের মতো।
জিলহজ মাসের বিশেষ ইবাদত হলো কোরবানি। জিলহজের ১০ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত কোরবানি দেয়া যায়। এই কোরবানি এমন এক ইবাদত যা অন্য কোনো সময় করা যায় না। সারাবছর পশু জবাই করলে তা হবে জবাই, কিন্তু জিলহজ মাসের নির্দিষ্ট দিনগুলোতে জবাই করলে তা হবে কোরবানি। পশুর প্রতিটি লোমের সমপরিমাণ সওয়াব দেওয়া হয় বলে হাদিসে উল্লেখ আছে। পশুর রক্ত মাটিতে গড়িয়ে পড়ার আগে কোরবানিদাতার গোনাহ ক্ষমা করে দেন আল্লাহ তায়ালা।
জিলহজ মাসে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া দরকার তওবা তথা সব গোনাহ থেকে ফিরে আসার প্রতি। সার্থক তওবা সেটি যার মধ্যে তিনটি বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। যথা প্রথম গোনাহটি সম্পূর্ণভাবে বর্জন করা; দ্বিতীয় গোনাহের জন্য অনুতপ্ত হওয়া এবং তৃতীয় এই গোনাহটি ভবিষ্যতে না করার সংকল্প করা। বাস্তবেই এটি তওবার সুবর্ণ সময়। দয়াময় মাবুদ এ সময় বেশি বেশি তওবার তাওফিক দেন এবং অধিক পরিমাণে বান্দার তওবা কবুল করেন। এজন্য সবার উচিত এই দিনগুলোকে পুণ্যময় কাজ ও কথায় সুশোভিত করার দৃঢ়প্রত্যয় গ্রহণ করা।
জিলহজের প্রথম দশকেই হজের আনুষ্ঠানিক কাজগুলো সম্পন্ন হয়। এ সময় আল্লাহর আসমানের দরজা খোলা থাকে বান্দার জন্য। কৃতকর্মের ওপর অনুতপ্ত হয়ে বান্দা কিছু চাইলে আল্লাহ তা পূরণ করেন। যারা হজে গেছেন তাদের দোয়া বেশি কবুল হয়। সুযোগ থাকলে তাদেরকে দিয়ে নিজের জন্য দোয়া করিয়ে নেওয়া। নিজেও হজযাত্রীদের জন্য দোয়া করা। জিলহজ মাসের বিধানগুলো সঠিকভাবে পালন এবং এই মাসটি ইবাদতে কাটানোর মধ্যে নিহিত রয়েছে মুমিনজীবনের বড় সাফল্য।
লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরাম
সারাবাংলা/এমএইচ