Saturday 12 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আর নয় হতাশা


১৯ নভেম্বর ২০১৮ ১৩:২৫ | আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৯ ১৩:৫৯
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অসীম চাহিদা আর সসীম সম্পদের দ্বন্দ্বটা আমাদের বাস্তবতার খুব পরিচিত এক চিত্র। এর কারণেই আমাদের প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির মাঝে এত ব্যবধান, যে ব্যবধান আমাদের টেনে নামাতে পারে হতাশার কালো গহ্বরে। জীবনে ক্ষণিকের অপ্রাপ্তি মেনে না নিতে পেরে কেউ বেছে নেন আত্মহননের পথও। যে পথ কোন সমাধানের পথ নয়। তাই হতাশার কালো গহ্বর থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে আমাদের নিজেদেরকেই। মনে রাখতে হবে অপ্রাপ্তি কেবল ক্ষণিকের।

জীবনের নানান অনিশ্চয়তার মাঝে হতাশা কাটিয়ে কীভাবে বেছে নেব সঠিক পথটি?

চাওয়া-পাওয়ার ব্যবধান আমাদের জীবনের এক আমোঘ সত্য। ছোটবেলা থেকেই সবার একটা স্বপ্ন থাকে। স্কুল ও কলেজ শেষ করে ভর্তি পরীক্ষায় এসে অনেকেই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে না। প্রথম ধাক্কাটা এখানেই পায় সে। স্কুল-কলেজে সব সময় প্রথম হয়ে আসা ছেলে বা মেয়েটি যখন ভালো কোনো প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়, তখন হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে পরিবার থেকে চাপ দেওয়ার ফল খুব খারাপ হয়। এরপর আসে পছন্দের বিষয় না পাওয়াটা। কেউ হয়তো পড়তে চেয়েছে কম্পিউটার সায়েন্সে কিন্তু পেল অন্য বিষয়, তখন একটা খারাপ লাগা কাজ করে। সে সময় সমাজ এবং পরিবার থেকে যদি খারাপ কোনো ব্যবহার পায়, তখন তার মধ্যে জন্ম নেয় হতাশার। আবার কেউ তার পছন্দের বিষয় পেলেও কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে আর ভালো ফলাফল করতে পারছে না। তাহলেও মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে সে। পড়ার চাপ কুলিয়ে উঠতে না পেরে অনেকের ভেতর হতাশার সৃষ্টি হয়।

বিজ্ঞাপন

আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় হতাশার পেছনের মানসিক কারণগুলোর ক্ষেত্রে প্রাথমিক দায় পরিবারের । পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদের মধ্যে সব সময় একটি প্রবণতা লক্ষ করা যায়। তুমি রেজাল্ট খারাপ করেছ, তোমার তো সবই খারাপ। এ ধরনের মন মানসিকতার কারণে পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্যটির ভেতরে হতাশার বীজ বুনতে পারে। আত্মীয়স্বজনের মধ্যে প্রতিযোগিতা এর জন্য দায়ী। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে সেশনজটের সৃষ্টি হয়, তা শিক্ষার্থীদের মনে হতাশা তৈরি করে। চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রেও প্রবল প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হয়। এই দৌড়ে যাঁরা পিছিয়ে পড়েন, তাঁরাও হয়ে পড়েন হতাশাগ্রস্ত। আবার অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা যায়, প্রিয় মানুষের থেকে পাওয়া কষ্ট বা বেদনা থেকেও হতাশার সূত্রপাত ঘটে।

হতাশাগ্রস্ত হয়ে অনেকেই করে বসেন জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটা। নিজেকে একেবারে হেরে যাওয়া মানুষ ভেবে নেন প্রত্যাশিত জায়গায় ভর্তির সুযোগ না পেয়ে। অনেকেই আর ভালো কোথাও ভর্তির চেষ্টা ছেড়ে দেন। অথবা প্রত্যাশিত বিষয় না পেয়ে পাওয়া বিষয়টিকেও অবহেলা করে বসেন। অনেক ক্ষেত্রে ভালো ফলাফল করতে না পেরে ছেড়ে দেন পড়ালেখা। ভালো চাকরির সুযোগ না পেয়ে অনেকেই মনোবল হারিয়ে আর কোনো চেষ্টাই করেন না। প্রিয় কারও কাছে কষ্ট পেয়ে তার সঙ্গে জীবনের ছোট ছোট অপ্রাপ্তি যোগ করে হয়তো কেউ বেছে নেন আত্মহননের পথও।

