হজের শিক্ষা হোক জীবনের পাথেয়
২৯ আগস্ট ২০১৮ ০৯:১২
।। জহির উদ্দিন বাবর।।
পবিত্র হজব্রত পালন শেষে দেশে ফিরতে শুরু করেছেন হাজিরা। যারা আল্লাহর ঘর ও প্রিয় নবীজির রওজা মোবারকের স্পর্শে ধন্য হয়ে সদ্য দেশে ফিরেছেন বা ফিরবেন তাদের চেয়ে সৌভাগ্যবান আর কেউ হতে পারে না। তাদের মর্যাদা অনেক বেশি। তাদের গায়ে এখনও লেগে আছে মক্কা-মদিনার সুবাস। দেশে ফেরার পরও দীর্ঘদিন পর্যন্ত সে সুবাস অব্যাহত থাকে।
এ জন্য হাদিসে হাজিদের সঙ্গে সালাম-মুসাফাহার প্রতি তাগিদ করা হয়েছে। কোনো হাজির সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে তাকে সালাম দেওয়া, মুসাফাহা-মুআনাকা করা এবং তার কাছে দোয়া চাওয়ার কথা বলা হয়েছে। কারণ আল্লাহ যার হজ কবুল করেছেন তার পাপ ক্ষমা করে দেন। যিনি হজ থেকে ফিরেছেন তিনি আল্লাহর ক্ষমা পাওয়ার ব্যাপারে জোরালো আশাবাদী।
যেহেতু হজ পালনকারীরা এত সম্মানী এজন্য তাদের বিশেষ কিছু করণীয় রয়েছে। হজে একপ্রস্ত সাদা কাপড় পরার মানে হচ্ছে দুনিয়ার সব সম্পর্ক ছিন্ন করে পরকালের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাওয়া। হজ থেকে ফিরেও যেন কাফনসদৃশ সেই কাপড় পরার কথা স্মরণে থাকে। স্বাভাবিক জীবনে ফিরলেও হজের সেই অনুভূতির কথা যেন বিস্মৃত না হয়ে যায়। এমন কিছু করা উচিত নয় যা হজের সেই অনুভূতিকে কলুষিত করে।
হজ হলো ত্যাগের একটি ইবাদত। এই ত্যাগের কথা পরবর্তী জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে স্মরণ রাখতে হবে। দুনিয়া-আখেরাতে সাফল্যের জন্য ত্যাগের কোনো বিকল্প নেই। আল্লাহ ও রাসুলের (সা.) প্রিয় ভূমির ধূলিবালি মেখে আসতে পারা অনেক মর্যাদা ও ফজিলতের বিষয়। জীবনের প্রতিটি পদে পদে সে কথা স্মরণ রেখে সেই অনুযায়ী চলার চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহ-রাসুল এবং মক্কা-মদিনার ভালোবাসা বুকে ধারণ করতে হবে।
হজ আল্লাহর দরবারে কবুল হলো কি না এর বড় একটি লক্ষণ হচ্ছে হজ পরবর্তী জীবনে পরিবর্তনের ছাপ থাকা। আগের জীবন যত উল্টাপাল্টাই থাকুক, হজ থেকে ফিরে যেন তাতে পরিবর্তন আসে। নিজের প্রতিটি কাজেকর্মে যেন একজন হাজির ছাপ থাকে। কারও হজপরবর্তী জীবনে কোনো পরিবর্তন না এলে সে হজ কবুল হওয়ার ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ থাকে।
একজন হাজিকে সব সময় কাজে অন্যের চেয়ে আলাদা একটি অবস্থান ধরে রাখতে হবে। নানা ঝামেলা সামনে আসবে, তবুও তাতে জড়ানো যাবে না। হাজি সাহেবকে একথা মনে রাখতে হবে, ওয়াদা অনুযায়ী আল্লাহ তাকে নিষ্পাপ করে দিয়েছেন। সেই নিষ্পাপতায় কোনো পাপের ছোঁয়া যেন না লাগে এ ব্যাপারে সব সময় সতর্ক থাকতে হবে। কখনও কোনো অন্যায় কাজ হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে তওবা করে নিতে হবে।
বাকি জীবন আল্লাহ ও রাসুলের (সা.) দেখানো পথে চলাই হলো হজের সার্থকতা। অনেকে মনে করেন, টাকা আছে হজ করেছি, প্রয়োজনে আবার করবো। তাদের এই মনোভাব হজ কবুল হওয়ার পথে অন্তরায়। আল্লাহ হজ করার তাওফিক দিয়েছেন এই কৃতজ্ঞতাবোধ সবসময় অন্তরে পোষণ করতে হবে। জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে হজের শিক্ষা ও অনুভূতি ধরে রাখাই হলো মকবুল হজের লক্ষণ। এজন্য প্রত্যেককে চেষ্টা করতে হবে হজের শিক্ষা ধরে রাখার। আর এর জন্য আল্লাহর তাওফিকও চাইতে হবে। মনে রাখবেন, আল্লাহ তাওফিক না দিলে কারও পক্ষে হজের শিক্ষার ওপর চলা সম্ভব হবে না।
লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরাম
সারাবাংলা/এমএইচ