জীবন জয়ের গল্প!
২ জানুয়ারি ২০১৮ ০৮:৩৭
এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
সাভারের জাহাঙ্গীর আলম। সমাজে যার পরিচয় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। কিন্তু সব ধরনের প্রতিবন্ধকতাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি। শেষ করেছেন আইন বিষয়ে অনার্স আর মাষ্টার্স। গেল বছর লেখাপড়ার পাট চুকিয়ে এখন অপেক্ষা কর্মসংস্থানের। পাশাপাশি চলছে আইনজীবী হয়ে উঠার লড়াই।
বছরের প্রথম দিনে বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের কর্মসংস্থান মেলায় বিভিন্ন স্টলে ঘুরে ঘুরে সিভি জমা দিচ্ছিলেন তিনি। সাথে আনা সিভির কপি শেষ হয়ে যাওয়ায় সংগ্রহ করছিলেন বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোর ই- মেইল ঠিকানা। অদম্য এই যুবকের সাথে এসময় কথা হয় সারাবাংলার প্রতিবেদকের।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই শিক্ষার্থী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি জানি আমাদের এই দেশে চাকুরী পাওয়া খুব কষ্টসাধ্য। আমাদের জন্য তো সোনার হরিণের মতো একটা চাকরি পাওয়া। যারা প্রতিবন্ধী তারা জানি আমরা কাজ করতে পারি। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এখনও বিশ্বাস করতে চায় না যে আমরা কাজ করতে জানি। একজন ব্যক্তিকে তখনই আপনি বলতে পারবেন সে কাজ পারে না, যখন আপনি কাজ দিবেন। তাই আমাদের নিয়োগ দিয়ে দেখুন।’
https://www.youtube.com/watch?v=C2m7bH8jagk&t=2s
মূলত জাহাঙ্গীরের সঙ্গে কথা হয় বিভিন্ন স্টলে তার সিভি দেয়ার ভাবভঙ্গিমা দেখে। প্রতিষ্ঠানগুলোর স্টল থেকে জেনে নিচ্ছিলেন কোন প্রতিষ্ঠানের কী কর্মকান্ড। যুতসই হলেই ড্রপ করছিলেন নিজের জীবন- বৃত্তান্ত। সঙ্গে থাকা দুই বন্ধুকেও দিকনির্দেশনা দিচ্ছিলেন। তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৩৮ তম বিসিএস পরীক্ষায়ও অংশ নিয়েছেন তিনি। ঢাকা কোর্টেও করছেন ইন্টার্নশিপ।
জাহাঙ্গীরের গ্রামের বাড়ি সাভারের পাঁচ বনগ্রামে। তারা দুই ভাই ও এক বোন। বাবা শফুর উদ্দিন ও মা হীরা বেগম। মূলত জন্ম থেকেই তার নামের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিশেষভাবে সক্ষম (প্রতিবন্ধী)। দৃঢ়প্রত্যয়ী জাহাঙ্গীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিশ্বাস করি আমরা এ দেশের সম্পদ। আমরা সম্পদ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করার জন্যে আপনাদের সহযোগিতা বিশেষত প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ও এ দেশের সকল সচেতন মানুষের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।’
টানা চতুর্থবারের মতো বছরের প্রথম দিনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের এই কর্মসংস্থান মেলার আয়োজন করে। এতে ১৭ টি চাকরি দাতা প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। দেশের নানাপ্রান্তের প্রতিবন্ধীরা চাকরীর খোঁজে মেলায় আসেন। সেখানে কথা হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ঝর্ণার সঙ্গে। তিনিও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। বর্তমানে সরকার ও রাজনীতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে লেখাপড়া করছে।
কিশোরগঞ্জের ভৈরবের বাসিন্দা ঝর্ণা সারাবাংলাকে বলেন, ‘সরকার ও রাজনীতি বিভাগে যখন ভর্তি হয়েছিলাম তখন মনে হয়েছিল খুব সহজেই লেখাপড়া করতে পারবো। যেহেতু দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী তাই রেকর্ড করে পড়তে হয়। তাই রাইটার পাওয়া আরও অনেক কিছু নিয়েই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’ তবে সেও দৃঢ় প্রত্যয়ে জানান, শিগগিরই হয়তো তারও হতে পারে কোন কর্মসংস্থান।
ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার ডহরশংকর গ্রামের বাসিন্দা মো. রুবেল। স্থানীয় সরকারি কলেজে মানবিক বিজ্ঞান বিভাগে পড়ার সময় ২০১১ সালের আম পাড়তে গিয়ে গাছ থেকে পড়ে মেরুদন্ড ভেঙে যায়। সেই থেকে মেনে নিতে হয় পুঙ্গুত্ব। সারবাংলাকে রুবেল বলেন, ‘ তখন ইন্টারমিডিয়েটে পড়তাম, আম পাড়তে গিয়ে ঢাল ভেঙে গাছ থেকে পড়ে যাই। আঘাত পাই মেরুদেন্ড। এরপর আর লেখাপড়ি করতে পারিনি। ২০১৫ সালে কম্পিউটারের উপর প্রশিক্ষণ নিই। এমএস ওয়ার্ড ও এক্সেল শিখেছি। মোটামুটি টাইপিং করতে জানি। এখন চাকরীর অপেক্ষায় রয়েছি।’ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে সিভি জমা দিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে আসার সময়ও বাসে উঠতে দেয়া হয়নি। কয়েকটি বাসে উঠতে পারিনি।
সারাবাংলা/ইএইচটি/জেডএফ