ভূ-পৃষ্ঠের কত গভীরে যেতে পেরেছে মানুষ!
১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৮:৫২
।। বিচিত্রা ডেস্ক ।।
পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গঠন অনেকটা পেয়াজের মতো বিভিন্ন খোলসাকৃতির স্তরে বিন্যস্ত। এর বাহিরের দিকে রয়েছে সিলিকেট দিয়ে তৈরি কঠিন ভূত্বক বা ক্রাস্ট, তারপর অত্যন্ত আঠালো একটি ভূ-আচ্ছাদন বা ম্যান্টল, একটি বহিঃস্থ মজ্জা বা কোর যেটি ম্যান্টলের চেয়ে তুলনামূলকভাবে কম আঠালো এবং সব শেষে রয়েছে একটি অন্তঃস্থ মজ্জা।
প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ ভূ-পৃষ্ঠে গর্ত খুঁড়েছে, পানি তুলেছে, এমনকি ভূ-গর্ভস্থ শহরও নির্মাণ করেছে। প্যারিসের ক্যাটাকম্ব সংগ্রহশালাটি মূল শহরের মাটির তলায় একটি সুড়ঙ্গের আকারে রয়েছে। মাটির ৬৫ ফুট গভীরে প্রায় ষাট লাখ মানব কঙ্কাল দিয়ে এটি গড়ে তোলা হয়েছে।
তুরস্কের প্রাচীন শহর দেরিনকুইউ মাটি থেকে ২৭৯ ফুট গভীরে অবস্থিত। এছাড়া পশ্চিম ভার্জিনিয়ার গ্রিনব্রায়ার বাঙ্কার মাটি থেকে প্রায় ৭২০ ফুট গভীরে রয়েছে। আপদকালীন সময়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সুরক্ষিত রাখতেই এটি তৈরি করা হয়েছে।
উডিংডিন পানির কূপ প্রায় ১ হাজার ২৮৫ ফুট গভীরে অবস্থিত। ইংল্যান্ডের ব্রাইটনে ১৮৫৮-১৮৬২ সালের মধ্যে কোনধরনের আধুনিক যন্ত্রপাতি ছাড়াই এটি খনন করা হয়েছিল। এর মধ্যে গোটা আইফেল টাওয়ারও এঁটে যেতে পারবে।
চিলির সান জোসের স্বর্ণখনি। দুবাইয়ের বুর্জ খলিফা ধরে যাবে এই খনির মধ্যে। প্রায় ২ হাজার ৭২২ ফুট গভীর এই খনি। ২০১০ সালে এই সোনার খনির দুর্ঘটনায় ৩৩ জন কর্মী ৬৯ দিন পর্যন্ত আটকা পড়েছিলেন এবং পরবর্তীতে সেখান থেকে তাদের সফলভাবে উদ্ধার করা হয়েছিল। তবে এটি মানুষের খনন করা গভীরতম খনি নয়।
বিশ্বের গভীরতম প্রাকৃতিক গুহা জর্জিয়ার ভেরিওভকিনা গুহা। এছাড়া জর্জিয়ার ক্রুবেরা গুহা দ্বিতীয় গভীরতম গুহা। ভেরিওভকিনা গুহা প্রায় ৭ হাজার ২৩০ ফুট আর ক্রুবেরা ৭ হাজার ২০৮ ফুট গভীরে পর্যন্ত বিস্তৃত। একাধিক অভিযাত্রীর দাবি, আধুনিক কোনো যন্ত্রপাতি ছাড়াই ভেরিওভকিনায় নামা সম্ভব।
সুইজারল্যান্ডের গোথার্ড বেস টানেল সবচেয়ে গভীর রেলওয়ে সুড়ঙ্গ। মাটি থেকে প্রায় ৭ হাজার ৫০০ ফুট গভীরে অবস্থিত এটি। ভূ-পৃষ্ঠ থেকে গভীরতার নিরিখ ধরে দক্ষিণ আফ্রিকার পোনেং স্বর্ণ খনিটি সবচেয়ে গভীর খনি। মাটির প্রায় ৪ কিলোমিটার অর্থাৎ প্রায় ১৩ হাজার ফুট নীচে রয়েছে এটি।
সবচেয়ে গভীর তেল খনি জেড-৪৪ চায়ভো ওয়েল। বর্তমানে এটির গভীরতা প্রায় ৪০ হাজার ফুট। পূর্ব রাশিয়ার প্রত্যন্ত এলাকায় এটি অবস্থিত।
সোভিয়েত ইউনিয়নের কোলা সুপারডিপ বোরহোল প্রকল্প। ১৯৭০ সাল থেকে খনন করা হচ্ছে এটি। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল ভূ-পৃষ্ঠের উপরের ত্বক তথা ক্রাস্ট ভেদ করে দ্বিতীয় স্তর ম্যান্টল পর্যন্ত পৌঁছানো।
বর্তমানে এটিই পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে মানুষের তৈরি সবচেয়ে গভীর গর্ত। এর মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ৪০ হাজার ২৩০ ফুট গভীর পর্যন্ত প্রবেশ করতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা।
সারাবাংলা/এএস