মানুষের চাওয়া-পাওয়ার ব্যবধানটা সারা জীবনই মানুষকে তাড়া করে ফিরতে পারে, তবে সঠিক পরিকল্পনা আর উপযুক্ত পথটি বাছাই করে অনেকটাই কমিয়ে ফেলা যায় এর মাঝের দূরত্বটা। মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। হতাশার নিয়ন্ত্রণ করে সফল হতে মানুষ ইচ্ছে করলেই পারে। জীবন নিয়ে হতাশ না হয়ে বরং কিছু পরিকল্পনামাফিক কাজ করে আমরা হারিয়ে দিতে পারি মনের ভেতরের হতাশার কাল মেঘ।

  • ক্যারিয়ারের জন্য পড়াশোনা নয় বরং জানার জন্য পড়তে হবে। পড়ার বইয়ের পাশাপাশি সাহিত্য, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান সব বিষয়ের জ্ঞান অর্জন করতে হবে।
  • মুখস্থ করার অভ্যাস বদলে কোনো বিষয় আত্মস্থ করার অভ্যাসটা ছোটবেলা থেকেই আয়ত্ত করতে হবে।
  • প্রত্যাশিত বিষয় না পাওয়া মানে সবকিছু শেষ হয়ে যাওয়া নয় বরং যে বিষয়টিতে সে ভালো, তার মাধ্যমেও জীবনে সফল হওয়া সম্ভব।
  • পরিবারের সদস্যদের আরও বেশি আন্তরিক হতে হবে। নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া ঠিক থাকলে, হতাশাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।
  • জীবনে মানবিক সম্পর্কের উত্থান পতন হতেই পারে। সে জন্য জীবন শেষ হয়ে গেছে, এমন ভাবা যাবে না।
  • বন্ধু, বিশেষ প্রিয়জন কিংবা পরিবারের কারো সাথে মান অভিমান হলে খোলাখুলি কথা বললে অনেক ক্ষেত্রেই ভুল বোঝাবোঝির অবসান করা সম্ভব হয়।
  • যার যে বিষয় বা পেশা পছন্দ, সেটি মাথায় রেখে সে অনুযায়ী ছোটবেলা থেকে নিজেকে তৈরি করতে হবে।
  • বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজটের সময় বসে না থেকে পরবর্তীকালে প্রয়োজন হবে, এমন কোনো কোর্স করা যেতে পারে।
  • দেশে ও দেশের বাইরে কী হচ্ছে, কোন কাজের চাহিদা বেশি তার খোঁজ রাখতে হবে। ইন্টারনেট, সংবাদপত্র নিয়মিত দেখতে হবে। সময়ের সদ্ব্যবহার করতে হবে। সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি করতে হবে।
  • যে যেই পেশায় যেতে চায় ছাত্র অবস্থাতেই, সে সম্পর্কিত জায়গায় খণ্ডকালীন চাকরিও করতে পারে। এ অভিজ্ঞতা পরবর্তীকালে কাজে আসবে।
  • সরকারি চাকুরী না পেলে জীবন বৃথা এই ধারনা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
  • ছাত্রজীবন থেকে নিজেই হয়ে উঠতে পারেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা । একসময় দেখবেন, আপনি নিজেই অন্য আরো দশজনকে চাকুরী দিতে পারছেন।

দুঃখ-কষ্ট মিলিয়েই জীবন। তাই অপ্রত্যাশিত দুঃখ-কষ্ট মোকাবিলা করার মন মানসিকতা পোষণ করতে হবে। চলার পথে বাধা আসবেই। তাই বলে থেমে থাকলে চলবে না। হতাশায় আচ্ছন্ন হলেও না। মনে রাখতে হবে থেমে যাওয়া বা জীবন থেকে পালিয়ে বাঁচা এর কোন সমাধান নয়। বরং সফল হতে চালিয়ে যেতে হবে নিরন্তর চেষ্টা।

 

সারাবাংলা/এসএস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর