বাংলাদেশি পাসপোর্টে আসমা আজমেরীর ১০০ দেশ ভ্রমণ
৬ নভেম্বর ২০১৮ ১২:১৯
আকবর হায়দার কিরন, নিউইয়র্ক থেকে
কাজী আসমা আজমেরী। বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে বিশ্বের ১০০টি দেশ ঘোরার এক অনন্য রেকর্ড সৃস্টি করছেন তিনি। গেলো সপ্তাহে তুর্কমেনিস্তান সফরের মধ্য দিয়ে তার শততম দেশ সফরের আশা পূরণ হয়।
বিশ্বের সবগুলো মহাদেশের বিভিন্ন দেশে সফর করেছেন এই কাজী আসমা।
যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় ভয়েস অব আমেরিকার আহসানুল হককে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাতকারে কাজী আসমা বলেছিলেন, কিছু কিছু দেশে গিয়ে তার অনেক ভোগান্তি হয়েছে, বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়েছে। কিনতু বিশ্বকে ঘুরে ঘুরে দেখার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় তিনি পিছিয়ে পড়েননি।
তুর্কমেনিস্তান যাবার আগে আজারবাইজান গেলে রাষ্ট্রদুত মসুদ মান্নান তাকে আন্তরিক স্বাগত জানান। দুতাবাস আয়োজিত বাংলাদেশ উন্নয়ন বিষয়ক বিশেষ আলোচনায় কাজী আসমা বিশেষ অতিথি হিসেবে দেশের নানান অগ্রগতির কথা বিদেশি অতিথিদের সামনে উপস্থাপন করেন।
শততম দেশ হিসেবে তুর্কমেনিস্তান সফরকালে দেশটির বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম তার বিশেষ সাক্ষাত্কার নেয়। কিছুদিন আগে চীন সফরের সময় চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা বিভাগে কাজী আসমাকে বিশেষভাবে স্বাগত জানানো হয়। নিউইয়র্ক সফরকালে সেখানকার বাংলাভাষার দুটি মিডিয়া টাইম টিভি ও টিবিএন২৪ও তার কাহিনী ফলাও করে প্রচার করে। এছাড়া আজারবাইজান সফর নিয়ে একটি জার্মান বেতার একটি ফিচার প্রচার করে।
আসমা আজমেরী জানান, শুরু করেছিলেন থাইল্যান্ড দিয়ে, বিশ্বকাপ চলাকালে মাঠে বসে ফাইনাল দেখেন ৫০তম দেশ ব্রাজিলে। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পোষাক এবং পতাকাবাহী টিশার্ট বেশীরভাগ সময় পরে থাকতে দেখা যায় কাজী আসমা আজমেরীকে।
যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে ভয়েস অব আমেরিকা সফর করলে এই প্রতিবেদকের সাথে তার কথা হয়। এসময় কিংবদন্তি বেতার ব্যক্তিত্ব রোকেয়া হায়দার আসমা আজমেরীকে এই অদম্য উৎসাহ ও উদ্দীপনার প্রতি রইলো শুভকামনা জানান।
তুর্কমেনিসতান থেকে এই সংবাদদাতার সাথে ফোনে আলাপকালে আসমা আজমেরী বলেন, বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে বিশ্বের একশ’টি দেশ সফর করতে পেরে তিনি গর্বিত।
যেখানেই গিয়েছি আমার হৃদয় জুড়ে ছিলো সোনার বাংলাদেশ, বলেন কাজী আসমা আজমেরী।
গত ২৪ অক্টোবর ২০১৮ কাজী আসমা আজমেরী ৯৯তম দেশ হিসাবে ভ্রমণ করেন উজবেকিস্তান।
খুলনার জন্ম তার। বেড়ে উঠেছেন খুলনা শহরে। তার বাবার কাজী গোলাম কিবরিয়া ও মা কাজী সাহিদা আহমেদ। তাদের এক মাত্র মেয়ে এই কাজী আসমা আজমেরী।
খুলনার বড় ইকবালনগর গার্লস হাইস্কুল থেকে এসএসসি, খুলনা মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি সম্পন্ন করার পর ঢাকায় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগে (বিবিএ) মার্কেটিং-এ স্নাতক ও পরে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে একই বিষয়ে এমবিএ সম্পন্ন করেন।
কাজী আসমা আজমেরী ২০০৮সালে থাইল্যান্ড ভ্রমণের মধ্য দিয়ে দেশ ভ্রমণ করতে শুরু করেন।
এর পর ২০০৯ সালেই ভ্রমণ করেন আরও ৬টি দেশ- ভারত, নেপাল, ভুটান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং।
২০১০ সালে তাকে ভ্রমণের নেশা পেয়ে বসে। সে বছর ঘুরে বেড়ান কম্বোডিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম, ব্রুনেই, চীন, ম্যাকাও, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, সাইপ্রাস, তুরস্ক, মিশর, মরক্কো, সংযুক্ত আরব আমিরাত। সব মিলিয়ে ১৪টি দেশ।
২০১১ সালে ঘুরে দেখেন আরও ১৫টি দেশ- স্কটল্যান্ড, ওয়েলস, চেক প্রজাতন্ত্র, স্লোভাকিয়া, স্পেন, জার্মানি, পর্তুগাল, মিয়ানমার, দক্ষিণ কোরিয়া, উত্তর কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ।
২০১২ সালে ৫টি দেশ- অস্ট্রেলিয়া, ফিজি, নিউজিল্যান্ড, কুক দ্বীপ ও টঙ্গা।
২০১৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্টসহ ৭টি দেশ। বাকিগুলো হচ্ছে- নিউ ক্যালেডোনিয়া, তাহিতি, সলোমন দ্বীপ, নিউ কিরিবাটি, তাইওয়ান, ভানুয়াতু।
২০১৪ সালে মেক্সিকো, গুয়াতেমালা, এল সালভাডর, হন্ডুরাস, নিকারাগুয়া, কোস্টারিকা, পানামা, কলম্বিয়া, ব্রাজিল, প্যারাগুয়ে, বলিভিয়া, পেরু, ইকুয়েডর মিলিয়ে দক্ষিণ আমেরিকার ১৩টি দেশে যান।
২০১৫ সালে পোর্টোরিকো, ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র, হাইতি, বেলিজ, জ্যামাইকা, বাহামা, আরুবা মিলিয়ে আরও ৭ দেশ ভ্রমণ শেষ করেন।
২০১৬ সালে এক বছরে সর্বোচ্চ ১৯টি দেশ ভ্রমণ শেষ করেন। এবছর যান- ক্রোয়েশিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, মন্টিনিগ্রো, কোসোভো, আবলানিয়া, ম্যাসেডোনিয়া, বুলগেরিয়া, রোমানিয়া, মোল্দাভিয়া, পোল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, সুইডেন, ডেনমার্ক, ইতালি, হাঙ্গেরি, সার্বিয়া, নরওয়ে, কুয়েত।
২০১৭ সালে কিউবা, সামোয়া ও কাতার এই তিন দেশ ভ্রমণের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেন।
আর ২০১৮ সালে এসে ফিলিপাইন, মঙ্গোলিয়া, রাশিয়া, কানাডা, জর্জিয়া, বেলারুশ, আজারবাইজান, চেচনিয়া, উজবেকিস্তান হয়ে তুর্কমেনিস্তান ভ্রমণ করলেন। এ নিয়ে চলতি বছরে তার ভ্রমণ শেষ হলো ১০টি দেশে। ও সবমিলিয়ে তার ১০০টি দেশ ভ্রমণ করা হলো।
সারাবাংলা/এমএম